সরাইলে মাদরাসা ছাত্র জুনাঈদের খুনী চক্র চিহ্নিত গ্রেপ্তারকৃত ছানার খুনের দায় স্বীকার
মোহাম্মদ মাুসদ : ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে মাদরাসা ছাত্র জুনাঈদ (১২) কে অপহরনের পর হত্যার ঘটনার প্রায় দুই মাস পর ওই খুনী চক্রকে চিহ্নিত করেছে ডিবি পুলিশ।
গত সোমবার গভীর রাতে এ ঘটনার সাথে জড়িত টিঘর গ্রামের বাসিন্ধা আইয়ুব আলীর ছেলে ছানা উল্লাহ (৩৫) কে সরাইল সদর থেকে গ্রেপ্তার করেছে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও জেলা ডিবি’র ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ মঈনুর রহমান। অপহরন ও খুনের সাথে সরাসরি জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে ছানা উল্লাহ। ডিবি পুলিশ ও জুনাঈদের পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, অপহরন ও খুনের সাথে জড়িত ছানা জুনাঈদের প্রতিবেশী। সে পেশায় একজন রাজমিস্ত্রী। ঘটনার সাথে জড়িত আরো দুইজন জুনাঈদকে চিনতো না। মূল পরিকল্পনাকারী ছানার নিকটতম আত্মীয়। ছানার সহায়তায় তারা প্রথমে জুনাঈদকে অপহরনের টার্গেট করে। এ জন্য ছানাকে দেখানো হয়েছিল মোটা অংকের টাকার লোভ।
গত ১৩ সেপ্টেম্বর শনিবার বাদ আছর সরাইল আলীনগর মাদরাসায় যায় ছানা। এ সময় ওই চক্রের অপর দুই সদস্য সিএনজি চালিত অটোরিক্সা নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে সড়কে। ছানা হাতে ইশারা করে খেলায়রত জুনাঈদকে ডাক দেয়। প্রতিবেশী চাচা ছানার ডাকে সরল বিশ্বাসে দৌঁড়ে আসে জুনাঈদ। ছানা তখন জুনাঈদকে নিয়ে সড়কে অপেক্ষমান ওই সিএনজিতে উঠেন। অবুঝ শিশু জুনাঈদ তখনও বুঝতে পারেনি তাকে অপহরন করা হচ্ছে। চোখ বেঁধে জুনাঈদকে নিয়ে চম্পট দেয় তিন অপহরনকারী। জুনাঈদকে নিয়ে যায় কালিকচ্ছ দত্তপাড়া ওই চক্রের সদস্য ছানার এক স্বজনের বাড়িতে। সেখানে জুনাঈদকে তারা সেবন করায় অতিরিক্ত ঘুমের ট্যাবলেট। অচেতন হয়ে পড়ে জুনাঈদ। সন্ধ্যা ৭টায় জুনাঈদের চাচা সরাইল বাজারের মসলা ব্যবসায়ী নাজমূল হকের (৪৮) মুঠোফোনে ফোন করে পাঁচ লাখ টাকা মুক্তিপন দাবী করে অপহরনকারীরা। দরিদ্র পরিবারের সদস্যরা তখন দিশেহারা হয়ে পড়ে। চারিদিকে তারা টাকার জন্য ছুটাছুটি করতে থাকে। অপহরনকারীরা ০১৭৯৫-৯৮৮৯৭১, ০১৭৯৭-৪৮০৯৭৯, ০১৬২৪-০৭৮৩২৩ ও ০১৬২২-৯৪৩২১৫ নাম্বার গুলো থেকে বারবার ফোন করে টাকা দাবী করতে থাকে। যথা সময়ে টাকা দিতে না পারলে তারা জুনাঈদকে হত্যার হুমকি দেয়। নাজমুল হক বিষয়টি থানায় স্বশরীরে হাজির হয়ে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে জানায়। থানা তখন মুঠোফোনের নাম্বার গুলো উল্লেখ না করে অপহরন নয় জুনাঈদ শুধু নিখোঁজ হয়েছে মর্মে একটি জিডি নেন (জিডি নং- ৬৯৪, তাং-১৩.০৯.১৪)। ওদিকে সন্তান হারানোর যন্ত্রনায় কাতর জুনাঈদের স্বজনরা অপহরনকারীদের দেওয়া বিভিন্ন ঠিকানায় দৌঁড়াতে থাকেন। ১৪ সেপ্টেম্বর ০১৬২৪-০৭৮৩১৬ বিকাশ নাম্বারে বিশ হাজার টাকায় পাঠায় জুনাঈদের স্বজনরা। ১৫ সেপ্টেম্বর রাতের যে কোন সময়ে জুনাঈদকে হত্যা করে বালু ভর্তি বস্তা কোমরে বেঁধে ধর্মতীর্থ সোনালী ব্রীকসের নিকটে আকাশী হাওরের পানিতে লাশ ফেলে রাখে অপহরনকারীরা। সোনালী ব্রীকসে ছানা মাঝে মধ্যে কাজ করতো। পুলিশ জুনাঈদের লাশ উদ্ধার করে মর্গে পাঠায়। ১৬ সেপ্টেম্বর জুনাঈদের পিতা মোঃ রফিকুল হক বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা লোকদের আসামী করে সরাইল থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। ক্লুবিহীন জটিল এ মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় জেলা ডিবি পুলিশকে। গত ১৫ অক্টোবর থেকে তারা তদন্ত শুরু করেন। এ ঘটনার তিন মূল নায়ককে সনাক্ত করার কথা জানিয়েছেন ডিবি ওসি। গত সোমবার সরাইল সদরের নতুন হাবলী এলাকায় অভিযান চালিয়ে ভাড়া বাসা থেকে ছানা উল্লাহকে গ্রেপ্তার করেছে ডিবি। গতকাল তাকে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। ঘটনার সাথে নিজের সম্পৃক্ততা ও অন্য দুই সহযোগীর কথা স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় আদালতে জবানবন্ধি দিয়েছে ছানা। প্রসঙ্গতঃ এ ঘটনার তিন সপ্তাহ আগে একই ইউনিয়নের ভিটঘর গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য রুস্তম আলীর কলেজ পড়–য়া ছেলে সোহেল মিয়াকে (২০) ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের বেড়তলা থেকে অপহরন করা হয়েছিল। পরে মুঠোফোনে তিন লাখ টাকা মুক্তিপন দাবী করে অপহরনকারীরা। তিন দফায় বিকাশের মাধ্যমে দেড় লাখ টাকা দেওয়ার পর কুট্রাপাড়া ব্রাক অফিস সংলগ্ন ফাঁকা জায়গায় অচেতন অবস্থায় ফেলে যায় সোহেলকে।
জেলা ডিবি’র ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ মঈনুর রহমান বলেন, তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে জুনাঈদের অপহরন ও খুনীদের সনাক্ত করেছি। বাকিদের দ্রুতই গ্রেপ্তার করা হবে।