পারিবারিক সিন্ডিকেটে বেপরোয়া নাসিরনগরের দলিল লেখক সালাউদ্দিন
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার সাব রেজিস্ট্রি অফিসের দলিল লেখক মো. সালাহউদ্দিন সরকার (সনদ নং-৫১) প্রায় দশ বছর ধরে নিজস্ব সিন্ডিকেটের প্রভাব খাটিয়ে দুর্নীতির মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। এতে সরকার যেমন রাজস্ব হারাচ্ছে, তেমনি সাধারণ মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে।
জানা গেছে, দলিল লেখক মো. সালাহউদ্দিন সরকারের অপকর্মে সহায়তা করছেন পারিবারিকভাবে গড়ে তোলা সিন্ডিকেটের সদস্য তারই বাবা দলিল লেখক নুরুল হোসেন, বড় ভাই স্ট্যাম্প ভেন্ডার কুতুবউদ্দিন, বোন নকল নবিশ জাহানারা আক্তার, দলিল লেখকের সহকারী আপন ছেলে মোসলেমউদ্দিন।
অভিযোগ রয়েছে, সাধারণ দলিল লেখকদের জিম্মি করে তার ভাই স্ট্যাম্প ভেন্ডার কুতুব উদ্দিনের কাছ থেকে স্ট্যাম্প কিনতে বাধ্য করেন। কেউ তার নিকট থেকে স্ট্যাম্প না কিনলে শারীরিকভাবে নির্যাতন করেন। এইরকম ঘটনার শিকার অত্র এলাকার দলিল লেখক সমীরণ দাস।
দলিল লেখক সমীরণ দাসের উপর হামলার ঘটনায় জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে গত ৭ আগস্ট নাসিরনগর থানায় জিডি করেন- যার নং ২৮৩। আরও একজন ভুক্তভোগী দলিল লেখক মো. জসিম উদ্দিন জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে গত ২৪ আগস্ট, ২০২০ তারিখে নাসিরনগর থানায় জিডি করেন।
তাছাড়া অত্র অফিসের নৈশ প্রহরী-কাম ঝাড়ুদার মো. সাইফুল ইসলামকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার অভিযোগে তিনি নাসিরনগর থানায় গত ০৭ আগস্ট, ২০২০ তারিখে জিডি করেন। যার নং- ২৮২।
অভিযোগ রয়েছে, দলিল লেখক সালাহউদ্দিনের বাবা দলিল লেখক নুরুল হোসেন (সনদ নং-৩১) বিগত ১৯৮৯ সালে খতিয়ান নং ৮৫৯ দাগ নং সাবেক ১০৬৩ হালে ৩০৭৫ থেকে তার ক্লায়েন্ট মফিজ উদ্দিন আনোয়ারুল ইসলামের কাছে ৬০ শতক জায়গা সাফ-কবলা দলিল মূলে বিক্রি করেন।
পরবর্তী সময়ে ২০০৮ সালে আনোয়ারুল হোসেন মারা গেলে তার ছেলে-মেয়েরা সেই একই জায়গা থেকে আমির হোসেনের কাছে ৬০ শতক জায়গা সাফ-কবলা দলিল মূলে বিক্রি করেন।
তারপর ২০১৪ সালে দলিল লেখক নুরুল হোসেন পূর্বের তথ্য গোপন করে জালিয়াতির মাধ্যমে সেই একই দাগ থেকে ১০ শতক জায়গা একটি অছিয়তনামা দলিল করে দেন মফিজউদ্দিনের ছেলেদের কাছে।
নাসিরনগর সাব রেজিস্ট্রি অফিসের দলিল লেখক সমিতির একাধিক নেতা-কর্মী জানান, সমিতির পক্ষ থেকে সম্মিলিতভাবে গত ২০১৯ সালের ২২ ডিসেম্বর, ২০১৯ সালের ২৮ জুন, ২০২০ সালের ১৮ অক্টোবর ও ১২ ডিসেম্বর, ২০২০ তারিখে ৪ দফায় দলিল লেখক মো. সালাহউদ্দিন সরকারের বিরুদ্ধে ঘুষ, দুর্নীতি, নানারকম অনিয়ম, অফিস প্রাঙ্গনে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি, সাধারণ মানুষকে হয়রানি, সমিতির শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ এনে রেজুলেশন প্রেরণ করেন সাব রেজিস্ট্রার নাসিরনগর, জেলা রেজিস্ট্রার বি-বাড়িয়া, জেলা প্রশাসকের কার্যালয় বি বাড়িয়া, মহাপরিদর্শক নিবন্ধন বরাবর।
এসব অভিযোগের প্রেক্ষিতে সাব রেজিস্ট্রার নাসিরনগর অফিস শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার স্বার্থে দলিল লেখক মো. সালাহউদ্দিন সরকারকে ৯ মাসের জন্য দলিল লেখার কাজ হতে বিরত রাখার আদেশ দেন। পাশাপাশি দলিল লেখার সনদ নবায়নের সুপারিশ ব্যাতিরেকে জেলা রেজিস্ট্রার বি.বাড়িয়াকে প্রেরণ করেন।
তার এসব অপকর্মের জন্য সর্বশেষ ৩০ সেপ্টেম্বর অপরাধ স্বীকার করে মুচলেকা দিলেও তার অপরাধকর্ম বর্তমানে লাগামছাড়া ও বেপরোয়া হয়ে ওঠেছে। তার অপরাধকর্ম ও জিম্মিদশার কাছে সাব রেজিস্ট্রার নাসিরনগর অসহায় এবং জীবনের নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বলে জানা গেছে।
এলাকা বাসীর সাথে কথা বলে আরও জানা গেছে, দুর্নীতির মাধ্যমে দলিল লেখক সালাহউদ্দিন সরকার নাসিরনগর সদরে কাশীপুর এলাকায় দশ কাঠা জায়গার উপর কয়েক কোটি টাকা মূল্যের বাড়ি নির্মাণ করেছেন। দলিল লেখক সালাহ উদ্দিন সরকার শুধু দুর্নীতি করেই ক্ষান্ত হননি, বরং নাসিরনগর উপজেলার সাব রেজিস্ট্রী অফিসে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছেন। এই নিয়ে সচেতন মহলের প্রশ্ন, তার এই অপকর্মের লাগাম টানবে কে?