সরাইলের হাজেরার জর্ডানে গিয়ে স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে গেল
মোহাম্মদ মাসুদ , সরাইল প্রেসক্লাবে সাংবাদিক সম্মেলন করে র্জডানের তিন মাসের লোমহর্ষক কাহিনীর র্বণনাদেন হাজেরা । দালালদের খপ্পরে পড়ে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ জর্ডানে গিয়ে স্বপ্ন ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেল ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলের এক মহিলার। চড়া সুদের ওপর ঋণ নিয়ে বিদেশ গেলেও তাকে প্রতিশ্রুত চাকরি না দিয়ে বিক্রি করে দেয়া হয়েছিল জর্ডানের একটি নারী ব্যবসায়ী চক্রের হাতে। বরবরতা নির্যাতনের শিকার হয়ে ভাগ্য ক্রমে সে দেশে ফিরে আসলেও সব কিছু হারিয়ে গত ৩ দিন ধরে শরীরের বিভিন্ন স্থানে ক্ষত নিয়ে সরাইল হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন তিনি। জানা গেছে, উপজেলার কুট্টাপাড়া গ্রামের জামাল খার স্ত্রী দু সন্তানের জননী হাজেরা (২৮) ৩ মাস আগে স্থানীয় ফিরোজ মিয়া , হনোফা বেগম, নুরজাহান ও বাবুল মিয়া নামের চার দালালের মাধ্যমে জর্ডান যাবার কথা হয় তার। দালালরা বলেছিল তাকে বিদেশে একটি বাসা-বাড়ির কাজ করতে হবে। বেতন চুক্তি করেছিল প্রতিমাস ১২ হাজার টাকা। হাজেরার রয়েছে দু সন্তান। গত ১৫ বছর আগে তাদের বিয়ে হয় । স্বপ্ন ছিল বিদেশ গিয়ে প্রতিমাসে টাকা পাঠাবে আর পাঠানো টাকায় মানুষের মতো মানুষ হবে দু সন্তান। ধীরে ধীরে স্বাবলম্বি হবে অর্থনৈতিকভাবে। কিন্তু দালালদের খপ্পরে পড়ে সব স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে যায়। ৩ মাস আগে স্বপ্ন পূরণ করতে বুকে বড় আশা নিয়ে স্থানীয় লোকজনদের কাছ থেকে চরা সুদের ওপর যোগাড় করে ৭০ হাজার টাকা। সেই টাকা দিয়ে চলে যায় জর্ডান। কিন্তু সেখানে পৌঁছার পরই পাল্টে যায় তার জীবনের চিত্র। বাসা-বাড়িতে কাজের কথা থাকলেও ওই দেশের দালালরা রাতেই তার সামনে ৩ লাখ টাকা নিয়ে তাকে দেহ ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করে দেয়। যৌন কাজে রাজি না হওয়ায় বেদম মারপিট করে প্রাণনাশের হুমকি ধামকি দিয়ে বাধ্য করায় তাকে।এখন থেকে আমার কথামত চলতে হবে। একথা বলে সে হাজেরার উপর শারিরিক ও মানষিক নির্যাতন শুরু করে।একসময় ওই এলাকার নাইট ক্লাবে তাকে নিয়ে গিয়ে অসামাজিক কাজ করতে জোরপূর্বক বাধ্য করে। এভাবে কিছুদিন অতিবাহিত হয়ে গেলে হাজেরা সুজোগ খুজতে থাকে দেশে বিষয়টি অবগত করানোর জন্য। একপর্যায়ে সে মোবাইল ফোন দিয়ে আমার স্বামী জামাল খাকে বিষয়টি অবগত করে। যতদ্রুত পারে বাংলাদেশে নিয়ে আসার জন্য খবরটি সে জর্ডান থেকে বাড়িতে স্বামীর কাছে জানালে সে স্থানীয় গণ্যমান্য লোকজনের সহযোগিতা চায়। এ সময় নিজসরাইল গ্রামের সালিশ কারকরা এগিয়ে আসেন তাকে সহযোগিতা করতে। স্বামী জামাল খা জানান, স্থানীয় গণ্যমান্য লোকজন নিয়ে প্রথমে দালালদের সাথে দেন দরবার হয় এবং দালালরা আমার স্ত্রীকে ফেরৎ দেয়ার জন্য ৪০ হাজার টাকা ফের দাবি করে। পরে ৪০ হাজার টাকায় দেয়া হয়। এর পর গত ৯ সেপ্টেম্ভর দেশে ফেরৎ আনা হয় তাকে। এ বিষয়ে হাজেরা জানান, যখন ফ্লাইটে ঢাকা এয়ারপোর্টে আসি তখন আমাকে বিদেশ পাঠানো সেই দালাল পাচারকারী চক্রটি এসে রিসিভ করে আমার সাথে থাকা কিছু টাকা এবং অন্যান্য জিনিসপত্র ছিনিয়ে নেয় । আমি যখন আমার বাড়ির লোকজন কোথায় জানতে চাই তখন তারা কোন সদুত্তর দিতে পারেনি। বেশ কিছুদিন আটকিয়ে রেখে স্থানিয় সাহেব সর্দারদের অনেক চাপে তারা আমাকে রাস্তায় ছেড়ে দেয়। বাড়িতে আসার পরের দিন তার শারীরিক অবস্থা দেখে সরাইল হাসপাতালে ভর্তি করা হয় । বর্তমানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছেন। সে আরো জানান বুকে বড় আশা আর চোখে অনেক স্বপ্ন নিয়ে বিদেশ গিয়েছিলাম কিন্তু দালালরা আমাকে স্বপ্ন পূরণ করতে দেয়নি। বরং শারীরিকভাবে ব্যাপক মারপিট ও যৌন নিপিরণ করা হয়েছে। আমার শরীরে নির্যাতনের অনেক ক্ষত রয়েছে বলেও জানান তিনি। প্রতারক দালালের উপযুক্ত শাস্তির দাবি জানান। এ ছাড়া ক্ষতি পুরনের অর্থ ফেরত পেতে তিনি সরকারের সংশি¬ষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।এ ব্যাপারে জানতে চাইলে অভিযুক্ত ফিরোজ মিয়ার মোবাইল ফোনে কথা বলতে চাইলে তার স্ত্রী অভিযুক্ত হনোফা বেগম বলেন, বিদেশ পাঠানোর কথা স্বীকার করে অন্যান্য অভিযোগ অম্বীকার করেন।অভিযুক্ত বাবুল মিয়ার সাথে যোগাযোগ করলে মোবাইল ফোনে জানায়, বিদেশ পাঠানোর টাকা বাকী থাকায় সে দেশে এসে টাকা না দিয়ে আমাদের উপর মিথ্যা মামলা দায়ের করেন।এ ব্যাপারে সরাইল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো আলী আরশাদ জানান, থানায় কোন অভিযোগ আসেনি । অভিযোগ পেলে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেয়া হবে ।