Main Menu

সরাইলে বাড়ছে গাঁজা ও ইয়াবা বিক্রি

+100%-


মোহাম্মদ মাসুদ ::  ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে দিন দিন বাড়ছে গাঁজা ও ইয়াবা বিক্রি। সেই সাথে পাল্লা দিয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে সেবনকারীর সংখ্যা। সন্ধ্যা হলেই মাদক সেবীরা হাসপাতাল, সরকারি অফিসের বারান্দা সহ বিভিন্ন নির্জন স্থানে চালায় সেবনের কাজ। সমগ্র উপজেলায় শতাধিক স্পটে বিক্রি হচ্ছে গাঁজার পুড়িয়া। সব দিক ম্যানেজ করে বুক ফুলিয়ে গাঁজা বিক্রি করে ইতিমধ্যে কয়েকজন হয়ে গেছেন সম্রাট। কথিত কিছু পীরের আস্তানায় দিনে রাতে বসে গাঁজার আসর। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ঘুরে ফিরে ও চিহ্নিত কিছু দোকানে নিয়মিত বিক্রি হচ্ছে ইয়াবা। ইয়াবার বেশীর ভাগ ক্রেতা হচ্ছে মাধ্যমিক স্কুল ও কলেজ পড়–য়া ছেলে মেয়েরা। পেছনে কাজ করছে শক্তিশালী  একটি সিন্ডিকেট। গাঁজার মত ইয়াবা এখন পৌঁছে গেছে গ্রাম এলাকায়। ধ্বংস হচ্ছে যুব সমাজ। বাড়ছে চুরি ছিনতাই অপহরণ নারী নির্যাতন ও আত্মহত্যা। উপজেলা চত্বরে  গাঁজা সেবনকারীদের পাকড়াও করতে গিয়ে আহত হন খোদ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ এমরান হোসেন। একাধিক সূত্র জানায়, সরাইল সদর সহ বিভিন্ন গ্রামে এখন ব্যঙের ছাতার মত গজিয়ে উঠেছে গাঁজা ও ইয়াবা বিক্রেতা। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার জনৈক কর্মকর্তার বাসায় নিয়মিত বসে গাঁজা ও মদের আসর। সেখানে অংশ গ্রহন করেন কিছু কাপুড়ে ভদ্রলোক। সরাইলের ২/৩টি সড়ক ও নৌপথকে নিরাপদ ট্রানজিট হিসেবে ব্যবহার করে বিভিন্ন জেলায় গাঁজা পাচার করছে পাচারকারীরা। এ কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে ভাল লেবাজধারী কিছু লোকের গাড়ী। বিনিময়ে নিচ্ছে তারা মোটা অংকের ভাড়া। সড়ক পথে সরাইল অরুয়াইল সড়ক দিয়ে নিয়মিত গাঁজা পাচার হচ্ছে। গাঁজার চালান নৌপথে দেশের বিভিন্ন জায়গায় পাচার ও এলাকায় বিক্রি করে সম্রাট উপাধি পেয়েছেন লোপাড়ার কুতুব মিয়া (৩৫) ও নরসিংহপুরের রমজান (৪৫)। আর অরুয়াইলের রাজাপুর গ্রামের কথিত এক সর্দার গাঁজা পাচারের কাজ করছেন দীর্ঘদিন ধরে। ওই গ্রামের বাসিন্ধা খেলু মিয়া সহ একাধিক ব্যক্তি জানান, প্রায়ই সন্ধ্যার পর নৌকায় করে বোরখা পরিহিত দুইজন মহিলা ব্যাগ ভর্তি গাঁজা নিয়ে গ্রামে প্রবেশ করে জনৈক সর্দারের বাড়িতে যায়। সর্দার তাদেরকে নৌকায় করে কোথায় যেন পাঠিয়ে দেন। নৌপথে বিজয় নগরের চান্দুরা থেকে গাঁজার চালান আসে সরাইলের শাহজাদাপুর গ্রামে। সেখান থেকে আবার নৌকায় করে ধর্মতীর্থ  পুটিয়া ব্রীজের নিচ দিয়ে গাঁজা আসে ধর্মতীর্থ, কালিকচ্ছ, বিশুতারা, চুন্টা, নরসিংহপুর ও লোপাড়ায়। লোপাড়া থেকে চলে যায় অরুয়াইলের বিভিন্ন গ্রামে। গাঁজা বিক্রি করে ইতিমধ্যে সম্রাট সম্রাজ্ঞী উপাধি পেয়েছেন শাহবাজপুরের দুলাল মিয়া (৫৫), বাড়িউড়ার আলী হোসেন (৬০), অরুয়াইলের ঋষি শাহজাহান (৪৫), সরাইলের লিল বানু (৫০) তার স্বামী জুনু মিয়া (৪৫) ও আবেদা বেগম (৪৭)। নোয়াগাঁও গ্রামের আবু সিদ্দিক (৫৫), মিরিজ আলী (৪০) ও নোয়াজ আলী (৪৫) গত ১৫/২০ বছর ধরে বিক্রি করছেন গাঁজার পুড়িয়া। শুরু করেছিলেন পাঁচ টাকা থেকে এখন বিশ টাকা। এ ছাড়া শাহবাজপুর গ্রামের