দূর্বৃত্তদের আগুনে সরাইলে মুক্তিযোদ্ধার বাড়ি পুড়ে ছাঁই, ১৫ লক্ষ টাকার ক্ষয়ক্ষতি
মোহাম্মদ মাসুদ॥ ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরাইল উপজেলার নোয়াগাঁও ইউনিয়নের বাড়িউড়া এলাকায় দুর্বৃত্তের দেয়া আগুনে মুক্তিযোদ্ধার বাড়ি পুড়ে ছাঁই হয়ে গেছে । এতে প্রায় ১৫ লক্ষ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে । গত রোববার (২৮ নভেম্বর) স্থানীয় ইউপি নির্বাচনের দিন সকাল আনুমানিক ১০টার দিকে কে বা কারা তার বসত ঘরে আগুন দেয় । এসময় ঘরে থাকা আসবাবপত্র, মুক্তিযোদ্ধা সনদপত্র , প্রয়োজনীয় কাগজপত্র তিন ভরি স্বর্ণ, নগদ ২ লক্ষ ৩৫ হাজার টাকা, ১৫ টি বিদেশি কম্বল দুই ড্রাম ভর্তি চাউল,স্টিলের আলমারি, বই পুড়ে ছাই হয়ে যায়। ঘরে কোন কিছুই অবশিষ্ট থাকেনি আগুনের হাত থেকে। প্রায় ১৫ লক্ষ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানায় ভুক্তভোগী পরিবার। আগুন নেভাতে স্থানীয়রা প্রথমে চেষ্টা চালায়,পরে তারা আগুন নেভাতে ব্যর্থ হলে ফায়ার সার্ভিসে খবর দেয়। পরে ফায়ার সার্ভিসের লোকজন ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নেভাতে সক্ষম হয়। ততক্ষনে সবকিছু পুড়ে শেষ হয়ে যায়।
এর আগেও গত বুধবার রাতে ঘরের জানালা দিয়ে দাহ্য পদার্থ ঢেলে আগুন দেয়ার চেষ্টা করে পরে ঘরে থাকা লোকজন টের পেয়ে গেলে দুর্বত্তরা পালিয়ে যায়।
মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলীর চার ছেলে চার মেয়ে। তিন মেয়ের বিয়ে হয়েছে, চতুর্থ মেয়ে নবম শ্রেণীতে পড়ে। আগুনে তার বইগুলোও সব পুড়ে ছাঁই গেছে। তার এক ছেলে প্রবাসে থাকে, এক ছেলে সেনাবাহিনীতে কর্মরত। ছোট ছেলে মোঃ নাজিম সে স্কেট খেলোয়াড় বাংলাদেশ অলিম্পিকে স্কেট করে অনেক পুরস্কার জিতেছে। তার সব পুরস্কার, সনদ ও পঞ্চাশ হাজার টাকা দামের স্কেট ও পুড়ে ছাই হয়ে যায়।
স্থানীয় জাকির হোসেন (৪৫) নামে এক জন বলেন, মসজিদের মাইকে খবর পেয়ে দৌড়ে এসে প্রথমে ঘটনা স্থলে এসে দেখি ঘরের অনেক অংশ পুড়ে গেছে। আগুন নেভানোর মতো কোন সুবিধা নাই। এর আগেও গত বুধবার রাতে জানালা দিয়ে কারা যেন আগুন দেয়। পরে লোকজন তৎপর হলে আগুন নিভানো হয়। আমার মনে হয় বাইরের কেউ এই কাজ করে থাকতে পারে।
মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী’র স্ত্রী রেজিয়া বেগম বলেন, আমি বাড়ির একটু দূরে ধান শুকাইতে গেছিলাম, আমার স্বামী সকালে ভোট দিতে যায় । পরে আমার দেবর খবর দেয় ঘরে আগুন লাগছে। খবর পাইয়া আইয়া দেখি ঘরে আগুন জলতাছে। আমার ১৫ বছরের জমানো সবকিছু পুইরা শেষ হইয়া গেছে। আমরার পরনের কাপড় ছাড়া আর কোন কিছু নাই।
মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী বলেন, আমি ভোট দিতে চলে যাই, বাড়িতে কেউ ছিলো না। কিভাবে আগুন লাগছে আমরা কিছু জানি না। আমার সব কিছু শেষ হয়ে গেছে। মুক্তিযোদ্ধা সনদ ও পুড়ে শেষ হয়ে গেছে। কাউকে আগুন লাগাতে যেহেতু দেখি নাই তাইলে কারে দোষ দিমু।
সরাইল মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ইসমত হোসেন বলেন, আমি শুনেছি আগুন লাগার ঘটনাটি। যারা একজন মুক্তিযোদ্ধার বাড়ি আগুন দিয়ে জালিয়ে দিয়েছে তাদের আমি নিন্দা জানাই। তাদের আইনের আওতায় আনা দরকার। প্রশাসনের উচিৎ বিষয়টি তদন্ত করে বের করা, কারা বারে বারে আগুন দেয়ার ঘটনা ঘটাচ্ছে।
এবিষয়ে সরাইল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আসলাম হোসেন বলেন, আমি বিষয়টি শুনেছি কিন্তু কেউ থানায় কোন অভিযোগ করে নাই। থানায় অভিযোগ পেলে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।