ইকবাল আজাদের স্বপ্নপূরণ এমপি শিউলী আজাদ,আনন্দে ভাসছে সরাইল
মোহাম্মদ মাসুদ, সরাইল থেকে: সরাইল আ’লীগের পরিচ্ছন্ন এক রাজনৈতিক ব্যক্তির নাম এ কে এম ইকবাল আজাদ। দলীয় কোন্দলে নিমর্মভাবে খুন হন তিনি। এরপরই রাজনীতির মাঠে নেমে পড়েন স্ত্রী শিউলী আজাদ। উপজেলা আ’লীগের যুগ্ম আহবায়কের দায়িত্বও পান তিনি। দলের জন্য মাঠের কর্মকান্ড ও ত্যাগ স্বীকারের পুরস্কার স্বরুপ দীর্ঘ ৬ বছর পর গত শুক্রবার সন্ধ্যায় দলীয় সিদ্ধান্তে আওয়ামীলীগের সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য হলেন উম্মে ফাতেমা নাজমা বেগম শিউলী আজাদ। স্বপ্নপূরণ হয়েছে প্রয়াত ইকবাল আজাদের। স্বাধীনতার ৪৮ বছর আ’লীগের একজন প্রতিনিধি পেয়ে আনন্দে ভাসছে সরাইল। সর্বত্র চলছে মিষ্টি বিতরণ। সরাইলের সৌদী প্রবাসীরাও উৎসবে মেতে ওঠেছেন। ইকবাল আজাদ ও শিউলী আজাদের নানা ছবি, কমেন্টেস-এ ব্যস্ত হয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। এ যেন এক বিশাল প্রাপ্তি। ধন্যবাদ জানিয়ে জননেত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছেন সরাইল বাসী।
দলীয় সূত্র ও সরজমিনে জানা যায়, সরাইল সদর ইউনিয়নের এক সময়ের জনপ্রিয় ইউপি চেয়ারম্যান ও প্রথম শ্রেণির ঠিকাদার আবদুল খালেকের ছেলে এ কে এম ইকবাল আজাদ। ১৯৮৭ খ্রিষ্টাব্দে সরকারি তিতুমীর কলেজে অধ্যয়নকালে ছাত্রলীগের রাজনীতির মাধ্যমেই প্রথম হাতেখড়ি তার। ৯০ এর দশকের প্রথম দিকে সরাইল আ’লীগের রাজনীতিতে আসেন তিনি। দলের জন্য তৃণমূল পর্যায় থেকে কাজ শুরু করেন। এক সময় ইকবাল আজাদ ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) আসন থেকে দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার জন্য লড়াই শুরু করেন। ১৯৯১ খ্রিষ্টাব্দে নৌকার প্রার্থী মেজর জহিরের নির্বাচনী মাঠে দায়িত্ব নিয়ে কাজ করেন। ১৯৯৬ খ্রিষ্টাব্দে এ আসনে আ’লীগের প্রার্থী আবদুল হালিমের পক্ষে নেতা কর্মীদের নিয়ে নৌকার জন্য কাজ করেছেন। ওই বছরের ১৬ ডিসেম্বর তিনি সরাইল উপজেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান। দক। সততা ও দক্ষতার সাথে তিনি দল পরিচালনা করেন। ২০০১ খ্রিষ্টাব্দে তিনি এ আসনে দলীয় মনোনয়ন চেয়ে ব্যর্থ হন। ২০০৬ খ্রিষ্টাব্দে আবারও শক্ত অবস্থানে থেকে মনোনয়ন চান। একেবারে কাছাকাছি গিয়েও মানোনয়ন জুটেনি তার ভাগ্যে। ২০০৮ খ্রিষ্টাব্দে তার মনোনয়ন প্রাপ্তির বিষয়টি তৃণমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত ছিল আলোচিত বিষয়। সেই যাত্রা আ’লীগ দলীয় প্রার্থী না দিয়ে মহাজোট থেকে জাপা নেতা অ্যাডভোকেট জিয়াউল হক মৃধাকে মনোনয়ন দেয়া হয়। দলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্বে থেকে ওই নির্বাচনটি পরিচালনা করেন ইকবাল আজাদ। মৃধার কাছে ৬০ হাজার ভোটের ব্যবধানে জাতীয় নেতা ইসলামী ঐক্যজোটের একাংশের চেয়ারম্যান মুফতি ফজলুল হক আমিনী পরাজিত হন। ২০১২ সালের ২১ অক্টোবর সরাইল আওয়ামীলীগের রাজনীতিতে কালো অধ্যায়ের সূচনা হয়। দলীয় কোন্দলের জেরে