সরাইলে দেবর ভাবীর আত্মহত্যা ::অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য শ্রবণ
মোহাম্মদ মাসুদ, সরাইল ::সরাইলের উচালিয়া পাড়া গ্রামে দেবর ভাবীর আত্মহত্যার ঘটনার তিন মাস পর গত সোমবার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এ এম মাসুদের কাছে ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী তৃশা (০৯) সহ ১০/১২ জন তাদের বক্তব্য দিয়েছেন। এ সময় তাদের প্রতিবেশী, রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ স্থানীয় গন্যমান্য লোকজন সহ গ্রামের দুই শতাধিক মহিলা পুরুষ উপস্থিত ছিলেন। সকলের একই কথা এটা হত্যা নয়, আত্মহত্যা। ৯৫ বছরের বৃদ্ধ তৈয়ব উদ্দিন মুন্সীকে আসামী করার বিষয়টি নিয়ে ছিল আলোচনা। তদন্তকারী কর্মকর্তার কিছু কমকার্ন্ড নিয়ে ছিল সমালোচনা। তারা ঘটনার সুষ্টু তদন্ত করে হত্যার দায় থেকে নিরীহ লোকজনকে নিস্কৃতি দেয়ার দাবী জানান।
বক্তব্য প্রদানকারীরা হচ্ছেন- সাবেক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রফিক উদ্দিন ঠাকুর, বিএনপি’র সম্পাদক মোঃ আনোয়ার হোসেন, ইউপি সদস্য মোঃ আরিজ মিয়া প্রতিবেশী আসাদুজ্জামান, আলমগির ময়া, রাশেদা বেগম, আবু শাহ, রতœা বেগম, সিরাজ মিয়া ও বিল্লাল মিয়া।
তারা বলেন, রাজিব উদ্দিন মুন্সী (১৮) গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করার পর তার বড় ভাই হেলাল উদ্দিন ও জিয়া উদ্দিন তাকে নিয়ে হাসপাতালে চলে যান। স্ত্রী পান্না বেগমকে নিয়ে জয়নাল উদ্দিন স্থায়ী ভাবে বসবাস করছেন চট্রগ্রামে। আরেক ভাই জুয়েল উদ্দিন ছিলেন জেলা সদরে। বাড়িতে ছিল শুধু তাদের বৃদ্ধ মাতা আওলিয়া বেগম (৬৫), ছোট বোন চম্পা (১৪) ও আকলিমা বেগম। রাজিবের লাশ নিয়ে বাড়িতে আসার পরই আকলিমা তার শয়ন কক্ষে প্রবেশ করে ভিতরের দিকের চিটকারি লাগিয়ে দেয়। ওই সময় কক্ষের ভিতরে আকলিমার সাথে ছিল তার শিশু কন্যা তৃশা। তৃশার চিৎকার শুনে লোকজন দৌড়ে গিয়ে দরজায় ধাক্কা দেয়। খুলা সম্ভব হয়নি। পরে জানালা ভেঙ্গে ভিতরে প্রবেশ করে বিল্লাল ও সিরাজ। তারা জানায় ভেতরে গিয়ে দেখা যায় আকলিমা মৃতের মত মেঝেতে পড়ে রয়েছে। পরে তাকে বের করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষনা করেন। পরে দেখা য়ায় আকলিমার গলায় কাপড় জাতীয় চিকন কি দিয়ে যেন ফাঁস লাগানো।
প্রত্যক্ষদর্শী আকলিমার কন্যা শিশু তৃশা ঘটনার পর পুলিশ ও সাংবাদিকদের কাছে স্পষ্ট ভাবে বলেছে, “আম্মা রুমের ভিতরে গিয়ে পায়জামার নেতি (আঞ্চলিক ভাষায় নিয়ার) খুলে গলায় গিট্টু দিচে। পরে খাটে শুয়ে গেছে। একটু পরে খাট থাইক্কা নিচে পইড়া গেছে। আমি তখন চিৎকার শুরু করি। লোকজন দৌড়াইয়া আসে।” একই বক্তব্য গত ৫ আগষ্ট পুলিশ সুপারের কাছেও দিয়েছে তৃশা।
সরাইল থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ আলী আরশাদ তৃশার ওই বক্তব্য সম্পর্কে জানতে চাইলে বলেন, তাদেরকে তো বলেছি তৃশাকে পুলিশ সুপার মহোদয়ের সামনে হাজির করতে। হেলালদের প্রতিবেশী ও গ্রামবাসীর দাবী এটা আত্মহত্যা। নির্দোষ লোকদের হত্যার দায় থেকে মুক্তি দেয়া হউক।
প্রসঙ্গত: পারিবারিক কলহের জেরে গত ১৬ এপ্রিল সন্ধ্যা সাড়ে ৬ টায় গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে হেলালের ছোট ভাই রাজিব। দেবরের মৃত্যুর খবর পেয়ে নিজ কক্ষে গিয়ে সন্ধ্যা ৭টায় গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে গৃহবধু আকলিমা বেগম। তাদের পারিবারিক সূত্রে এ তথ্য জানা যায়।
পরে ১৭ এপ্রিল আকলিমার বড় ভাই আক্তার মিয়া বাদী হয়ে স্বামী শ্বশুড় শ্বাশুড়ি দেবর ননদ সহ আট জনের বিরুদ্ধে সরাইল থানায় নারী নির্যাতন ও হত্যা মামলা দায়ের করেন। তবে স্থানীয় সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট জিয়াউল হক মৃধা উপজেলা আইন শৃঙ্খলা সভায় উচালিয়া পাড়ার গৃহবধু আকলিমা ও শাহজাদাপুরের বৃদ্ধ ফিরোজ হত্যা মামলা দুটিকে বিতর্কিত এবং ষড়যন্ত্রমূলক বলে উল্লেখ করেছেন।