Main Menu

সরাইলে ভূয়া সাংবাদিকের দৌরাত্বে অতিষ্ঠ সাধারন মানুষ

+100%-

মোহাম্মদ মাসুদ, সরাইল প্রতিনিধি : নামসর্বস্ব আন্ডার গ্রাউন্ডের পত্রিকার ভূয়া সাংবাদিকদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলবাসী। এদের ব্ল্যাকমেইলিংয়ের শিকার হচ্ছেন এখানকার সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন দফতরসহ অর্থলগ্নিকারী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। জনপ্রতিনিধিসহ এমনকি সাধারণ মানুষও এদের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছে না। এরা তুচ্ছ বিষয়ে বানোয়াট সংবাদ পরিবেশনের নাম করে হাতিয়ে নিচ্ছে হাজার হাজার টাকা।
জানা গেছে, সরাইলে সম্প্রতি ভূয়া সাংবাদিকদের দৌরাত্ম বেড়ে গেছে। এরা আন্ডারগ্রাউন্ড পত্রিকা, অখ্যাত অনলাইন পত্রিকা কিংবা নাম সর্বস্ব পত্রিকার কার্ড গলায় ঝুলিয়ে কোমরে ক্যামেরা সাটিয়ে সারাদিন ভূমি অফিস, পিআইও অফিস, সাব রেজিষ্ট্রি অফিস, সরকারি হাসপাতাল, প্রাইভেট কিনিক, এনজিও অফিস এবং বিদ্যুৎ অফিসে গিয়ে তদবির বাণিজ্য করে বেড়ায়। আবার অনেকের কাছে তিন-পাঁচটি বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থার কার্ড আছে। যাদের নাকি মানুষের পাঁচটি মৌলিক অধিকার সম্পর্কে সম্মক ধারণা নেই। তারাই হলো মানবাধিকার কর্মী। এরা গাড়িতে আগে পেছনে মানবাধিকার কর্মী স্টীকার লাগিয়ে সারা সরাইলে দাপিয়ে বেড়ায়। এরা বিভিন্ন অফিসে গিয়ে ভিজিটিং কার্ড দিয়ে পরিচয় পর্ব শুরু করেন। পরে ইংরেজীতে কিছু বলার চেষ্টা করে। যা অধিকাংশ ইংরেজী ভুল বলে। এমনকি শুদ্ধ বাংলাও তারা বলতে পারে না। এদের কারণে প্রকৃত সংবাদকর্মীরা প্রতিনিয়ত বিব্রতকর অবস্থার মধ্যে পড়ছেন। এদের মধ্যে কিছু মৌসুমী (সিজনাল) সাংবাদিকও রয়েছে। এমনকি তারা প্রকৃত সাংবাদিকদেরও হয়রানি করছে।
পাকশিমুল ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান কাজী মোজাম্মেল হক জানান, ‘রহমান’ নামে এক ব্যক্তি গাড়িযোগে দলবল নিয়ে মাঝে মধ্যে এখানে আসেন। তারা নামসর্বস্ব কিছু পত্রিকার সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে নানাভাবে আমাদের হয়রানি করে যাচ্ছেন।
সরাইল উপজেলা ৫০ শয্যা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একাধিক চিকিৎসা কর্মকর্তা জানান, ‘হামজা’ নামে এক কথিত সাংবাদিকের অত্যাচারে আমরা অতিষ্ঠ। সে নিজেকে আন্ডারগ্রাউন্ডের কয়েকটি পত্রিকার সাংবাদিক দাবি করে নানাভাবে হয়রানি করছে।  
অরুয়াইল ইউনিয়নের ধামাউড়া গ্রামের মো. তাজু মিয়া জানান, কিছুদিন আগে ‘আলী’ নামে এক ভূয়া সাংবাদিক গ্রামের বেশকিছু নারীপুরুষকে হুমকি ধমকি দেয়। সে নিজেকে মানবাধিকার কর্মীসহ তিনটি নাম সর্বস্ব পত্রিকার সাংবাদিক পরিচয় দেয়। একপর্যায়ে তাকে আটকের পর গ্রামবাসী গণধোলাই দিয়ে ছেড়ে দেয়।
কালীকচ্ছ ধর্মতীর্থ গ্রামের বাচ্চু মিয়া জানান, ‘শিফলু’ নামে কথিত এক সাংবাদিকের অত্যাচারে আমরা অতিষ্ঠ। সে নিজেকে পাঁচটি নামসর্বস্ব পত্রিকার সাংবাদিকসহ মানবাধিকার কর্মী বলে পরিচয় দেয়। গলানিয়া গ্রামের শওকত আলী জানান, এখানে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সামান্য ঝগড়া হলেই নামসর্বস্ব পত্রিকার সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মী পরিচয় দিয়ে কয়েকজন দৌড়ে আসে। তারা গ্রামের সহজ সরল মানুষকে বেকায়দায় ফেলে হাতিয়ে নেয় টাকা।
সরাইল প্রেসক্লাবের অর্থ বিষয়ক সম্পাদক ও দৈনিক মানবজমিন পত্রিকার স্থানীয় প্রতিনিধি মাহবুব খান বাবুল জানান, এসব কথিত সাংবাদিকদের অনৈতিক কার্যকলাপে এখানকার প্রকৃত সংবাদকর্মীরা নানা প্রশ্নের সম্মূখীন হচ্ছেন।  
সরাইল সদরের একাধিক জনপ্রতিনিধি জানান, যারা কিছুদিন আগেও নানা অপরাধের সাথে জড়িত ছিল, এখন তারা নিজেদের নামসর্বস্ব পত্রিকার সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে কৌশলে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে টাকা।
সরাইল প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মো. বদর উদ্দিন জানান, সম্প্রতি সরাইলের বিভিন্ন এলাকায় নামসর্বস্ব কিছু পত্রিকার কার্ড গলায় ঝুলিয়ে নিজেকে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে কয়েকজন নানাভাবে প্রতারণা করে আসছে। আমাদের কাছে এই ধরণের অভিযোগ ভূক্তভোগী মানুষ প্রায়ই নিয়ে আসেন। তিনি বলেন, প্রেসক্লাবের পক্ষ থেকে অচিরেই এদের ব্যাপারে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হবে।
সরাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আনিসুজ্জামান খান জানান, সাংবাদিকতা হলো একটি মহান পেশা। যারা এই পেশার নাম ভাঙ্গিয়ে সাধারণ মানুষকে হয়রানি করবে, অভিযোগ পেলে অবশ্যই বিধি মোতাবেক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 






Shares