সরাইল বিজয় দিবসের প্রস্তুতি সভা মুক্তিযোদ্ধাদের অভিযোগ, ওসি’র রক্তক্ষরণ!
মোহাম্মদ মাসুদ,সরাইল :বক্তাদের উত্যপ্ত বাক্য বিনিময়ের মধ্য দিয়ে গতকাল অনুষ্ঠিত হয়েছে সরাইলে বিজয় দিবস উৎযাপনের প্রস্তুতি সভা। প্রশ্ন ওঠেছে শৃঙ্খলা নিয়ে। বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল্লাহ ভূঁইয়া প্রকাশ্যে আক্ষেপ করে ৬ অভিযোগ করেছেন। প্রধান অতিথি ৪৫ বছর ধরে দিবস উৎযাপনের লাভ ক্ষতির হিসাব জানতে না পারার বিষয়টি জানিয়েছেন করুন স্বরে। দেশীয় অস্ত্র জমা ও শান্তি শপথে ৩ মাস বন্ধ থাকার পর হঠাৎ গত রবিবার সরাইল সদরে দুই গ্রামের সংঘর্ষের ঘটনায় থানার অফিসার ইনচার্জের (ওসি) হৃদয়ে শুরু হয়েছে রক্তক্ষরণ।
সোমবার উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী কর্মকর্তা ফারজানা প্রিয়াঙ্কার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ব্যানার বিহীন ওই সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রফিক উদ্দিন ঠাকুর। বক্তব্য রাখেন- ভাইস চেয়ারম্যান আবু হানিফ মিয়া, ওসি শাহাদাত হোসেন টিটো, সদর ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল জব্বার, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের সাবেক কমান্ডার মো. ইসমত আলী, ডেপুটি কমান্ডার মো. আনোয়ার হোসেন, যুদ্ধকালীন গ্রুপ কমান্ডার মো. আবদুল্লাহ ভূঁইয়া, পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক মো. আনোয়ার হোসেন মাষ্টার, আ’লীগ নেতা মো. মাহফুজ আলী, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সভাপতি মো. ইকবাল হোসেন প্রমূখ।
বক্তারা বিজয় দিবসের দিন সকালে অন্নদা স্কুল মাঠের অনুষ্ঠানে শৃঙ্খলা নিশ্চিতের পাশাপাশি রাজনৈতিক দলের গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত নেতাদের সম্মান নিশ্চিত করার দাবী জানিয়েছেন। মুক্তিযোদ্ধারা অতীত অভিজ্ঞতার আলোকে অভিযোগ করে বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের যা-ই দেয়া হয়, সেটা যেন হয় সম্মানের সাথে। এক প্লেট খাবারের জন্য কষ্ট দিবেন না। আরামে খাওয়ার ব্যবস্থা করবেন। অনেক রক্তের বিনিময়ে অর্জিত শহীদ মিনার। শহীদদের স্মৃতি বিজড়িত এ স্থানটির অমূল্যায়ন হয়। প্রথম প্রহরে সম্মানের সাথে পুষ্ফস্তবক অর্পণ। আর একই দিন বিকেলে বা সন্ধ্যায় ফুল গুলি সরিয়ে সেখানে বসে অন্য অনুষ্ঠান। এমনটা এখানকার মুক্তিযোদ্ধাদের কাম্য নয়। কম মূল্যের উপহার দেন, আপত্তি নেই। তবে উপহারটি যেন হয় মান সম্মত। প্রত্যেকটি অনুষ্ঠানেরই একটা বরাদ্ধ থাকে। তারপরও আজকের প্রস্তুতি সভায় আমাদেরকে পুরাতন বোতলে ভরে কেন নলকুপের পানি দিলেন বুঝলাম না। প্রধান অতিথি এক পর্যায়ে একটু দু:খ করেই বলে ফেললেন, গত ৪৫ বছর ধরে দিবস পালন করার জন্য কমিটি টাকা উত্তোলন পর্যন্তই জানি। কিন্তু অনুষ্ঠান শেষে লাভ হল নাকি ক্ষতি হল? সেটা কোন দিন জানতে পারিনি।
সরাইল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শাহাদাত হোসেন টিটো খুবই আক্ষেপের সাথে বলেন, আজ আমার হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। কারণ যোগদানের পর থেকে আরামকে ত্যাগ করে উপজেলার গ্রাম গুলোতে ঘুরে দেশীয় অস্ত্র জমা ও শান্তি শপথের অনুষ্ঠান করছি। তিন মাস ধরে কোন সংঘর্ষ নেই। ঝামেলা নেই। সকল মানুষের মনে একটা স্বস্থি ফিরে আসছে। কিন্তু হঠাৎ করে গত রবিবার বিকেলে সরাইল সদরের উচালিয়া পাড়া ও নিজসরাইল এলাকার লোকজন জায়গার বিরোধকে কেন্দ্র সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এত দিনের অর্জনকে তারা নষ্ট করে দিল। আসলে অন্তরে সংঘর্ষকে লালন করা যাবে না। সকলে মিলে মন খুলে দাঙ্গামুক্ত সরাইল গড়ার লক্ষে কাজ করতে হবে।