সরাইল:: হাইওয়ে পুলিশের চাঁদাবাজি- প্রতিবাদে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে অবরোধ, ৬ কিলোমিটার দীর্ঘ যানজট



মোহাম্মদ মাসুদ,সরাইল :: সরাইলে হাইওয়ে পুলিশের নিয়মিত চাঁদাবাজি, চালকের সাথে দূর্ব্যাবহার ও মারধরের প্রতিবাদে মহাসড়ক অবরোধ করেছে ট্রাক-সিএনজি অটোরিকশার শ্রমিকরা।
২৪শে মার্চ বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের সরাইলের বিশ্বরোড মোড়ে এ ঘটনা ঘটেছে। অবরোধের কারনে সড়কের তিন দিকে ৬ কিলোমিটার যানজটের সৃষ্টি হয়।
ভুক্তভোগী শ্রমিক ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, সরকারি সিদ্ধান্ত হচ্ছে মহাসড়কে সিএনজি অটোরিকশা চলাচল নিষিদ্ধ। স্থানীয় লোকজনের সুবিধার কথা বিবেচনা করে জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসন সরাইল-নাসিরনগর সড়কের কুট্রাপাড়া মোড় থেকে বিশ্বরোড মোড় পর্যন্ত মাত্র আধা কিলোমিটার সড়কে অটোরিকশা চলাচল শিথিল করেছে। এ সুযোগে সরাইল থানা ও বিশ্বরোড হাইওয়ে পুলিশ বিশেষ কায়দায় টুপাইস কামিয়ে মহাসড়কে অটোরিকশা চলাচলের সুযোগ করে দিয়েছে। ফলে বিশ্বরোড থেকে আশুগঞ্জ ও কুট্রাপাড়া মোড় থেকে মাধবপুর পর্যন্ত মহাসড়কে হরহামেশা চলছে অটোরিকশা। তবে এ সুযোগ সবার জন্য নয়। যারা মাসিক চাঁদা দিবে শুধু তাদের জন্য। অন্যরা নিয়মিত ফেঁসে যাচ্ছেন পুলিশের জালে। কেউ নগদ ২-৫ হাজার টাকা দিয়ে ছাড়া পাচ্ছেন। আবার অনেকের গাড়ির নামে টুকে দেয়া হচ্ছে মামলা। অনেককে পাঠিয়ে দিচ্ছেন আদালতে। এখানেই শেষ নয়। টাকা দিতে বিলম্ব হলে নিয়মিত চালকদের বেধরক পেটানোর ঘটনাও ঘটছে।
সম্প্রতি বিশ্বরোড হাইওয়ে থানার উপ-পরিদর্শক রামপ্রসাদ ও তার কয়েকজন সহযোগী দালাল চাঁদা আদায়, সিএনজি আটক ও চালকদের মারধর করার বিষয়ে বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন বলে অভিযোগ শ্রমিকদের।
গতকাল সকালে মাধবপুর থেকে ঢাকাগামী পণ্য বোঝাই একটি ট্রাক আটক করেন রাম প্রসাদ ঘোষ। পরে চালক সেলিম মিয়া (২৮) মারধর শুরু করে সোর্স ও পুলিশ। কাগজ পত্র আনতে বলেন চালককে। ট্রাকের কাগজ নিয়ে আসেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শ্রমিক ইউনিয়নের যুগ্ম-সম্পাদক আবু মিয়া। এর আগেই পুলিশ মামলা করে ফেলে। আপত্তি করায় আবু মিয়াকেও শারিরীক ভাবে লাঞ্ছিত করে পুলিশ। এর প্রতিবাদে জেলা ট্রাক মালিক সমিতির সম্পাদক মিজানুর রহমান, শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মোঃ সেলিম মিয়ার নেতৃত্বে ট্রাক ও সিএনজি অটোরিকশা শ্রমিকরা মহাসড়ক অবরোধ করে ফেলে। অবরোধ চলাকালে শ্রমিকরা বিশ্বরোড মোড়ে পথ সভা করে।
অবরোধের কারনে ঢাকা-সিলেট, কুমিল্লা-সিলেট ও সিলেট-ময়মনসিংহ/চট্রগ্রাম মহাসড়ক বন্ধ হয়ে যায়। ফলে তিন দিকে প্রায় ৬ কিলোমিটার সড়কে যানজটের সৃষ্টি হয়।
বক্তারা অভিযোগ করে বলেন, রামপ্রসাদ এখানে যোগদানের পর থেকে ট্রাক ও অটোরিকশায় নিয়মিত চাঁদাবাজী করছে। চাঁদা না দিলে চালকদের মারধর করে। অযথা গাড়ির নামে মামলা করে। তাকে সড়কে দেখলেই চালকরা গাড়ি থামিয়ে দূরে বসে থাকে। আজ সকালে এক ট্রাক চালককে অযথা মারধর করেছে। সে কথায় কথায় নিজেকে ছাত্রলীগের সাবেক বড় নেতা বলে হুমকি প্রদান করে। রামপ্রসাদকে এখান থেকে অপসারন না করলে অবরোধ প্রত্যাহার না করার ঘোষনা দেয় শ্রমিকরা।
ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন সদর থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ মাঈনুর রহমান, আশুগঞ্জ থানার ওসি সেলিম উদ্দিন ও সরাইল থানার ওসি (তদন্ত) আবদুল হক। বিশ্বরোড হাইওয়ে পুলিশের এস আই রাম প্রসাদ ঘোষ সকল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, রোড পারমিট না থাকায় ওই ট্রাকের বিরুদ্ধে মামলা করেছি। অনৈতিক কোন কাজ করিনি। তারা অযথা উচ্চ বাচ্য করে মহাসড়ক বন্ধ করে দিয়েছে।
সদর থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ মাঈনুর রহমান বলেন, শ্রমিকদের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ ও হাইওয়ে পুলিশের উর্দ্ধতন কতৃপক্ষের সাথে কথা বলে রামপ্রসাদের বিষয়টি দেখার আশ্বাস দিলে, শ্রমিকরা অবরোধ প্রত্যাহার করে।