জানাযায় মানুষের ঢল
অগণিত ভক্তবৃন্দকে কাঁদিয়ে চলে গেলেন আব্দুল হালিম
মোহাম্মদ মাসুদ, সরাইল ॥ সরাইলের রাজনৈতিক অঙ্গনের এক উজ্জ্বল নক্ষত্রের নাম আব্দুল হালিম (৭৫)। সকলের হালিম ভাই। ৭১’র রণাঙ্গণের পরীক্ষীত সৈনিক। ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক। সাদামাটা এ মানুষটির জীবন যাত্রাও ছিল একেবারে সহজ-সরল। ছাত্রলীগ থেকে শুরূ করে আওয়ামীলীগের কান্ডারি ছিলেন আজীবন। নৌকা প্রতীকে জাতীয় সংসদ নির্বাচন করেছেন দুইবার। বর্ষীয়ান এই রাজনীতিবিদ পরিবার, স্বজন ও অগণিত ভক্তবৃন্দকে কাঁদিয়ে চলে গেলেন না ফেরার দেশে।
গত বৃহস্পতিবার ২১ জানুয়ারি ২০২১ সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ঢাকার বারডেম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেছেন। উনার মৃত্যুর খবরে গোটা সরাইলে নেমে আসে শোকের ছায়া। জীবন সায়াহ্নে বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হালিমকে দলীয় কোন্দলে খুন হওয়া নিজ দলের নেতা ইকবাল আজাদের হত্যা মামলায় জেল খেঁটেছেন। বাদ আছর উনার জানাযায় মানুষের ঢল নেমেছিল। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ হইতে তাঁকে দেয়া হয়েছে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা।
দলীয় ও পারিবারিক সূত্র জানায়, কিশোর বয়স থেকেই বঙ্গবন্ধুর আদর্শে অনুপ্রাণিত ছিলেন তিনি। ১৯৬৫ খ্রিষ্টাব্দে ব্রাহ্মণবাড়িয়া কলেজ শাখা ছাত্রলীগের ভিপি পদে নির্বাচিত হয়েছিলেন। ৭১’র মহান মুক্তিযুদ্ধে সবকিছু ছেড়ে লড়াই করেছেন রণাঙ্গণে। মুক্তিযোদ্ধাদের নেতৃত্ব দিয়েছেন। আগরতলা হাফানিয়া ক্যাম্পের প্রধান ছিলেন তিনি। ১৯৭৫ খ্রিষ্টাব্দের ১৫ আগষ্ট বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে হত্যার পর গোটা দেশ ছিল স্তদ্ধ। অসম সাহসের অধিকারী হালিম সেই দিনও থামেননি। প্রশাসনের কঠোর অবস্থান ভেদ করে সেই নির্মম ও বর্বর হত্যাযজ্ঞের প্রতিবাদ করেছিলেন রাজপথে। রোষানলে পড়েছিলেন তৎকালীন প্রশাসনের। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু স্লোগান ছাড়েননি তিনি। দীর্ঘ দুই যুগেরও অধিক সময় তিনি ছিলেন সরাইল আওয়ামীলীগের সভাপতি। ১৯৯১ ও ১৯৯৬ খ্রিষ্টাব্দে বঙ্গবন্ধুর কন্যা তৎকালীন আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি শেখ হাসিনা আব্দুল হালিমকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে দলীয় মনোনয়ন (নৌকা) দিয়েছিলেন। দুর্ভাগ্য এমপি হতে পারেননি তিনি। সরাইল কলেজ প্রতিষ্ঠায় তার ভূমিকা ছিল প্রশংসনীয়। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত নিরহঙ্কার এ মানুষটি আওয়ামীলীগ, সাধারণ মানুষ ও মুক্তিযোদ্ধাদের জন্যই কাজ করে গেছেন।
তার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের এমপি উকিল আব্দুস সাত্তার ভূঁইয়া, সাবেক এমপি অ্যাডভোকেট জিয়াউল হক মৃধা, সরাইল উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রফিক উদ্দিন ঠাকুর, ভাইস চেয়ারম্যান আবু হানিফ, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান রোকেয়া বেগম, বেসরকারি শিক্ষক কল্যাণ ট্রাষ্টের সদস্য সচিব অধ্যক্ষ শাহজাহান আলম সাজু, বাংলাদেশ আইন সমিতির সাবেক সভাপতি মো. কামরূজ্জামান আনসারী, শহীদ বুদ্ধিজীবীর সন্তান ও আ’লীগ নেতা অ্যাডভোকেট সৈয়দ তানবির হোসেন কাউসার, সরাইল সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মৃধা আহমাদুল কামাল, সরাইল মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ মোহাম্মদ বদর উদ্দিন, জেলা আ’লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এড. মাহবুব আলম খোকন, উপজেলা আ’লীগের আহবায়ক এড. মো. নাজমুল হোসেন, বিএনপি নেতা মো. আনোয়ার হোসেন, জেলা যুবলীগের সভাপতি এড. মো. শাহানুর ইসলাম, সম্পাদক এড. মো. সিরাজুল ইসলাম ফেরদৌস, সরাইল প্রেসক্লাবের সভাপতি মো. আইয়ুব খান ও সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মাহবুব খান বাবুল।
প্রসঙ্গত: আব্দুল হালিম উপজেলার নোয়াগাঁও ইউনিয়নের আইরল গ্রামের প্রয়াত আব্দুর রশিদের ছেলে। মৃত্যুকালে তিনি ৩ ছেলে ৩ মেয়ে সহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। বাদ আছর প্রথমে সরাইল অন্নদা স্কুল মাঠে ও বাদ মাগরিব নিজ গ্রামে দ্বিতীয় জানাযা শেষে তাঁর মরদেহ পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।