হত্যা মামলার আসামীর খবরে মারা গেলেন বৃদ্ধ তৈয়ব উদ্দিন
মোহাম্মদ মাসুদ,সরাইল :: নাম তৈয়ব উদ্দিন মুন্সি। বয়স ৯৬ বছর। শরীর খুবই দূর্বল। বড় ছেলের স্ত্রী হত্যার প্ররোচনার আসামী থেকে পুলিশ বাদ দিলেও আদালত তাকে আবার আসামীর তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করেছে। এমন খবর পাওয়ার পরই অসুস্থ্য হয়ে পড়েন তৈয়ব উদ্দিন। এর একদিন পর মারা যান তিনি।
তৈয়ব উদ্দিনের পারিবারিক সূত্র জানায়, ৫ সন্তানের জনক তিনি। বড় ছেলে হেলাল উদ্দিন মুন্সি (৪০)। হেলাল ১১ বছর আগে বিয়ে করেছে পৌর শহরের মেড্ডার মাজু মিয়ার কন্যা আকলিমা বেগম (৩০) কে। দাম্পত্য জীবন ভালই চলছিল তাদের। আকলিমার কুলজুড়ে আসে ২ মেয়ে ও ১ ছেলে। পারিবারিক কলহের জের ধরে ২০১৫ সালের ১৬ এপ্রিল রাত ৭টার দিকে আত্মহত্যা করে হেলালের ছোট ভাই রাজিব। এর কিছুক্ষণ পর শয়ন কক্ষের জানালা ভেঙ্গে গলায় ফাঁস লাগানো অবস্থায় আকলিমার মৃতদে উদ্ধার করা হয়।
এ ঘটনায় রাজিবের মৃত্যুকে পরিবার মেনে নিলেও আকলিমার বড় ভাই আক্তার মিয়া বাদী হয়ে ১৭ এপ্রিল হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় আকলিমার স্বামী হেলাল তার বৃদ্ধ পিতা তৈয়ব উদ্দিন (৯৬), মাতা আউলিয়া বেগম (৫৬) সহ পরিবারের ৮ জনকে আসামী করা হয়। গা ঢাকা দেয় আসামীরা। ৫ মাস পর নিবিড় তদন্তের জন্য ২০১৫ সালের ২১ সেপ্টেম্বর মামলাটি জেলা গোয়েন্দা শাখায় হস্তান্তর করা হয়। তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয় এস আই আবু বক্কর সিদ্দিককে। তদন্তকারী কর্মকর্তা দীর্ঘ ৬ মাসে একাধিকবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে স্থানীয় লোকজনের সাথে কথা বলেন। ঘটনার একমাত্র প্রত্যক্ষদর্শী নিহত আকলিমার কন্যা ফাতেমা জাহান তিশার (১০) সাথে পুলিশের একাধিক উর্দ্ধতন কর্তা ব্যক্তি কথা বলেছেন। ডাক্তার ও পুলিশসহ ২৮ জনের স্বাক্ষী গ্রহন করেন। গত ২৭ ফেব্রুয়ারী তিনি এ মামলার অভিযোগ পত্র দাখিল করেন।
অভিযোগ পত্রে জানা যায়, বৃদ্ধ তৈয়ব উদ্দিন মুন্সী, পান্না আক্তার ও নবম শ্রেণির ছাত্রী চম্পা বেগমের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় অত্র মামলার দায় হতে তাদেরকে অব্যাহতি দানের প্রার্থনা করা হয়। হত্যা বা নারী নির্যাতন নয়। পারিবারিক কলহের জের ধরে অসম্মান বোধ করে বাকি ৫ আসামীর প্ররোচনায় সালোয়ারের (নিয়ার/নেতি) দ্বারা নিজের গলায় গিট মারিয়া আকলিমা বেগম আত্মহত্যা করেছে। এ অভিযোগ পত্র প্রত্যাখ্যান করেছেন বাদী আকতার মিয়া। বাদী গত ৬ এপ্রিল ওই অভিযোগ পত্রের বিরুদ্ধে আদালতে নারাজী আবেদন করেন। আদালত বাদীর আবেদন মঞ্জুর করেন।
নারী ও শিশু আইনের ১১ (ক)/৩০ ধারায় ফের আসামী হয়ে যান তৈয়ব উদ্দিন মুন্সি। জীবনের প্রথম হত্যা মামলার আসামী এমন খবর শুনা মাত্র অসুস্থ্য হয়ে পড়েন বৃদ্ধ তৈয়ব উদ্দিন। শুরু করেন হ্যাঁ হুতাশ। এক পর্যায়ে জবান বন্ধ হয়ে যায় তার। পরের দিন ৭ এপ্রিল সকাল ৭টায় মারা যান তৈয়ব উদ্দিন।
এলাকাবাসী জানায়, শতাধিক বছর বয়সের বৃদ্ধ তৈয়ব উদ্দিন বিছানায় শুয়ে বসেই সময় পার করতেন। পুত্রবধু আকলিমার মৃত্যুর সাথে তার কোন ধরনের সংশ্লিষ্ঠতা ছিল না। নিজের সন্তান ও পুত্রবধুর অনাকাঙ্খিত মৃত্যুর খবরে তিনি ভেঙ্গে পড়েছিলেন। তার দু’চোখ দিয়ে শুধু অশ্রু গড়িয়ে পড়ত। তিনি একটি কলঙ্ক নিয়ে গেলেন। তৈয়ব উদ্দিনের স্ত্রী আউলিয়া বেগম (৬৬) ছেলে, পুত্রবধু ও সবশেষে স্বামী হারিয়ে এখন বিধবা। শোকে কাতর। মানসিক ভাবে ভেঙ্গে পড়েছেন তিনি। যে কোন সময় তিনিও মারা যেতে পারেন।