সরাইল থানা থেকে ১’শ গজ দূরে বৈশাখী মেলায় জুয়া



মোহাম্মদ মাসুদ, সরাইল ॥ সরাইলে বেশাখী মেলার নামে চলছে জুয়ার মহোৎসব। উপজেলা প্রশাসন ও থানার নাগের ডগায় আলীনগরের বটতলিতে গতকাল শুক্রবার সকাল থেকে এ উৎসব শুরু হলেও মাথা ব্যাথা নেই কারো। মেলার দায়িত্বে নিয়োজিত পুলিশও রয়েছেন গাঁ ছাড়া ভাবে। জুয়ার ঘরে এলাকার কিশোর ও যুবক বয়সের শিক্ষার্থীসহ নানা শ্রেণি পেশার লোকজনের ভীড় বাড়ছেই। জুয়ার দাপুটের কাছে হারিয়ে গেছে মেলার ২০-৩০ বছর আগের গ্রামীণ ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি। নতুন এ অপসংস্কৃতির শিকার হয়ে ধ্বংস হতে চলেছে ছেলেদের শিক্ষা জীবন। আর পাল্লা দিয়ে বাড়ছে চুরি ছিনতাই ও ডাকাতি।
গতকাল সরজমিনে দেখা যায়, থানা থেকে মাত্র শতাধিক গজ দূরে সরাইল সদর ইউনিয়নের আলীনগরের বটতলি এলাকায় অন্যান্য বছরের ন্যায় এবারও জমেছে বৈশাখী মেলা। আঞ্চলিক ভাষায় বলা হয় ফকিরা মেলা বা ফকিরা লবর। ২দিনের এ মেলা অদৃশ্য কারনে চলবে ৪ দিন। মেলায় নানা ধরনের পসরা সাজিয়ে বসেছে দোকানিরা। শিশু কিশোর ও যুবক বয়সের ছেলে মেয়েদের উপস্থিতিই বেশী। রীতিমত চলছে ইভটিজিং। অনেক মেয়েকে লজ্জায় মুখ বুঝে দ্রুত মেলাস্থল ত্যাগ করতেও দেখা গেছে। মেলায় প্রকাশ্যে বিশাল জায়গা জুড়ে ২০-২৫ টি ঘরের সমন্বয়ে চলছে জুয়ার মহোৎসব। মেলার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে অবস্থান করছে জুয়ারিদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্বে কিছু লোক। অপরিচিত লোকজনকে জুয়ার ঘরের কাছে যেতে দেখলেই বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে পাহাড়া দিচ্ছেন তারা। আবার অনেকের পরিচয় ও জানতে চাচ্ছেন। কেউ মুঠোফোন বাহির করলে সতর্কতার সাথে তাকে চার্জ করা হচ্ছে। ভীড় জমিয়ে দেদার খেলছে প্রাথমিক মাধ্যমিক ও কলেজ পড়–য়া অগণিত শিক্ষার্থী। এছাড়াও নানা বয়সের ভিন্ন শ্রেণি পেশার লোকজন। কেউ হেরে মুখ মলিন করে স্থান ত্যাগ করছেন। আবার অনেকে ৫০ টাকা ধরে দেড়শ টাকা পেয়ে খুশিতে লাফাচ্ছেন। কিছুক্ষণ পরই আবার নিমিষে হারিয়ে যাচ্ছে সেই হাঁসি। পাশের জন বলছেন এরই নাম জুয়া। জুয়ার ৫০-৬০ গজ দূরে মেলার দায়িত্ব পালন করছেন একদল পুলিশ। তাদেরকে মোটেও তোয়াক্কা করছেন না জুয়ারিরা। ২-৩টি গুরুত্বপূর্ণ বিভাগের লোকজনকে দেখা গেছে দ্রুততম সময়ে জুয়ার গড ফাদারদের সাথে হাত মিলিয়ে কি যেন আদান প্রদান করছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে জুয়ারি সিন্ডিকেটের একাধিক সদস্য জানান, উপজেলা সদরে তাও আবার থানার একদম নিকটে জুয়া চালানো কি এত সহজ? সব কিছু ঠিক করেই জুয়ার আসর বসানো হয়েছে। মেলা পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও ৭নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. মুসাহেদ উল্লাহ সেখানে জুয়ার দাপটের কথা স্বীকার করে বলেন, জুয়ারিরা কিসের শক্তিতে যেন আমাদের কথা শুনছে না। ওসি সাহেবকে ফোনে জানিয়েছি। অনেক্ষণ পর কয়েকজন পুলিশ এসে জুয়ার ঘরের কাছে না গিয়ে অন্য জায়গায় ঘুরে চলে গেছেন। এর মানে বুঝলাম না। এখন আমার লোকজনকে লাঠি দিয়ে জুয়ারিদের পেটাতে বলছি।
এ বিষয়ে জানতে বিকাল ৬টা ৪ মিনিটে সরাইল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. মফিজ উদ্দিন ভূঁইয়ার অফিসিয়াল নাম্বারে (০১৭১৩-৩৭৩৭৩১) একাধিকবার ফোন দিলেও কথা বলা সম্ভব হয়নি। তবে পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো. কামরুজ্জামান মেলায় একজন এ এস আই-এর নেতৃত্বে ৩-৪ জন পুলিশের একটি টিম দায়িত্বে নিয়োজিত থাকার কথা স্বীকার করে বলেন, আমি ৩ দিনের জন্য জেলা সদরে চলে এসেছি। সরাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উম্মে ইসরাত সদরে প্রকাশ্যে জুয়ার মহোৎসবের কথা শুনে থমকে গিয়ে বলেন, আমি এখনই (গতকাল শুক্রবার ৬টা ১০ মিনিটে) ব্যবস্থা নিচ্ছি।