সরাইলে দালাল সিন্ডিকেটের কবলে কৃষক ধান সংগ্রহ অভিযান:: সাধারন কৃষকরা জিম্মী
মোহাম্মদ মাসুদ, সরাইল থেকে ॥সরাইলে প্রভাবশালী দালাল সিন্ডিকেটের কবলে কৃষক চলছে সংগ্রহে অনিয়ম। রাজনৈতিক দলের নেতা কর্মী, কথিত সাংবাদিক ও প্রভাবশালীরাই এখন কৃষক। ২০১৪ সালের কৃষি উপকরন বিতরনের কার্ডেই চলছে কৃষক সিলেকশন। এ তথ্য স্থানীয় কৃষি অফিসের। কৃষক শুন্য গুদামে সারাদিন আনাগুনা চোখে পড়ে দালালদের।
অভিযান শুরুর আগেই গোপনে গুদামে কয়েক টন ধান উঠানোর বিষয়টি সবত্রই আলোচনা হচ্ছে। ফলে এ অভিযানে বঞ্চিত হচ্ছে স্থানীয় কৃষকরা। কিছু অনিয়মের কথা স্বীকারও করেছেন কৃষি কর্মকর্তা। ভেস্তে যেতে বসেছে সরকারের মহৎ উদ্যোগ। মোটা অংকের রফাদফায় চোখ বন্ধ করে আছে গুদাম কর্তৃপক্ষ।
সরজমিনে গুদামে গিয়ে দেখা যায়, কয়েকজন দালাল ঘুরছেন। কোন কৃষক নেই। নেই ধান সংগ্রহের কোন আলামত। কর্মচারীরা বসে বিশ্রাম করছে। আর গুদাম কর্মকর্তা বসে আছেন তার অফিস কক্ষে। খাদ্য গুদাম সূত্রে জানা যায়, এবার ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে ২ হাজার ১০৫ মেট্রিক টন। উদ্ভোধন করা হয়েছে ১৯ মে। চলবে আগামী ৩১ আগষ্ট পর্যন্ত। এ ধান দিবে শুধু স্থানীয় প্রকৃত কৃষকরা। সমগ্র উপজেলার ৯টি ইউনিয়নে ১ হাজার ৬৮৪ জন কৃষকের তালিকাও করা হয়েছে। তালিকা হাতে নিয়ে দেখা যায় রাজনৈতিক দলের নেতা কর্মী, ফসলি জমি না থাকলেও স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তি, কথিত সাংবাদিক ও কতিপয় চাতাল ব্যবসায়ি সেজে বসেছেন কৃষক। প্রকৃত কৃষকদের কোন কদর নেই গুদামে। নিয়মের বেড়াজালে কৃষকদের নাভিশ^াস উঠছে। আর কমিশন রফাদফায় পাকাপোক্ত দালালরা রয়েছেন ফুরফুরা মেজাজে। এভাবেই চলছে সরাইলের ধান সংগ্রহ অভিযান।
স্থানীয় কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, গোটা উপজেলার প্রকৃত কৃষকের তালিকা তৈরীর দায়িত্ব পায় তারা। সময় কম। তাই মাঠে কৃষকের সন্ধান করেননি। দ্রুত ২০১৪ সালে তৈরী “কৃষি উপকরন সহায়তা কার্ড” ধারী কৃষকদের তালিকা থেকে ১৯’শ কৃষকের নামের তালিকা প্রেরন করেন খাদ্য গুদামে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে গুদাম সংশ্লিষ্ট একাধিক ব্যক্তির সাথে কথা বলে ও অনুসন্ধানে জানা যায়, কৃষকদের কার্ড সংগ্রহ করে কিছু চাতাল ব্যবসায়ি কৌশলে গুদামে ধান দিচ্ছেন। আর মাঝখানে রয়েছে প্রভাবশালী কিছু দালাল। যাদের মাঠে কোন জমি নেই। নেই ধান উৎপাদনের কোন উৎস। তারাই কোন রকমে কৌশলে একটি কৃষি কার্ড সংগ্রহ করে গুদামে প্রবেশ করেছেন। পরে প্রত্যেক এলাকায় কার্ড সংগ্রহে নেমে পড়ে দালাল চক্র। প্রত্যেকে ৫০ থেকে ২’শ পর্যন্ত কার্ড হাতিয়ে নেয়। নাম শুধু কৃষকের। কামাই করছে দালাল চক্র।
ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলনেও চলছে নানা কারিশমা। ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সাথে চুক্তির মাধ্যমে চলছে তাদের বাণিজ্য। কৃষকদের বোকা বানিয়ে দেয়া হচ্ছে ধোঁকা। তাদের সিন্ডিকেটের সদস্যরা গ্রামের কৃষকের কাছ থেকে ৫৫০ টাকা মণ দরে ধান ক্রয় করছে। আর গুদামে বিক্রি করছে ৯২০ টাকায়। এ অনিয়মকে জায়েজ করতে টন প্রতি ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে দেয়া হচ্ছে ২ হাজার টাকা। তার টার্গেট ৪২ লাখ ১০ হাজার টাকা। আর দালালদের কামাইও সমপরিমান। কেজি প্রতি ২৩ টাকার মধ্যে কৃষকের হিসাবে জমা হচ্ছে ১৯ টাকা। সেটাও ঠিক মত পাচ্ছেনা তারা। ডান বাম হাতের স্বাক্ষর চলছে গুদামেও ব্যাংকে।
করাতকান্দি গ্রামের কৃষক মুছা মিয়া বলেন, ৩’শ মণের উপরে ধান পেয়েছি। আমরা গুদামের কাছেও যেতে পারি না। সরকার নিচ্ছে ৯২০ টাকা মণ। আর আমরা আ: বাছির নামের দালালকে মণ প্রতি ১০টাকা দিয়ে মাত্র ৫’শ টাকা দরে বিক্রি করছি। কৃষি অফিসের কোন লোক আমাদের কাছে আসে না। মাহমুদ নামের এক লোককে সরকার অযথা বেতন দেয়। সে এখানে কোন কাজ করে না। বড়বুল্লা গ্রামের কৃষক কালাম মিয়া বলেন, ১’শ মণ ধান পেয়েছি। কৃষি কার্ডের খবর আমাদের কেউ দেয়নি। অনেকে এসে কার্ড জমা নিয়েছে। শেষ কথা মোটা অংকের টাকা চলে যাচ্ছে দালাল সিন্ডিকেট ও গুদাম কর্মকর্তাদের পেটে। খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ শাহাদাত হোসেন ভূইয়া সকল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, তালিকা তো আমরা করিনি। আত্মীয় স্বজনের কার্ড জমা করে অনেক সময় পরিবার প্রধান ধান নিয়ে আসেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাধন কুমার গুহ মজুমদার বলেন, কিছু অনিয়ম হতে পারে। তবে ঢালাও ভাবে নয়। কৃষকদের আরো সচেতন হতে হবে। আস্তে আস্তে স্বচ্ছতা আসবে। উপজেলা ক্রয় কমিটির সভাপতি ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারি কমিশনার (ভূমি) মোঃ মাইনুল আবেদীন বলেন, এ বিষয়ে এখনই খোঁজ খবর নিয়ে দেখছি।