প্রতিবেদক : ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলের তিতাস নদীতে নাব্যতা সংকটের কারনে নৌচলাচল ব্যাহত হচ্ছে। নদীর অরুয়াইল ইউনিয়নের রানীদিয়া থেকে পাকশিমুল ইউনিয়নের জয়ধরকান্দি পর্যন্ত নদীর প্রায় ১০ কিলোমিটার অংশে নদী শুকিয়ে চর পড়ায় এই অবস্থার সৃষ্টি হয় । নদী শুকিয়ে যাওয়ায় এলাকায় শত শত নৌযান ঘাটে বাঁধা রয়েছে। এতে বেকার হয়ে গেছে এলাকার প্রায় ৩ হাজার নৌ শ্রমিক। এলাকাবাসী জানান, সরাইল উপজেলার তিতাস নদীর তীরবর্তী অরুয়াইল-পাকশিমুল এলাকায় গড়ে উঠেছে অঘোষিত একটি নৌবন্দর। এখানে রয়েছে স্টীলের তৈরী প্রায় ৪ শতাধিক মালবাহী বিভিন্ন ধরনের নৌযান। এসব নৌযানে কাজ করেন এলাকার প্রায় ৩ হাজার শ্রমিক। এসব নৌযান দিয়ে মূলত পাথর, কয়লা, লোহা জাতীয় পদার্থ, ইট ইত্যাদি ভারী মালামা পরিবহন করা হয়। অরুয়াইল ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আসিফ ইকবাল খোকন বলেন, বর্তমানে তিতাস নদীর নদীর অরুয়াইল ইউনিয়নের রানীদিয়া থেকে পাকশিমুল ইউনিয়নের জয়ধরকান্দি পর্যন্ত নদীর প্রায় ১০ কিলোমিটার অংশ শুকিয়ে যাওয়ায় ভারী নৌযান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। তিতাস নদীর বিভিন্ন অংশে ভেসে উঠেছে প্রায় অর্ধশতাধিক চর। ফলে এলাকার নৌ-শ্রমিকরা বেকার হয়ে গেছে। অরুয়াইল ষ্টীল বডি নৌযান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাজী মোঃ রেহান উদ্দিন বলেন, তাদের সমিতির অধীনে ৪শতাধিক ষ্টীলের বিভিন্ন ধরনের নৌযান আছে। এসব নৌযানের ধারণ ক্ষমতা তিনশ’ থেকে পাঁচশ’ মেট্টিক টন। এতে প্রায় তিন হাজার শ্রমিক কাজ করেন। তাছাড়া পার্শ্ববর্তী পাকশিমুল এলাকার সমিতির অধীনে রয়েছে অর্ধশতাধিক নৌযান। এসব নৌযান থেকে সরকার প্রতিবছর কোটি টাকা রাজস্ব আয় করে। তিনি বলেন, তিতাস নদীর নদীর অরুয়াইল ইউনিয়নের রানীদিয়া থেকে পাকশিমুল ইউনিয়নের জয়ধরকান্দি পর্যন্ত নদীর প্রায় ১০ কিলোমিটার অংশে নদী শুকিয়ে ছোট বড় অন্তত ৫০টিরও বেশি চড় দেখা দেয়ায় বর্তমানে ভারী নৌযান চলাচল করতে পারছেনা। তিনি বলেন, প্রতিবছর বর্ষার পানি নেমে যাওয়ার পর পৌষ মাস থেকে বৈশাখ পর্যন্ত তিতাস নদীতে নৌযান চলাচল একেবারে বন্ধ হয়ে যায়। নৌযান মালিক অরুয়াইল ইউনিয়নের রাণীদিয়া গ্রামের বাসিন্দা মোঃ কামাল মিয়া বলেন, তিনি প্রায় ৮০ লাখ টাকা ব্যায়ে তিনি একটি ষ্টীল তৈরী নৌকা নির্মান করেছেন। যার ধারণ ক্ষমতা পাঁচশ মেট্টিক টন। এই নৌকা দিয়ে শ্রমিকের বেতন বাদে মাসে তার প্রায় দেড় লাখ টাকা আয় হতো। বর্তমানে তিতাস নদীর নাব্যতা সংটের কারণে নৌকাটি চলাচল করতে পারছেনা। এ ব্যাপারে অরুয়াইল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ মিজানুর রহমান বলেন,তিতাস নদীতে দীর্ঘদিন ধরে খনন হয়নি। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোন উদ্যোগও নেই। ফলে তিতাস নদীর নদীর অরুয়াইল ইউনিয়নের রানীদিয়া থেকে পাকশিমুল ইউনিয়নের জয়ধরকান্দি পর্যন্ত নদীর প্রায় ১০ কিলোমিটার অংশে বিভিন্ন অংশে একের পর এক চর দেখা দিচ্ছে। তিনি বলেন নদীর বিভিন্ন অংশ শুকিয়ে যাওয়ায় বছরের ৫মাস ( শুষ্ক মৌসুমে) নৌযান চলাচল একেবারে বন্ধ থাকে। এ ব্যাপারে পাকশিমুল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কাজী মোজাম্মেল হক বলেন, নদী খনন না করায় পলি পড়ে বর্তমানে তিতাস নদীর অনেকাংশ ভরাট হয়ে গেছে। এতে করে ভারী নৌযান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে এলাকার নৌশ্রমিকরা বেকার হয়ে গেছে। তিনি বলেন, জরুরী ভিত্তিতে তিতাস নদী খনন করা প্রয়োজন। এ ব্যাপারে সরাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আনিসুজ্জামান খান বলেন, তিতাস নদী খননে প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তাছাড়া স্বেচ্ছাশ্রমে নদী খননে এলাকার লোকদের উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে। |