সরাইলের প্রধান সড়ক সিএনজি’র দখলে
মোহাম্মদ মাসুদ , সরাইল থেকে
সরাইল অন্নদা স্কুলের মোড় থেকে প্রাতঃবাজার বিএডিসি অফিস পর্যন্ত অর্ধকিলোমিটার সড়ক। এটি সরাইল সদরের একমাত্র প্রধান সরু রাস্তা। প্রধান এ সড়কটি সমগ্র দিনই থাকে সিএনজি অটোরিক্সার দখলে। ফলে স্থানীয় শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ী ও পথচারীদের দূর্ভোগ এখন চরমে। এ সমস্যা সমাধানের জন্য গত তিন বছরে উপজেলা আইন-শৃঙ্খলা সভায় আলোচনা হয়েছে চল্লিশবার। গঠিত হয়েছে তদন্ত কমিটি। সিদ্ধান্তও হয়েছে। দায়িত্ব নিয়েছেন চেয়ারম্যান ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। কিন্তু বাস্তবায়ন আলোর মুখ দেখেনি আদৌ। এ বিষয়ে উপজেলা প্রশাসন এখন একবারেই উদাসীন। সরজমিনে দেখা যায়, অর্ধকিলোমিটার এ সড়কটির প্রস্থ ১০-১২ ফুট। দুই পাশে রয়েছে ব্যক্তি মালিকানাধিন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বিপণী বিতান। রয়েছে ঔষধের দোকান, হোটেল রেস্তোরা ও মার্কেট। উপজেলার প্রধান দুটি হাট বিকাল বাজার ও প্রাত:বাজারে এ সড়কটি দিয়েই যেতে হয়। সড়কটির আশপাশে রয়েছে ৬/৭ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। রয়েছে একাধিক মসজিদ, ব্যাংক ও বীমা অফিস। ফুটপাতে দোকান বসিয়ে দখলে নিয়েছে রাস্তার বিরাট অংশ। এ সড়কে চলাচল করে রিক্সা ও কাঁচামাল বহনকারী পিকআপ ভ্যান ও ট্রাক। তার উপর সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সড়কটির দু’পাশে লাইন ধরে দাঁড়িয়ে থাকে সিএনজি অটোরিক্সা ও কিছু টেম্পু। ফলে নিয়মিত সৃষ্টি হচ্ছে তীব্র যানজট। বাড়ছে দূর্ঘনা। কলেজ ও স্কুল পড়–য়া শিক্ষার্থীদের দূর্ভোগ বেড়েই চলেছে। বাড়ছে শিশু শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের টেনশন। দূর দূরান্ত থেকে বিপণী বিতান, হাটে ও উপজেলায় আসা লোকজনকে কষ্ট ও হয়রানীর শিকার হতে হচ্ছে নিত্যদিন। পথচারী শিক্ষার্থী ও ব্যবসায়ীরা সর্বক্ষন থাকেন যানজট ও সিএনজি আতঙ্কে। অনেক ব্যবসায়ীকে দেখা যায় লাঠি হাতে বসে আছেন। উদ্যেশ্য সিএনজি তাড়ানো। সাধারন মানুষ এ অবস্থা থেকে পরিত্রান চায়। সরকারি লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে বিএডিসি মাঠে ও সরাইল-নাসিরনগর সড়কের পাশে সিএনজি অটোরিক্সা ও টেম্পুর জন্য দু’টি ষ্ট্যান্ড করা হয়েছে। ষ্ট্যান্ড ফেলে তারা দখলে নিয়েছে সড়ক। এ বিষয়ে উপজেলা আইন-শৃঙ্খলা সভায় গত তিন বছরে কমপক্ষে চল্লিশবার আলোচনা ও সিদ্ধান্ত হয়েছে। কার্যকর হয়নি কোন কিছুই। আইন শৃঙ্খলা সভার একাধিক সদস্য বলেন, এখানে সিএনজি চালকদের কাছে উপজেলা প্রশাসন পুরোপুরি ব্যর্থ। পুলিশ না হলে র্যাব দিয়ে ব্যবস্থা নেয়ার কথা শুধু শুনেই গেলাম। বাস্তবতা উল্টো। অজানা কারনে চালকদের কাছে পুলিশ দূর্বল। আর জন প্রতিনিধিরা থাকেন ভোট ভাবনায়। সড়ক সিএনজিদের দখলেই থাকবে। জন সাধারনের কষ্ট লাঘবে কারো মাথা ব্যথা নেই। শ্রমিক নেতা মোঃ ইনু মিয়া বলেন, অধিকাংশ চালক বেআদব। কোন নিয়মনীতিই মানে না তারা। আগের মত যোগ্য নেতাও নেই। তাই এই দূরাবস্থা চলছে। উপজেলা সিএনজি মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদের সভাপতি মোঃ ওয়াশিদ আলী বলেন, কিছু চালকের ক্রুটিবিচ্যুতির কারনে এমনটি হচ্ছে। তারপর রয়েছে পর্যাপ্ত ষ্ট্যন্ড ও জায়গার সমস্যা। সম্পাদক হাজী মোঃ সোনা মিয়া বলেন, সড়ক দখলের বিষয়টি অত্যন্ত কষ্টকর। বিএডসি ষ্ট্যান্ডের অধিকাংশ গাড়ি সড়ক দখল করে দাঁড়িয়ে থাকে। তারা কারো কথা শুনে না। সরাইল পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ আইয়ুব খান বলেন, দীর্ঘ দিনের এ দূর্ভোগে আমার শিক্ষার্থীরা অধিক ক্ষতিগ্রস্থ। সিএনজি’র কারনে তাদেরকে অত্যন্ত কষ্টে এ জায়গা পার হতে হয়। সুযোগে ইভটিজাররা ইভটিজিং করে। কিছু চালকও কৌশলে খারাপ উক্তি ও অঙ্গভঙ্গি প্রদর্শন করে থাকে। মেয়েরা লজ্জায় কথা বলে না। সরাইল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ আলী আরশাদ বলেন, ফুটপাতের যত্রতত্র দোকান এ অবস্থার জন্য অনেকটা দায়ী। আমি মালিক ও শ্রমিক নেতাদের সাথে দ্রুত কথা বলব। প্রয়োজনে গাড়ি গুলো ধরে থানায় নিয়ে আসব। সরাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ এমরান হোসেন বলেন, আমি অচিরেই মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিব।