Main Menu

এক প্রবাসী নারীর জীবন দিয়ে নির্যাতনের প্রতিবাদ

+100%-

মোহাম্মদ মাসুদ, সরাইল :: বেড়ে ওঠেছে অভাব অনটনের মধ্যে। জন্মের পর সুখ দেখেনি। পড়া লেখাও করতে পারেনি। মা বাবাসহ পরিবারের সকলের শান্তির জন্য ব্যাকুল হয়ে ওঠে। প্রথমে গার্মেন্টেসে চাকুরী ও পরে টাকার জন্য পাড়ি দেয় প্রবাসে। সেখানেও সুখ পায়নি আসমা। হয়েছে অমানবিক নির্যাতনের শিকার। নিজেকে বাঁচাতে ভাগ্যে বরণ করে নিয়েছে প্রবাসের কারাবাস। প্রবাসে জেলে আত্মহত্যার চেষ্টা করে নিজেকে পৃথিবী থেকে আড়াল করার চেষ্টা করেছে। সকল কষ্টের বোঝা মাথায় করে আবার নিজেদের দেশে। দেশেও তার উপর নানা সমালোচনা। অজানা ব্যাথা বুকে ধারণ করে শুধু চোখের জল ফেলছে। মধ্যপ্রাচ্যের মানুষ রুপি কিছু নরপশুর বিভৎসতা কিশোরী আসমার হৃদয়কে ভেঙ্গে চুরমার করেছে। যন্ত্রণার অনলে দাহ করে তছনছ করেছে।
ওদের বিচার করার ক্ষমতা যে আসমাদের নেই। বাধ্য হয়ে এ পৃথিবী ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিল ওই কিশোরী। তাই নিজের জীবন বিসর্জন দিয়েই ওইসব জানোয়ারদের নির্যাতনের প্রতিবাদ জানাল আসমা।

ঘটনাটি ঘটেছে ব্রাহ্মনবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার কালিকচ্ছ ইউনিয়নের চানপুর গ্রামের দেওয়ান আলীর সর্ব কনিষ্ট কন্যা আসমা (১৯)। এ পরিবার টি দীর্ঘদিন ধরে সিলেটে ভাড়া বাসায় বসবাস করছে।

৪ গত ২০ নভেম্বর বুধবার রাতে সরাইলের কালিকচ্ছ নন্দিপাড়া ভগ্নিপতি হোসেন মিয়ার বসতঘরে নিজের ওড়না গলায় পেছিয়ে আত্মহত্যা করেছে আসমা। পরিবারের অভিযোগ না থাকার পরও লাশের ময়না তদন্ত নিয়ে হয়েছে নানা নাটকিয়তা। নিহতের পারিবারিক সূত্র জানায়, দরিদ্র দেওয়ান আলী ব্রিক মিলে কাজ করেন। তার ৩ মেয়ে ১ ছেলে। আসমা সবার ছোট। ৬ সদস্যের পরিবারে নুন আনতে পান্তা ফুড়ায় অবস্থা। অনাহার অর্ধাহার ভাবিয়েছে আসমাদের।

পরিবারের মুখে হাঁসি ফুঁটানোর স্বপ্ন দেখে আসমা। ঢাকায় গার্মেন্টস্-এ চাকুরী নেয়। ৩ বছর চাকুরী করে। সুযোগ আসে প্রবাসের। খুশিতে আটখানা আসমা। অনেক টাকা কামাবে। সবাই ভাল থাকবে। সুখের কমতি হবে না। এ স্বপ্নই যে কাল হবে তার জীবনে এটা ভাবেনি কখনো। পরিবারে এবার স্বচ্ছলতা ফিরে আসবে এমন স্বপ্নেই বিভোর ছিলেন মা রহিমা বেগম (৫২)। বেতন বন্ধ হয়ে যায়। ভাল কোন খবর নেই। চিন্তায় পড়ে যায় পরিবারের লোকজন। মানুষ নামের হায়েনা (কপিল) আসমার উপর নির্যাতন চালায়। বাঁচার কোন পথ নেই আসমার। সব হারিয়ে আসমা পাগল প্রায়। সুখ নয় বাঁচার ফিকিরে অসুস্থ হয়ে পড়ে কিশোরী। অবশেষে ওই বাড়ি থেকে পালিয়ে সে দেশের পুলিশের কাছে ধরা দেয়। নিয়ে যায় হাজতে। সেখানেও অবর্ণনীয় কষ্ট। কয়েকবার আত্মহত্যার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছে। এক মাসেরও অধিক সময় সৌদীতে হাজতবাসের পর গত ২৭ অক্টোবর বাংলাদেশে আসে আসমা। সর্বক্ষণই মন মরা। আসমাকে গত ১৪ নভেম্বর সিলেট থেকে কালিকচ্ছে নিয়ে আসেন ভগ্নিপতি হোসেন মিয়া। এখানেও তার বড় বোন সহ কারো সাথে কথা বলে না। শুধু এদিক ওদিক চেয়ে থাকে। খাবার খায় না। গত ২০ নভেম্বর সিলেট চলে যাওয়ার কথা বললে বোন আনোয়ারা রাজি হননি।

সন্ধ্যায় ভগ্নিপতি কাজে তাই বোনকে চিপস্ আনতে দোকানে পাঠায় আসমা। সে সুযোগে ঘরের দরজা জানালা লাগিয়ে গলায় ওড়ানা পেছিয়ে ঘরের তীরে ঝুলে আত্মহত্যা করে আসমা। বোন এসে পেছনের দরজা ভেঙ্গে দেখে ফাঁসিতে ঝুলে আছে আসমা। আসমাকে দ্রুত সরাইল হাসপাতালে নিয়ে যান ভাগ্নিপতি হোসেন মিয়া। চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করে। পুলিশ আসমার লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়।

নিহত আসমার রহিমা বেগম ও বোন আনোয়ারা বেগম বলেন, আমাদের ধারণা মূলত সৌদী আরবে অত্যাচার নির্যাতনে অতিষ্ঠ ছিল আসমার জীবন। যা সে সহ্য করতে পারছিল না। তাই জেল খেটে দেশে এসে মরার মত ছিল।

সরাইল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শাহাদাত হোসেন টিটো বলেন, এটা আত্মহত্যা। প্রবাসে কিশোরী বড় ধরণের কোন আঘাত পেয়েছে। আবার দেশে আসার পর তার প্রবাস জীবনের উপর লোকজনের নানা ধরণের আপত্তিকর আলোচনা। এ জন্য আসমার বিয়ের উপরও প্রভাব পড়েছে। সব মিলিয়ে ওই কিশোরী আত্মহত্যা করেছে।






Shares