প্রকাশ্যে রাজপথে খুন হন ইকবাল আজাদ। জেরবার হয়ে পড়ে সরাইল আ’লীগ। স্বামীর লালিত অপূরণীয় স্বপ্ন বাস্তবায়নে রাজনীতির মাঠে নেমে পড়েন ইকবাল আজাদের স্ত্রী শিউলী আজাদ। সরাইল আশুগঞ্জের অলিগলিতে দলীয় কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়েন তিনি। ওয়ার্ড, ইউনিয়ন ও উপজেলা আ’লীগের অঙ্গসংগঠনের সকল নেতা কর্মীদের কাছে টেনে কাজ শুরু করেন। জেলা থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত দলীয় কর্মকান্ডে অংশ গ্রহন করতে থাকেন। শেখ হাসিনার উন্নয়ন বার্তা পৌঁছাতে থাকেন সাধারণ মানুষের কাছে। ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দের সংসদ নির্বাচনে আ’লীগ দলীয় মনোনয়ন পান শিউলী আজাদ। দল ও জোটের স্বার্থে জননেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে সেই যাত্রায় মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেন তিনি। পরবর্তীতে মহাজোটের প্রার্থী মৃধার জন্য ভোটের মাঠে লড়াই করে সফল হন। একই বছরের ১১ ডিসেম্বর উপজেলা আ’লীগের যুগ্ম আহবায়ক-১ হন শিউলী আজাদ। ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের নির্বাচনে মনোনয়ন চেয়েও পাননি তিনি। অবশেষে গত ৮ জানুয়ারি শুক্রবার সন্ধ্যায় সংরক্ষিত মহিলা আসনে (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) এমপি হিসেবে উম্মে ফাতেমা নাজমা বেগম শিউলী আজাদের নাম ঘোষণা করেন দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা। স্বাধীনতার ৪৮ বছর পর সরাইলে আ’লীগের একজন প্রতিনিধির নাম ঘোষণার সাথে সাথে আনন্দে ভাসতে থাকে গোটা সরাইল। কারণ গত দশ বছর দলটি ক্ষমতায় থাকলেও দলীয় কোন প্রতিনিধি না থাকায় নিরাশার দোলাচলে ভাসছিল এখানকার নেতা কর্মীরা। দলীয় কর্মকান্ডে ভাটার সাথে প্রশাসনের সর্বস্থরে আ’লীগ ছিল উপেক্ষিত। তাদের মধ্যে ফিরে এসেছে স্বস্থ্যি। গতকাল শনিবার সকালে সরাইল সদরসহ কয়েকটি ইউনিয়নে আনন্দ মিছিল ও মিষ্টি বিতরণ হয়েছে। উপজেলা আ’লীগের আহবায়ক অ্যাডভোকেট নাজমুল হোসেন বলেন, দীর্ঘদিন পরে সরাইলে আ’লীগের একজন প্রতিনিধি দেওয়ায় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ। আমরা চাই সকল ভেদাভেদ ভুলে দল ও জনগনের কল্যাণে তিনি কাজ করবেন। শিউলী আজাদ কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, দল ও জনগনের জন্য আমার স্বামী ২২টি বছর সততা স্বচ্ছতার সাথে রাজনীতির মাঠে কাজ করেছেন। সরাইল নিয়ে তার অনেক ছিল। কিন্তু ষড়যন্ত্রকারীরা তার সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন হতে দেয়নি। নৃশংষ ও নির্মমভাবে হত্যা করে সকল স্বপ্ন ধূঁলোয় মিশিয়ে দিয়েছে। চিরতরে আমাকে বিধবা ও দুই সন্তানকে করেছে এতিম। জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমার ত্যাগ ও কাজের মূল্যায়ন করেছেন। সেই সাথে হাসি ফুটিয়েছেন সরাইলের লাখো মানুষের মুখে। আমি উনার কাছে ঋণী ও কৃতজ্ঞ। সকলের সহযোগীতায় ইকবাল আজাদের লালিত স্বপ্ন বাস্তবায়নে এলাকার উন্নয়নই আমার মূল লক্ষ্য।