সরাইলে স্কুল ছাত্রী ধর্ষণ ও হত্যাকারীদের ফাঁসির দাবীতে মানববন্ধন
মোহাম্মদ মাসুদ ,সরাইল থেকে
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে স্কুল ছাত্রী তানিয়াকে ধর্ষণের পর নির্মম ভাবে হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার ও ফাঁসির দাবীতে মানববন্ধন করেছে তার বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। গতকাল সকালে নোয়াগাঁও ইউনিয়নের আঁখিতারা নূরুর রহমান উচ্চ বিদ্যালয়ের সহ¯্রাধিক শিক্ষার্থী স্থানীয় চেয়ারম্যান ও শিক্ষকরা বিদ্যালয়ের পাশের সড়কে এ মানববন্ধন করেছে। মূল আসামীদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে ফাঁসির ব্যবস্থা না করলে পরবর্তীতে আরো কঠোর আন্দোলনের ঘোষনা দিয়েছে শিক্ষার্থীরা। ওদিকে বাদীকে হত্যার হুমকি দিচ্ছে আসামীর স্বজনরা। মানববন্ধনের পরই আসামী পক্ষের কিছু লোক বাড়িতে প্রবেশ করে তানিয়ার বাবা বাদী আবদুল বারেককে লাঞ্ছিত করেছে। বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, কাটানিশার গ্রামের আবদুল বারিকের কন্যা তানিয়া। এ বছরের ৫ জানুয়ারী তানিয়া এ বিদ্যালয়ে ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি হয়। বিদ্যালয়ের রেজিষ্ট্রার অনুযায়ী তাঁর জন্ম ১৯৯৯ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারী। সে শান্তশিষ্ঠ্য ও মেধাবী ছিল। নিয়মিত বিদ্যালয়ে আসত। তানিয়ার পারিবারিক সূত্র জানায়, বিদ্যালয়ে আসা যাওয়ার পথে একই গ্রামের রহমত আলীর ছেলে জুম্মান (১৮) ও শুক্কুর আলীর ছেলে সাদ্দামের (২৫) নেতৃত্বে কিছু বখাটে প্রায়ই তাকে উত্যক্ত করত। মাঝে মধ্যে কু-প্রস্তাব দিত। এতে রাজি হয়নি তানিয়া। গত ১৯ নভেম্বর রাতে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে ঘর থেকে বের হয় তানিয়া। পূর্ব থেকে ওত পেতে থাকা বখাটেরা তাকে ধরে নিয়ে যায় বাড়ির পাশের খালি মাঠে। রাতে আত্মীয় স্বজন ও পরিচিত জনদের বাড়িতে খুঁজ করে তাকে পাওয়া যায়নি। তবে জুম্মান ও সাদ্দামকে গভীর রাতে এলামেলো ভাবে সড়কে ঘুরতে দেখেছে তানিয়ার বাবা ও ভাই। ২০ নভেম্মর বিকাল সাড়ে তিনটায় পাশের মাঠে বিব¯্র অবস্থায় তানিয়ার লাশ পড়ে থাকতে দেখে তার সহপাঠিরা। সন্ধায় পুলিশ তানিয়ার লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসেন। রাতেই তানিয়ার বাবা আঃ বারেক বাদী হয়ে জুম্মান ও সাদ্দামকে আসামী করে একটি মামলা দায়ের করেন। পুলিশ জুম্মানের দুই সহযোগী উজ্জ্বল (২৩) ও রুবেল (২৫) নামের দুই যুবককে গ্রেপ্তার করেছে। ওই দুই আসামীকে রিমান্ডে আনেনি পুলিশ। ঘটনার বিশ দিন পেরিয়ে গেলেও মূল আসামীদের গ্রেপ্তার করতে পারছে না পুলিশ। মানববন্ধনে অংশগ্রহনকারী বিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্রী রিপা, সপ্তম শ্রেণীর কাজী স্মৃতি, আলহাজ্ব চোধুরী, অষ্টম শ্রেণীর নাছরিন ও বায়েজিদ জানায়, এমন পৈশাচিক বর্বর ও জঘন্য ঘটনা এই এলাকায় অতীতে কখনো ঘটেনি। আমাদের সহপাঠি তানিয়াকে ধর্ষণ ও হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও ফাঁসির দাবী জানাচ্ছি। অন্যথায় আমরা আরো কঠোর আন্দোলনে যেতে বাধ্য হব। মানববন্ধনে দাঁড়িয়ে তানিয়ার বড় ভাই মানজু জানায়, প্রধান আসামী জুম্মানের চাচা মোহাম্মদ আলী সহ তার স্বজনরা গ্রামের বিভিন্ন জায়গায় প্রকাশ্যে বলে বেড়াচ্ছেন, বাদী বারেককে হত্যা করলেই সব ঝামেলা শেষ হবে। নতুবা যন্ত্রনা বেড়েই চলবে। তানিয়ার বাবা বারেক জানান, মানববন্ধনের ১০/১৫ মিনিট পর গ্রেপ্তারকৃত আসামী উজ্জলের বাবা ইকবাল হোসেন, বড় ভাই আক্তার হোসেন ও চাচাত ভাই মনির হোসেন উত্তেজিত হয়ে বাড়িতে প্রবেশ করে তাকে লাঞ্ছিত করেছে। প্রধান শিক্ষক মোঃ গোলাম মোস্তফা বলেন, নৃশংস ভাবে আমার ছাত্রীকে হত্যা করা হয়েছে। আমি দায়ী বখাটেদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও ফাঁসি চাই। নোয়াগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু মুসা উসমানী মাসুক বলেন, জঘন্য এ ঘটনায় জড়িত আসামীদের ফাঁসি না হলে সমাজে অপরাধ প্রবনতা রোধ হবে না। সরাইল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ আলী আরশাদ বলেন, আসামীদের গ্রেপ্তারের জন্য আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা ও অভিযান অব্যাহত আছে। বাদীকে কেউ হত্যার হুমকি দিয়ে থাকলে জিডি করলেই ব্যবস্থা নিব।