সরাইলের কুকুর ছানার দাম ৩০ মন চাউলের দামের সমান!
মোহাম্মদ মাসুদ, সরাইল :: অবিশ্বাস্য হলেও সত্য সরাইলে মাত্র দুই মাস বয়সের একটি গ্রে-হাউন্ড কুকুর ছানা ৩০ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে। যা ভাল মানের ৪টি খাঁসির মূল্যের সমান। তাই বিষয়টি এখন টক অব দ্যা সরাইল। কারন গত দুইদিন ধরে গোটা সরাইলে কুকুর ছানার মূল্য নিয়ে চলছে রসালো ও মজাদার গল্প। এটি ক্রয় করেছেন কালিকচ্ছ গ্রামের বাসিন্ধা সাবেক সেনা সদস্য (নায়েক) ও মুক্তিযোদ্ধা আবদুল মাজেদ (৫৪)। অনুসন্ধানে জানা যায়, আজ থেকে ৩০-৪০ বছর আগে সরাইলের দেওয়ান পরিবারের সৌখিন জমিদারদের মাধ্যমে এ গ্রে-হাউন্ড কুকুরের আবির্ভাব। এক সময় সাহস বিশ্বস্থ্যতাসহ নানা গুনের কারনে দেশ বিদেশে সরাইলের কুকুরের খ্যাতি বৃদ্ধি পায়। বর্তমানেও দেশ বিদেশের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি বিখ্যাত এ কুকুর দেখতে সরাইলে ছুটে আসেন। গত তিন বছর আগে বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত নোয়াগাঁও ইউনিয়নের চওড়াগোদা গ্রামের মুছি বাড়িতে কুকুর দেখতে এসেছিলেন। ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দে সরাইল থেকে ৪টি কুকুর ছানা নিয়েছেন র্যাবের প্রধান কার্যালয়ের লোকজন। গত ১০-১৫ বছর আগেই কয়েকটি শ্রেণির গ্রামার বইয়ে বাংলা থেকে ইংরেজী অনুবাদের জন্য দেওয়া হয়-“সরাইল কুকুরের জন্য বিখ্যাত” বাক্যটি (ঝধৎধরষ রং ভধসড়ঁং ভড়ৎ ফড়ম)। পরে সমগ্র দেশের শিক্ষার্থীদের মাঝে বিষয়টি সাড়া জাগায়। সরকারি পৃষ্টপোশকতা না থাকায় দিন দিন এ কুকুর তার ঐতিহ্য হারাতে বসেছে। বর্তমানে সরাইলের বিখ্যাত প্রজাতির এ কুকুর বিলুপ্তির পথে। তাই দেশ বিদেশ থেকে লোকজন এসে নিয়মিত এ কুকুর ক্রয় করে নিচ্ছেন। তবে আগের তুলনায় চাহিদা ও দাম দুটোই অনেক বেশী। এক সময় ৩-৪ হাজার টাকায় পাওয়া যেত এ কুকুর ছানা। কিন্তু এখন ওই দাম আর কল্পনাও করা যায় না। ছানার সন্ধান পেলেই দামের প্রতিযোগীতা শুরু হয়ে যায়। এ বিষয় গুলো দাগ কাটে সরাইলের আবদুল মাজেদের মনে। স্থানীয় এ মুক্তিযোদ্ধা সেনা বাহিনী থেকে অবসর গ্রহনের পর এখন শাহজিবাজার এলাকায় বাখরাবাদ গ্যাস ফিল্ডে কর্মরত আছেন। তিনি কুকুরের এ প্রজাতিকে লালন পালন করে স্মৃতি ধরে রাখার চিন্তা করেন। মধ্যবিত্ত পরিবারের সদস্য মাজেদ চওড়াগোদা গ্রামে মতিলালের ছেলে টিটুর (৩০) কাছে একটি কুকুর ছানার সন্ধান পান। তিনি ছুটে যান সেখানে। ছানাটি দেখতে খুব সুন্দর নয়। হালকা স্বাস্থ্য। বয়স মাত্র ২ মাস। তারপরও ৩০ হাজার টাকা মূল্য নির্ধারনের পর ৫ হাজার টাকা বায়না করেন। পরক্ষণে আরেকজন ক্রেতা ওই ছানার সন্ধান পেয়ে ৪০ হাজার টাকায় ক্রয় করার চেষ্টা করেন। সুযোগে বিক্রেতাও বেঁকে বসেন। শেষমেশ অনেক কৌশলে ৩০ হাজার টাকায় ছানাটি ক্রয় করেন আবদুল মাজেদ।
মাজেদ বলেন, এখানকার কুকুর ছানা যেন সোনার হরিণ। তাই ইতিহাস ঐতিহ্যর স্মৃতিকে ধরে রাখার জন্য একটি কুকুর ছানা ক্রয় করলাম। তাও আবার যুদ্ধ করতে হয়েছে বিক্রেতার সাথে। বিষয়টি জেনে স্থানীয় অনেকে রসাত্বক মন্তব্য করে বলেন, সরাইলের একটি কুকুর ছানার মূল্য দিয়ে একটি ভাল ষাড় বা ৪টি খাঁসি ক্রয় সম্ভব। কেউ কেউ বলেন, এখানকার ১টি কুকুর ছানার দাম ৩০ মণ চাউলের দামের সমান।
সরাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দা নাহিদা হাবিবা বলেন, বিখ্যাত প্রজাতির এ কুকুর হারিয়ে গেলে চলবে না। এটাকে ধরে রাখার জন্য সরকারি ও বেসরকারি ভাবে জরুরী ভিত্তিতে উদ্যোগ গ্রহন করতে হবে।