Main Menu

সরাইলে মেঘনার ভাঙ্গনের কবলে চারটি গ্রাম, হুমকির মুখে ১৩‘শ পরিবার

+100%-

মোহাম্মদ মাসুদ : বর্ষার পানি বৃদ্ধির সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মেঘনার ভাঙ্গন। দিশেহারা হয়ে পড়েছে সরাইল উপজেলার অরুয়াইলের চার গ্রামের মানুষ। নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে মসজিদ, মাদ্রাসা, ঈদগাহ মাঠ ও কবর স্থান। বিলীন হচ্ছে গ্রামের শত শত বিঘা আবাদী জমি। ভাঙ্গনের কবলে পড়ে অনেকে মৃত্যু উপত্যকা থেকে  ফিরে এসেছে। সর্বস্ব হারিয়ে গ্রাম ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছে শতাধিক অসহায় দরিদ্র পরিবার। কোন ভাবেই থামছে না ভাঙ্গন। হুমকির মধ্যে দিনাতিপাত করছে ১৩’শ পরিবার। সরকারি কোন ব্যবস্থার প্রহর গুনছে ভুক্তভোগী গ্রামবাসী। রবিবার দুপুরে সরজমিনে ঘুরে দেখা যায়, মেঘনা পাড়ের রাজাপুর, কাকুরিয়া, চরকাকুরিয়া ও সিঙ্গাপুর গ্রামের উত্তর পশ্চিম দিকে দুই কিলোমিটার এলাকা জুড়ে ভাঙ্গন অব্যাহত রয়েছে। নদী গর্ভে বিলীন হচ্ছে ফসলি জমি, খেলারমাঠ, কবর স্থান ও ঘরবাড়ি। গ্রামের বাসিন্ধাদের মধ্যে বিরাজ করছে হতাশা। নদী কোন সময় গ্রাস করে ফেলে বসত ঘর ভিটেমাটি এমন আতঙ্ক কুড়ে খাচ্ছে গ্রামবাসীকে। মাটির বস্তা ও বাঁশের খুঁটি দিয়ে বাড়িঘর রক্ষায় ব্যস্ত গ্রামের নারী পুরুষ। যাদের জমি আছে তারা গ্রামের দক্ষিণ পূর্ব দিকে নতুন করে বাড়ি বাঁধছেন। ভিটেমাটিহীনরা গ্রাম ছেড়ে পার্শ্ববর্তী জেলা কিশোরগঞ্জ, কুলিয়ারচর, বাজিতপুর, মাধবদি, সিলেট ও চট্রগ্রামে গিয়ে ক্ষুদ্র ব্যবসা করে যাযাবর জীবন যাপন করছেন। গ্রাম ঘেষা মেঘনার এই স্থানটি চারটি নদীর মোহনা। ভৈরব থেকে প্রবাহিত মেঘনা, সিলেট থেকে প্রবাহিত ধলেশ্বর, বাজিতপুর থেকে প্রবাহিত কুলা ও কুলিয়ারচর থেকে প্রবাহিত কালি নদী। ফলে এখানে সব সময় পানির তোড় ও ঢেউয়ে থাকে প্রবলগতি। যাত্রী ও মালবাহী ট্রলার, ষ্টীমার প্রায় সময় এখানে নিমজ্জিত হওয়ার ঘটনা ও ঘটে। আসিম মিয়ার স্ত্রী আল্লাদি বেগম (৪০) স্মৃতিচারন করে বলেন, গত বছর নদীতে গোসল করতে গেলে উপর থেকে মাটি পড়ে আমাকে চাপা দেয়। নিশ্চিত মৃত্যু জেনে আল্লাহকে ডাকছি। আমার অবুঝ শিশু পাড়ে দাঁড়িয়ে হঠাৎ আমাকে না দেখায় চিৎকার শুরু করে। গ্রামের লোকজন দৌড়ে এসে কোদাল দিয়ে মাটি সরিয়ে আমাকে উদ্ধার করেন। দুঃসহ সেই স্মৃতি আজও তাড়া করে আমাকে। রাজাপুর গ্রামের বাসিন্ধা অরুয়াইল ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল হাকিম (৫৩), আবদুল মজিদ (৭৫), আবদুল বাছির (৫৭), মোঃ শাহের উদ্দিন (৬০) ও বাচ্চু মিয়া (৭০) জানান, ৪২ বছর পূর্বে বর্তমান গ্রাম থেকে দেড় কিলোমিটার পশ্চিমে বর্তমান মেঘনার মধ্যবর্তী  স্থানে ছিল রাজাপুর ও কাকুরিয়া গ্রাম। রাজাপুর কেন্দ্রিয় জামে মসজিদ নামে একটি মসজিদ ছিল। বিশাল একটি মাদ্রাসা ছিল। এক একর জায়গার উপর একটি ঈদগাহ মাঠ ছিল। পুরো গ্রামের জন্য দুই একর পরিমান একটি কবরস্থান ছিল। সব গিলে ফেলেছে মেঘনা। এ বছর ভাঙ্গনের কবলে পড়ে গ্রাম ছেড়ে চলে গেছেন বদিউজ্জামান, হেলাল, জামাল, আইবুর, সাত্তার মিয়া, জলিল, এন্নাছ, আকবর, শিরু মিয়া, মনু মিয়া, মন্নর আলী, জুরি মিয়া, সোনা মিয়া, মুসলিম মিয়া, এলাই মিয়া, মলাই মিয়া, জামির মিয়া, মন্তাজ আলী সহ অনেকে। বৃদ্ধ আবদুল মজিদ বলেন, আমি এ পর্যন্ত চারবার বাড়ি বেঁধেছি। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ জাকির হোসেন ভাঙ্গন এলাকা সরজমিনে পরিদর্শন করে বলেন, ভাঙ্গন বিশাল। পানির কারনে বর্তমানে ভালভাবে দেখা যাচ্ছে না। চার গ্রামের সহস্রাধিক পরিবার বড় ধরনের ক্ষতির সম্মূখীন। মেঘনা নদীর এ স্থানে ভাঙ্গন রোধ প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে কমপক্ষে ২৫/৩০ কোটি টাকা ব্যয় হবে। এখানে কোন মেইল ফ্রাক্টরী নেই। সরকার এখান থেকে কোন রাজস্ব পাবে না। তারপর ও জনস্বার্থে রাজনৈতিক নেতাদের হস্তক্ষেপে প্রকল্প বাস্তবায়ন হতে পারে। আমরা সহযোগীতা করতে প্রস্তুত।






Shares