হারুন মিয়া (৫০) ও আনছর আলী (৪৫) গাঁজার ব্যবসা করছেন। সম্প্রতি অভিযান চালিয়ে সম্রাট দুলালকে গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ। পরে পুলিশকে মারধর করে তৎকালীন এএসআই মোঃ বাশারের কাছ থেকে হ্যান্ডকাপ সহ পালিয়ে গিয়েছিল দুলাল। পরে স্থানীয় চেয়ারম্যানের সহায়তায় ঘটনার ২/৩ দিন পর হ্যান্ডকাপ ফেরত দেওয়া হয়। কালিকচ্ছের ফজলা (৫৫) তার স্ত্রী সুন্দরী বেগম (৫০), মেয়ে পারুলী (২৮),  বিশুতারার জসিম উদ্দিন (৪৫), আখিঁতারা গ্রামের লাল শাহ (৫০), বাচ্চু মিয়া (৪০) ঘুরে ফিরে ও বাড়িতে বসে করছেন গাঁজার ব্যবসা। সরাইল সদরের কুট্রাপাড়া গ্রামে আনু মিয়া (৪৮), তার স্ত্রী আনু বেগম(৩৫), শাহজাদাপুর পূর্ব পাড়ার দিদার হোসেনের স্ত্রী নেহেরা বেগম (৩৫), উত্তর পূর্ব পাড়ার আউশ মিয়ার স্ত্রী আয়েশা বেগম (৪০), মদ উল্লাহ (৩২), টিঘর গ্রামের আমবর আলীর ছেলে জাহাঙ্গীর (৪২) ও তার স্ত্রী মুন্নি বেগম (২২), চুন্টা গ্রামের নূরুল ইসলাম (৫০), দাঁতের ডাক্তার পরিচয়দানকারী আলী মিয়া (৫৫), আন্নর আলী (৬০), মন্দির সংলগ্ন বাড়ির মারফত আলী (৫০), প্রদীপ পাল (৫৫), রসুলপুর গ্রামের রিয়াজুল মিয়া (৩৫), ধন মিয়া (৪০), রওশন আলী (৩২), ফারুক মিয়া (৩৫), মফিজ মিয়া (৪৫), নান্নু মিয়া (৩২),  লোপাড়ার আবদু মিয়া (৩২), জিলানী (২৫), ভূইশ্বর গ্রামের মেরাজ মিয়া (৪০) ও রুক্কু মিয়া (৩০) স্থানীয় ভাবে গাঁজার বড় ব্যবসায়ি। পুড়িয়া পকেটে রেখে হেঁটে হেঁটে বিক্রি করেন রতিস (৬০), করাতকান্দির দিলু মিয়া (৪২), বড়াইল গ্রামের মিঠু (৪৫), জয়ধরকান্দি গ্রামের ফারুক মিয়া (৩২), হাবিব মিয়া (৩৯) ও বাংলা মদ তৈরীর কারিগড় এবং বিক্রেতা ঋষি (চামার) বঙ্কা (৫২), মলাইশ গ্রামের যতিশ দাসের (৪২) চায়ের দোকানে ও মিশুকান্ত দাস (৬০) বাড়িতে বসে বিক্রি করছেন গাঁজা। আরেক মরন নেশার নাম ইয়াবা। এটা ট্যাবলেট জাতীয়। স্থানীয় ভাবে আসক্তরা এটাকে বাবা বলে থাকে। সরাইল সদরের কলেজের আশপাশে এখন নিয়মিত বিক্রি হচ্ছে ইয়াবা। আসক্তদের পাশাপাশি অধিকাংশ ক্রেতা হচ্ছে স্কুল কলেজের শিক্ষার্থী। পাঠানপাড়া মোড় থেকে থানা পর্যন্ত সড়কে হেঁটে ইয়াবা বিক্রি করছে একদল যুবক। মাঝে মধ্যে চিহ্নিত ২/১টি দোকোনে বসে সেরে নিচ্ছে বিক্রির কাজ। এদের পেছনে রয়েছে নেতৃস্থানীয় প্রভাবশালী একটি সিন্ডিকেট। উপজেলার বিভিন্ন গ্রামেও এখন বিক্রি হচ্ছে ইয়াবা। গত ২৫ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় দেওড়া গ্রাম থেকে ইয়াবা সেবন ও বিক্রির সময় হাতে নাতে সুজন (৩৫) এবং মাসুদ (২৮) নামের দুই যুবককে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাদের কাছ থেকে ১২ পিস ইয়াবা উদ্ধার করেছে পুলিশ। ওইদিন রাত ১১টার পর বিশেষ ব্যক্তিদের তদবিরে থানা কাষ্টরি থেকে ব্যবসায়ি সুজনকে ছেড়ে দেয় পুলিশ। উপজেলা আইন শৃঙ্খলা সভায় মাদকের আস্তানা ও বিক্রেতাদের নাম উল্লেখ শতবার বক্তব্য আসছে। কিন্তু কোন প্রতিকার নেই। সরাইল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ আলী আলশাদ বলেন, মাদকের সাথে কোন আপোষ নেই। এ বিষয়ে আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে এবং থাকবে। ইতিমধ্যে ৩টি মামলা হয়েছে। আট মাদক ব্যবসায়িকে ভ্রাম্যমান আদালতে সাজা করিয়েছি।






Shares