সরাইলে ভূমিহীন চা বিক্রেতার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি মামলা
মোহাম্মদ মাসুদ , সরাইল থেকে:সরাইলে দুই অসহায় দরিদ্র ভূমিহীন চা বিক্রেতা বানু মালাকার ও আয়েত উল্লাহ বিরুদ্ধে চাঁদাবাজী মামলা। তাদের বাড়ি উপজেলার অরুয়াইল ইউনিয়নে। নিজেদের মাথা গোজার ঠাঁই নেই বাধ্য হয়ে ভানু পরিবার নিয়ে বসবাস করেন হিন্দুদের আখরায়। আয়েত উল্লাহ থাকেন অন্যের বাড়িতে। স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে অনাহারে অর্ধাহারে চলছে তাদের জীবন। বাজারের খোলা জায়গায় দাঁড়িয়ে চা বিক্রি তাদের মূল পেশা। অনেক চেষ্টা তদবির করে তারা দুজনই ২০০৯ সালে সরকারি জায়গা পেয়েছেন। মিলেছে তাদের মাথা গোজার ঠাঁই। বিষয়টি মেনে নিতে পারেননি স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহল। তাদের ওই জায়গা নিজেদের দখলে নেওয়ার জন্য নানা কুটকৌশল শুরু করেন তারা। কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত ও মৌখিক এক হালি অভিযোগ দিয়েও কোন কিনার পাননি। অবশেষে দরিদ্র সংখ্যালঘু চা বিক্রেতা বানু মালাকার সহ তিন জনের বিরুদ্ধে গত ২১ ডিসেম্বর সাজানো চাঁদাবাজি মামলা করেন মাহফুজুর রহমান। বিকেলে এজহার জমা দিলে কয়েক ঘন্টার মধ্যেই নথিভূক্ত হয়ে যায় মামলা। ওইদিনই মামলা তদন্ত না করে রাত ৮টায় বানু মালাকারকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পাঁচদিন পর জামিনে আসে চা বিক্রেতা বানু। ভূমিহীন বানু ও আয়েত উল্লাহ মাহফুজকে তাঁর জায়গাটি বিক্রয় করে দেওয়ার জন্য ভয়ভীতি ও হুমকি প্রদর্শন করে। এক পর্যায়ে জবর দখল ও খুনজখমেরও হুমকি দেয়। বেেত রাজি না হওয়ায় আসামীরা মাহফুজের কাছে দুই লাখ টাকা চাঁদা দাবী করে। বিষয়টি নিস্পত্তির কথা বলায় আসামী করা হয় স্থানীয় ইউপি সদস্য মোঃ মাসুক মিয়াকে। উপজেলা ভূমি অফিস সূত্রে জানা যায়, সরকারি বিধি ও শর্তপূরন সাপেক্ষে অরুয়াইল মৌজার ২২১৩ দাগের ২০ শতাংশ জায়গা (নাল) ভূমিহীন বানু মল্লিককে ৯৯ বছরের জন্য বন্দোবস্ত দেওয়া হয়। বন্দোবস্ত মামলা নং-০৭/২০০৮-২০০৯ খ্রিঃ। একই সময়ে ওই দাগের ১৯ শতাংশ জায়গা বন্দোবস্ত মামলা নং- ০৫/২০০৮-২০০৯ খ্রিঃ এর আদেশ বলে দলিল করে দেয়া হয় আয়েত উল্লাহর ছেলে ভূমিহীন সাইফুল ইসলামকে। সরজমিনে হাজির হয়ে সংশ্লিষ্ট ভূমি অফিসের লোকজন তাদেরকে জায়গার দখল বুঝিয়ে দেন। তারা জায়গা পাওয়ার তিন বছর পর প্রভাবশালী একটি মহলের লোলুপ দৃষ্টি পড়ে সেখানে। অসহায় দরিদ্র ভূমিহীনদের বিরুদ্ধে নানান ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেন তারা। জায়গাটি নিজেদের দখলে নেওয়ার জন্য করতে থাকে নানান ফন্দিফিকির। একের পর এক অভিযোগ করতে থাকে ভূমির উর্দ্ধতন কর্তা ব্যক্তিদের কাছে। কিন্তু চারবারই তদন্ত কর্মকর্তাদের প্রতিবেদন যায় ভূমিহীনদের পক্ষে। তদন্ত প্রতিবেদন প্রদানকারি উপসহকারি ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা (সাবেক) মোঃ অলিউর রহমান ও মোঃ নবী হোসেন (বর্তমান) বলেন, সঠিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই বানু ও সাইফুল ওই জায়গা বন্দোবস্ত নিয়েছে। বানু বলেন, তিন বেলার আহার যোগাড় করতে পারি না। জায়গা ক্রয় করব কোথা থেকে। মারধোরের কোন ঘটনা ঘটেনি। কিছু লোক আমার লীজের জায়গাটি বিক্রি করে দিতে বলেছিল। আমি রাজি হয়নি। মাহফুজকে আমি কখনো চোখেও দেখিনি। কি মামলা হয়েছে তাও জানতাম না। হঠাৎ পুলিশ এসে বলে ফাঁড়িতে চল। অরুয়াইল বাজার কমিটির সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ মিজানুর রহমান বলেন, বানু ও সাইফুল বিধি মোতাবেক জায়গাটি লীজ নিয়েছে। ওই খাস জায়গার সীমানা নিয়ে মাহফুজের সাথে তাদের বাক বিতন্ডা হয়েছে। চাঁদাদাবীর বিষয়টি সম্পূর্ণ মিথ্যা। সরাইল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ আলী আরশাদ বলেন, কেউ অভিযোগ নিয়ে আসলে তা গ্রহন করতে হয়। পরে বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে হয়। মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক (এস আই) আবু বকর সিদ্দিক বলেন, তাদের মধ্যে জায়গা নিয়ে বিরোধ। বানু বন্দোবস্ত নেওয়ার কোন কাগজ দেখাতে পারেনি। চাঁদাদাবীর কোন আলামত পায়নি। মামলার বিষয়ে বাদী মোঃ মাহফুজুর রহমান বলেন, আমি সাড়ে সাত শতক জায়গা ক্রয় করেছি। আমার জায়গায় কিছু খাস ভূমি রয়েছে। বানু সেখানে বালু ফেলে দখল করেছে। আমি তাদের বিরুদ্ধে শুধু জবর দখলের অভিযোগে মামলা করেছি। অন্য কিছু আমার জানা নেই।