সরাইলে ককটেল বিস্ফোরন, গ্রেপ্তার ও ফাঁকা গুলির মধ্য দিয়ে নির্বাচন সম্পন্ন
সরাইল (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধিঃ ভোট কেন্দ্রে ককটেল বিস্ফোরন, গ্রেপ্তার ও পুলিশের ফাঁকা গুলির মধ্য দিয়েই গতকাল সরাইলে সম্পন্ন হয়েছে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন। চরম আতঙ্ক ও উৎকন্ঠায় কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি ছিল অতি নগন্য। শতকরা আট ভাগ মহিলাও ভোট দিতে কেন্দ্রে আসেনি। ভীতিকর অবস্থার মধ্যে ভোট গ্রহনের কাজে দায়িত্ব পালন করেন কর্মকর্তা কর্মচারীরা। অনেক কেন্দ্রে ভোটারদের মারধর করে তাড়িয়ে দিয়েছে স্থানীয় বিএনপি। নির্বাচনে নিরপেক্ষতা অনিয়মরোধ ও আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখতে প্রশাসন সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করেছে। সরজমিনে দেখা যায়, সরাইল উপজেলার নয়টি ইউনিয়নের ৮০টি কেন্দ্রে সকাল আটটা থেকে একযোগে শুরু হয় ভোট গ্রহন। ভোর থেকে হাড় কাঁপানো শীত ও ঘন কুয়াশায় অন্ধকার থাকায় সকাল ১০টা পর্যন্ত অনেক কেন্দ্র ছিল ভোটার শুন্য। এ ছাড়া গত শনিবার রাত ৮টায় সদর ইউনিয়নের উচালিয়া পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে দুটি ককটেল বিস্ফোরন ঘটায় দূর্বৃত্তরা। র্যাব ও পুলিশ অবিস্ফোরিত একটি ককটেল উদ্ধার করে। এ খবর মূহুর্তের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে গোটা সরাইলে। ফলে জনমনে আতঙ্ক, সংশয় ও সন্দেহ সৃষ্টি হয়। গতকাল সকাল সাড়ে আটটায় কুট্রাপাড়া পূর্ব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের পশ্চিম দক্ষিণ পাশের নির্জন স্থান থেকে কয়েকজন যুবক ভোট কেন্দ্রে পরপর তিনটি ককটেল ছুঁড়েছে বলে জানিয়েছেন প্রিসাইডিং কর্মকর্তা মোঃ মোজাম্মেল হক। এ সময় দায়িত্বে নিয়োজিত পুলিশ এক রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুঁড়ে। ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ অবিস্ফোরিত একটি তাজা ককটেল উদ্ধারের পর নিষ্ক্রিয় করে দেয়। এতে স্থানীয় ভোটারদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। উপজেলার কিছু কেন্দ্রে মোটামুটি ভোটার উপস্থিতি থাকলেও বেশীর ভাগ কেন্দ্রই ছিল ফাঁকা। দুপুর ১২টায় চুন্টা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে দেখা যায়, ৪৫০ জন মহিলা ভোটারের মধ্যে একজনও ভোট দিতে আসেননি। চুন্টা এ সি একাডেমিতে ৪০৩ জনের মধ্যে মাত্র ১০জন ভোট দিয়েছেন। দুপুর ১টায় কালিশিমুল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ৯৫৭ জন মহিলার মধ্যে ১১০ জন, পাকশিমুল কেন্দ্রে ১৬০৭ জনের মধ্যে ১২১ জন ও অরুয়াইলে ১০৮৭ জনের মধ্যে মাত্র ৮৯ জন মহিলা ভোট দিয়েছেন। দুপুর ২টায় পাকশিমুল ইউনিয়নের হরিপুর গ্রামের সুমন মুঠোফোনে জানান, তাদের গ্রামের ভোটাররা পরমান্দপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দিতে আসেন। তখন গ্রামের বিএনপি’র লোকজন তাদেরকে মারধর করে কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়। বিকাল ৩টায় উচালিয়া পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে জাল ভোট প্রদান ও সহযোগীতার দায়ে ঢাকার মেরিন কোর্টের সিনিয়র সহকারি জজ মোঃ কামাল হোসেন তিনজন সহকারি প্রিসাইডিং অফিসারকে গ্রেপ্তার করেছেন। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- পরিবার পরিকল্পরা পরিদর্শিকা জোবেদা বেগম, কোহিনুর বেগম ও অরুয়াইল বহুমূখী উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষিকা নাছিমা খাতুন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সরাইর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ এমরান হোসেন। সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার মোঃ আবদুল হাকিম জাল ভোট প্রদানের দায়ে তিনজনকে আটকের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, বিষয়টি তারা কেউ আমাকে অবহিত করেননি। আটকের পর জানতে পেরেছি। এ আসনে প্রার্থী ৭ জন থাকলেও প্রতিদ্ধন্ধিতা ছিল মূলত: দুইজনের মধ্যে। জাতীয় পার্টির এ্যাডভোকেট জিয়াউল হক মৃধা ও স্বতন্ত্র প্রার্থী নায়ার কবীর। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত জিয়াউল হক মৃধা এগিয়েছিল।