মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী অ্যাডভোকেট মো. ছায়েদুল হকের একটি বক্তব্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনার ঝড় উঠেছে
‘বক্তব্যের সত্যতা’ খতিয়ে দেখতে চায় সরকার
ডেস্ক ২৪ঃঃ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে মন্দিরে হামলা চালিয়ে প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনার পর মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী অ্যাডভোকেট মো. ছায়েদুল হকের একটি বক্তব্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। ইতোমধ্যেই মন্ত্রীর পদত্যাগের দাবি উঠেছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। তবে, মন্ত্রীর পদত্যাগের দাবিকে অযৌক্তিক দাবি করে ক্ষমতাসীন দলটির নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা বলছেন, ছায়েদুল হকের পদত্যাগ কোনও সমাধান নয়। তিনি আদৌ এমন বক্তব্য রেখেছেন কিনা সবার আগে তা-ই খতিয়ে দেখতে হবে। এদিকে, হিন্দু সম্প্রদায়কে ‘মালাউনের বাচ্চা’ বলার বিষয়টি সরকারি অস্বীকার করেছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী মো. ছায়েদুল হক।
মন্দিরে হামলার পর গত মঙ্গলবার রাতে নাসিরনগরের ডাকবাংলোয় হিন্দুদের তিনি ‘মালাউনের বাচ্চা’ বলেছেন মর্মে একাধিক সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে। তাতে উল্লেখ করা হয়েছে, মন্ত্রী বলেছেন, ‘মালাউনের বাচ্চারা বিষয়টি নিয়ে বাড়াবাড়ি করছে। আর এ ঘটনাকে ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে প্রচার করে অতিরঞ্জিত করেছে সাংবাদিকরা। অথচ ঘটনা কিছুই নয়’।
বিতর্কিত বক্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে শুক্রবার সন্ধ্যায় মন্ত্রী ছায়েদুল হক বলেন, ‘আমি হিন্দুদের কখনোই মালাউন বলিনি। এটা আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার। আমি মালাউন বলেছি বলে যারা বলছে, তারা বিষয়টির প্রমাণ দিক। কে শুনেছে? আমি চ্যালেঞ্জ করছি।’ তবে, এর জবাবে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত বলেছেন, ‘আমরা যে অভিযোগ পেয়েছি, তাতে বলা হয়েছে তিনি হিন্দুদের মালাউনের বাচ্চা বলেছেন।’
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, ‘হিন্দুদের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনা সরকারের বিরুদ্ধে নতুন ষড়যন্ত্রের অংশ।’ তিনি বলেন, ‘ষড়যন্ত্রকারীরা একবার ব্যর্থ হয়, আবার নতুন ষড়যন্ত্রের পরিকল্পনা করে। এগুলোও এরই অংশ বিশেষ।’ ছায়েদুল হকের বক্তব্য নিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘প্রাণিসম্পদমন্ত্রীর বক্তব্যের সত্যতা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘ইতোমধ্যেই ছায়েদুল হক এ বক্তব্যের বিষয় অস্বীকার করেছেন।’
এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবউল আলম হানিফ বলেন, ‘মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী একটি আপত্তিকর বক্তব্য দিয়েছেন বলে আমি শুনেছি। আবার এটাও শুনেছি, তিনি নাকি এ ধরনের কথা বলেননি। কাজেই কোনটা সত্য, তা খতিয়ে দেখা ছাড়া এ ব্যাপারে কথা বলব না। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’
অন্যদিকে প্রকাশ্যে নয়, ঘরোয়া আলোচনায় মন্ত্রী ছায়েদুল হক কিছু কথা বলেছেন—এমনটা ধরে নিয়ে সরকারের একটি অংশ বিষয়টিকে তেমন আমলে নিচ্ছে না। আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর একজন নেতা বলেন, ‘আমি ছায়েদুল হককে তার এ বক্তব্য নিয়ে প্রশ্ন করেছি। তিনি জানিয়েছেন যে এ ধরনের বক্তব্য তিনি রাখেননি।’ কেন্দ্রীয় নেতারা বলছেন, মন্ত্রীর এ বক্তব্যের ভিত্তি কতটুকু তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। যদি বলেও থাকেন, তাও একেবারেই ঘরোয়া পরিবেশে আলোচনার বিষয় বাইরে কিভাবে এলো, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে দলের ভেতরে। তারা বলেন, মন্ত্রী তো বলির পাঁঠাও হতে পারেন। তার বক্তব্যকে ইস্যু করে মূল ঘটনা অন্যদিকে ঘোরানোর অপচেষ্টাও হতে পারে। মন্ত্রীর এই বক্তব্যকে ইস্যু করে সঙ্গে সঙ্গেই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলে অপরাধীরা বেঁচেও যেতে পারে। তারা আরও বলেন, ছায়েদুল হক ওই এলাকায় ৬ বারের সংসদ নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি একেবারেই অজনপ্রিয়, এমনটা ভাবার কোনও সুযোগ নেই। এটি কোনও তৃতীয় পক্ষের ইন্ধন কিনা, তা পরিষ্কার হতে আরও ‘ওয়াচ’ করতে চায় আওয়ামী লীগ।
প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, মন্ত্রীর বক্তব্যকে ইস্যু করে পদত্যাগই সমাধান নয়। সরকার সেদিকে যাবেও না। মন্ত্রীর বক্তব্যের সত্যতা খুঁজে বের করে প্রয়োজনে ছায়েদুল হককে ভর্ৎসনা করা হবে। কেন্দ্রীয় নেতারা আরও বলেন, নাসিরনগরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নতুন যে ষড়যন্ত্রের খেলা শুরু হয়েছে, আমরা তার মুখোশ উম্মোচন করতে চাই। আন্দোলনকারীরা যে মন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করছেন, আমাদের প্রশ্ন পদত্যাগেই কি সমস্যার সামাধান হবে?