পঁচিশ বছর একই স্কুলে ।। ডিউটি শুধু স্বাক্ষর করা
মোহাম্মদ মাসুদ , সরাইল (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) থেকেঃ সরাইলের তেরকান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ছায়েদুর রহমান। বাড়ি থেকে স্কুলের দূরত্ব মাত্র ১৫ গজ। তাই ইচ্ছেমত আসেন ও যান। পঁচিশ বছর ধরে তিনি এ স্কুলে আছেন। ফাঁকে তিনি দেড় বছর ছিলেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক। ইচ্ছেমত করেছেন লুটপাট। ভাগ দিয়েছেন কমিটিকে। ছিলেন একেবারেই নিরাপদ। ক্লাশ করতে হয়নি তার। মোড়ল সেজে শুধু লাঠি গুড়িয়েছেন সহকারিদের উপর। সকাল নয়টায় স্কুলে এসে কোন রকমে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করেন। তার পর চলে যান ব্যাক্তিগত কাজে। চলে আড্ডা ও হোটেল রেস্তরায় চা পান। কখনো সালিস কারক। কখনো কৃষক। মন চাইলে বিকেল বেলা স্কুলে যান। না চাইলে আর ফিরে ও তাকান না। শিক্ষার মান অত্যন্ত নিম্ন। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ ছাইদ স্যার মাঝে মধ্যে ক্লাশে আসেন। স্কুলে ও কম দেখি। নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট স্কুল সংস্কারের ৩০ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে আবেদন করেছেন গ্রামের জনৈক ব্যক্তি। সরেজমিনে দেখা যায়, বিদ্যালয়ের প্রতিরক্ষা দেওয়াল সংলগ্ন স্থানে গ্রীণ লিভ ইসলামিক ইন্সটিটিউট নামের একটি কিন্ডার গার্টেন স্কুল। সেখানে পড়ছে শতাধিক শিক্ষার্থী। অফিসের সামনে ছয় ফুট উঁচু একটি খুঁটিতে কোন রকমে ঝুলিয়ে দেয়া হয়েছে জাতীয় পতাকা। সামনে বাঁশ বাগান। গ্রামের লোকজনের চলাচলের রাস্তা স্কুলের মাঠ দিয়ে। উত্তর পাশে রয়েছে একটি পুরাতন জরাঝির্ন টিনশেড ঘর। দরজা জানালা ভাঙ্গা। সকল সহকারি শিক্ষক শিক্ষিকারা জানান, গত এক বছরের মধ্যে স্কুলে কোন সংস্কার কাজ হয়নি। বিদ্যালয়ের অফিস সূত্রে জানা যায়, দুই শিপটে মোট শিক্ষার্থী ৫’শ ৯ জন। সকালে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীতে ৩‘শ ২ জন। দুপুরে দ্বিতীয় শিপটে তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণীতে ২‘শ ৭ জন। মোট শিক্ষক ৮ জন। দুই জন পুরুষ ও ছয় জন মহিলা। প্রধান শিক্ষিকা সানন্দা দে গত ১ এপ্রিল যোগদান করেছেন। এতদিন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেছেন সহকারি শিক্ষক ছায়েদুর রহমান। গত বুধবার সকালে তাকে স্কুলে পাওয়া যায়নি। ৯টায় এসে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করে প্রধান শিক্ষিকাকে কিছু না বলেই চলে গেছেন। অথচ দুই শিপটেই তার ক্লাশ রয়েছে। দুপুর ১টায় রিপোর্টারদের কথা শুনে তিনি দৌড়ে আসেন স্কুলে। ক্লাশ ফাঁকি দিয়ে আপনি বাহিরে কেন ? এমন প্রশ্নের উত্তরে ছাইদুর রহমান বলেন, আমার একটা বাচ্চাকে আনতে গিয়েছিলাম। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গ্রামের একাধিক অভিভাবক বলেন, কমিটির সভাপতি ও ছাইদুর রহমান মিলে ইচ্ছেমত স্কুল চালাচ্ছেন। কোন নিয়ম নীতির তোয়াক্কা করছেন না। ছাইদুর রহমান এখানে যোগদানের পর থেকেই খাতায় স্বাক্ষর করে চলে যান। দিনের বেশীর ভাগ সময় তিনি ব্যস্ত থাকেন ব্যক্তিগত কাজে। প্রভাবশালী হওয়ায় ভয়ে লোকজন মুখ খুলার সাহস পায় না। তাই অনিয়ম করেই পঁচিশ বছর কাটিয়ে দিয়েছেন। তার ডিউটি শুধু হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করা। আর কমিটির লোকজনকে ম্যানেজ করে বিদ্যালয়ের সরকারি টাকা লুটপাট করা। সম্প্রতি সংস্কার কাজের ৩০ হাজার টাকা কোন কাজ না করেই আত্মসাৎ করে ফেলেছেন। এ বিষয়ে তার বিরুদ্ধে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন জনৈক গ্রামবাসী। প্রধান শিক্ষিকা সানন্দা দে বলেন, আমি সদ্য যোগদান করেছি। টাকা আত্মসাতের বিষয়ে কিছুই জানি না। তবে গতকাল ও বুধবারে তিনি স্বাক্ষর করে আমাকে কিছু না বলেই কোথায় যেন চলে গেছেন। বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি মোঃ ফরিদ উদ্দিন মৃধা বলেন, ছাইদুর রহমান বৃদ্ধ লোক। তাই খুব একটা কড়াকড়ি করি না। তবে জীবনের শেষ সময়টাতে স্কুলে ফাঁকি না দিয়ে ভাল ভাবে কাজ করতে বলেছি। টি ও স্যারের নির্দেশে কিছু দিন পূর্বে সংস্কার কাজের কিছু টাকা উত্তোলন করেছি। বৈদ্যুতিক লাইন টানা , বেঞ্চ তৈরী ও আলমিরা ক্রয় করব। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ তৌফিকুল ইসলাম বলেন, টাকা আত্মসাতের একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। শিক্ষকের স্কুল ফাঁকি সহ অন্যান্য অনিয়মের তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা নিব। অভিযুক্ত শিক্ষক ছায়েদুর রহমান বলেন, স্বাক্ষর করে চলে যাওয়া অন্যায়। ভবিষ্যতে আর এমনটি হবে না। সংস্কার কাজের টাকা স্কুলের একাউন্টে আছে। হিসাব নাম্বার আমার জানা নেই। |
« মিতালীর তিন দিন ব্যাপি বৈশাখী মেলা সমাপ্ত (পূর্বের সংবাদ)