সরাইল খাদ্য গুদামের অনিয়ম তদন্তে জেলা প্রশাসন।। বস্তা সরিয়ে ফেলার অভিযোগ
মোহাম্মদ মাসুদ, সরাইল : জেলা প্রশাসকের নির্দেশে গতকাল সোমবার সরাইল খাদ্য গুদামের জব্দকৃত ১৪০১ বস্তা আতপ চাউলের গুনগত মান তদন্ত করেছেন এ ডি সি (শিক্ষা ও উন্নয়ন) রিপন চাকমা। তদন্তকালে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপস্থিত ছিলেন। গুদামে প্রবেশ করেই বস্তা সরিয়ে ফেলার অভিযোগ করেন ইউএনও। গুদামে রক্ষিত ৬২৮ বস্তা বিবর্ণ ও দূর্গন্ধযুক্ত আতপ চাউলকে কবুল বলেছেন খাদ্য কর্মকর্তা। রাতের অন্ধকারে ওই চাউল গুদামে ঢুকানোর দায় স্বীকার করেছেন অকপটে। খাদ্য কর্মকর্তারা এ ডি সি কে বলেছেন, ভুল হয়ে গেছে স্যার। ইউএনও’র দফতর সূত্রে জানা যায়, খাদ্য গুদামের বিভিন্ন অনিয়ম ও দূর্নীতির বিষয়ে দৈনিক মানবজমিন সহ স্থানীয় বেশ কিছু গণমাধ্যমে একাধিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। নিয়ম থাকলেও শুরু থেকেই খাদ্য পরিদর্শকের গুনগত মানের সনদ ছাড়াই গ্রহন করছেন চাউল। চাউলের গুনগত মান তদারকির জন্য ইউএনও’র কার্যালয়ের একজন প্রতিনিধি নিয়োগ করা হয়। কিছু দিন পর রহস্যজনক কারনে ওই প্রতিনিধিকে ফাঁকি দিতে থাকেন গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। ইচ্ছেমত তারা দূর্গন্ধযুক্ত বিবর্ণ চাউল দিনে ও রাতের অন্ধকারে গুদামে ঢুকাতে থাকেন। গত ২৩ জুলাই গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গুদামে হাজির হন নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ এমরান হোসেন। হাতেনাতে ধরা পড়ে যায় নিম্ন মানের চাউল গ্রহনের ঘটনাটি। ১৭২ বস্তা সহ ট্রাক ফিরিয়ে দেন। কিন্তু ততক্ষনে নামিয়ে ফেলেন প্রত্যয়ন পত্র ছাড়াই ২২৮ বস্তা চাউল। গুদামে প্রবেশ করেন ইউএনও। অর্ধশতাধিক বস্তা পরীক্ষা করেন। দূর্গন্ধযুক্ত, বিবর্ণ নিম্ন মানের চাউল দেখে হতাশ হন তিনি। ইউএনও এবং উপস্থিত লোকজনের কোন প্রশ্নের সদোত্তর দিতে পারেননি খাদ্য কর্মকর্তা ও গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। তাৎক্ষনিক ১৪০১ বস্তা চাউল জব্দ করেন ইউএনও। নমুনা সহ এ বিষয়ে প্রতিবেদন পাঠিয়ে দেন জেলা প্রশাসকের নিকট। জেলা প্রশাসক গুদামে সংরক্ষিত ১৪০১ বস্তা চাউলের গুনগত মান তদন্ত করে প্রতিবেদন প্রেরনের জন্য গত ৪ আগষ্ট ৩৭৩/১(৩) নং স্মারকে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও উন্নয়ন) কে পত্র দেন। এর প্রেক্ষিতে গতকাল সকালে এডিসি তদন্ত করেছেন। নির্বাহী কর্মকর্তা ও প্রত্যক্ষদর্শীদের অভিযোগ গুদাম কর্মকর্তা নিজেকে রক্ষার জন্য নিম্নমানের চাউল গুলো কৌশলে অন্যত্র সরিয়ে নিয়েছেন। কায়দা করে ভাল বস্তার স্তুপ দিয়ে আড়াল করেছেন দূর্গন্ধযুক্ত চাউলের বস্তাগুলো। তারপরও পাওয়া গেছে বিবর্ণ নিম্নমানের চাউল। গত ২৩ জুলাই ২০১৩ সালের কোন প্রত্যয়ন পত্র সাংবাদিকদের দেখাতে পারেননি গুদাম কর্মকর্তা। বলেছেন, খাদ্য পরিদর্শক আমি বললেও আসেন না। ব্যস্ত থাকেন। উনার সময় নেই। তদন্তের খবর পেয়ে এ সময়ের মধ্যে কিভাবে প্রত্যয়ন পত্র তৈরী করলেন গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ? উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও খাদ্য ক্রয় কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ এমরান হোসেন বলেন, তদন্তের খবর পেয়ে জব্দকৃত ১৪০১ বস্তা চাউল অন্যত্র সরিয়ে নিয়েছে গুদাম কর্মকর্তা। ২৩ জুলাইয়ের পর থেকে আজ পর্যন্ত গুদামে শতাধিক টন চাউল ঢুকিয়েছেন। আমাকে কিছুই জানাননি তারা। আমার প্রতিনিধিকে ও আর ডাকছেন না। সরাইল উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো: শফিকুর রহমান বলেন, চাউল গ্রহনের সময় ক্রয় কমিটির সভাপতি ইউএনও স্যারকে জানানোর জন্য ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আসাদুজ্জামানকে বলা আছে। কি কারনে উনাকে জানানো হচ্ছে না তা আমি খতিয়ে দেখছি। |