সরাইলে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ছাত্রলীগের তিনঘন্টাব্যাপী সংঘর্ষ, বিজিবি মোতায়েন



সরাইলে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ছাত্রলীগের দফায় দফায় সংঘর্ষে পুলিশসহ অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন। এ ঘটনার পর বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।
বুধবার (১৭ জুলাই) বিকাল ৩টার দিকে সরাইলের সিএনজি অটোরিকশা স্ট্যান্ড এলাকায় এ সংঘর্ষ শুরু হয়। তখন থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত তিন ঘণ্টা ধরে থেমে থেমে চলে সংঘর্ষ। এতে সরাইল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ এমরানুল ইসলাম, উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি মো. শরীফ উদ্দিনসহ অন্তত ২০ শিক্ষার্থী আহত হন। এর মধ্যে সাত জনকে সরাইল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
পুলিশ, আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী, ছাত্রলীগ ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিকাল ৩টার দিকে কোটা সংস্কার আন্দোলনের দাবিতে শতাধিক শিক্ষার্থী সরাইল কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে জড়ো হন। এর পাশেই ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা জড়ো হতে থাকেন। একপর্যায়ে উভয় পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এতে সংঘর্ষ শুরু হয়। একপর্যায়ে সরাইল সিএনজি অটোরিকশা স্ট্যান্ড থেকে শুরু করে সকাল বাজার এবং উচালিয়াপাড়া মোড় পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে সংঘাত। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ আনতে টিয়ারশেল এবং শটগানের গুলিতে ছুড়ে পুলিশ। শিক্ষার্থীরা ইটপাটকেল ছুড়তে শুরু করেন। ইটের আঘাতে সরাই থানার ওসি এমরানুল ইসলামসহ আট পুলিশ সদস্য, উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি শরিফ উদ্দিনসহ অন্তত ২০ শিক্ষার্থী আহত হন। আহতদের মধ্যে সরাইল থানার ওসিসহ সাত জনকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। পরে সরাইলের বিভিন্ন পয়েন্টে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। সন্ধ্যায় বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সরাইলের সমন্বয়ক মো. আরমান মিয়া বলেন, ‘আমরা শান্তিপূূর্ণভাবে বিক্ষোভ করছিলাম। হঠাৎ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা আমাদের ওপর হামলা চালান। আমরা আত্মরক্ষার চেষ্টা করেছি, আঘাত পেয়েছি। তাদের হামলায় আমাদের অন্তত ১০ শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন।’
তবে হামলার অভিযোগ অস্বীকার করে উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি শরিফ উদ্দিন বলেন, ‘কোনও ধরনের উসকানি ছাড়াই আন্দোলনকারী বিএনপি, ছাত্রদল ও জামায়াত শিবিরের নেতাকর্মীরা আমাদের ওপর হামলা চালায়। হামলায় আমিসহ আমাদের আট নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। তাদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।’
সরাইল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ এমরানু্ল ইসলাম বলেন, ‘সংঘর্ষে আমিসহ আট পুলিশ ইটপাটকেলের আঘাতে আহত হয়েছি। তিন ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে সন্ধ্যায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে।’
সরাইল উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. নোমান মিয়া বলেন, ‘সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত অন্তত ১০ জনকে চিকিৎসা দিয়েছি আমরা। তবে কারও অবস্থা গুরুতর নয়।’
সংঘর্ষের পর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে বলে জানালেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান। তিনি বলেন, ‘জনগণের জানমালের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে সরাইল উপজেলায় দুই প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে।’