আজ ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের বিপ্লবী উল্লাসকর দত্তের জন্মদিন,
মোহাম্মদ মাসুদ, সরাইল ॥ বৃটিশ বিরোধি আন্দোলনের অন্যতম বিপ্লবী। মাতৃভুমি স্বাধীনতার জন্য জীবনবাজী রেখে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন। যৌবনের শুরুতে সশস্ত্র বিপ্লববাদী দল যুগান্তরের সাথে যুক্ত হন। ব্রিটিশদেরকে মোকাবিলা করার জন্য উল্লাসকর দত্তই বাংলায় প্রথম বোমা তৈরি করেন।
১৮৮৫ সালের ১৬ এপ্রিল ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সরাইল উপজেলার কালীকচ্ছ গ্রামের দত্ত পরিবারে তার জন্ম । কালিকচ্ছ গ্রামটি ইতিহাসের পাতায় অবিস্বরনীয় হয়ে আছেন বিভিন্ন ঘটনা ও ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্বদের জন্ম ভুমি হিসেবে। কালীকচ্ছর র্উবর মাটি ও বাতাস জন্ম দিয়েছে বহু প্রাতঃস্মরণীয় ব্যক্তিত্বের, যারা শুধু ভারতবর্ষ নয়, পশ্চিমা বিশ্বেও নানাক্ষেত্রে তাদের স্বীয় কর্মে বিশেষ স্থান অর্জন করেছেন। তাদের মধ্যে অন্যতম হলো বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম মহানায়ক বিপ্লবী উল্লাসকর দত্ত।
সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের পাদপীঠ হিসেবে খ্যাত সরাইল উপজেলায় অনেক জ্ঞানীগুণী মনীষী জন্ম নিয়েছেন। ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে মহান স্বাধীনতা আন্দোলনসহ প্রতিটি প্রগতিশীল আন্দোলনের সঙ্গে এই এলাকার সাধারণ মানুষের সম্পৃক্ততা ছিল।
বিশেষ করে কালীকচ্ছ গ্রামটি ছিল একসময় সংগীতের তীর্থক্ষেত্র। এ গ্রামে রয়েছে বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম মহানায়ক বিপ্লবী উল্লাসকর দত্তের জন্মভিটা । সংগীতগুণী মহারাজ আনন্দস্বামীর সুর সাধনা, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের সংগীত শিক্ষক সুরসাগর শৈলেশ দত্তগুপ্তের তীক্ষ্ণ সংগীত প্রতিভা, জলতরঙ্গ বাদ্যের জনক শরৎ বাইনের গুণপনা, সরাইল সদর উপজেলায় নঈদাবাসী বাইন, নতুন হাবেলী পাড়ার তীতু ওস্তাদের তবলা বাদনে দক্ষতা একসময় সকলের শ্রদ্ধা কুঁড়িয়েছিল। সেই অতীত ঐতিহ্য আজ হারিয়ে যেতে বসেছে। যদিও প্রজন্মের সাংস্কৃতিক ও সংগীতিক আলোকবর্তিকা নিয়ে সরাইল সদরে অবস্থিত বর্তমানে ত্রিতাল সংগীত নিকেতন নামে একটি প্রতিষ্ঠান সেই সকল কর্মকান্ড ধরে রাখার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
এ গ্রামে বর্তমানে রয়েছে সরাইল সরকারি কলেজ, কালিকচ্ছ পাঠশালা উচ্চ বিদ্যালয়, সরাইল ফায়ার সাভিস, সূযকান্দি গ্রামে শেখ নাজির দর্গাহ, কালিকচ্ছ গ্রামের উত্তর পাশে রয়েছে ধর্মর্তীথ বদ্ধভূমি, ধরন্তী বিশাল হাওর , সরাইল-নাসিরনগর লাখাই আঞ্জলিক সড়ক, ও পুটিয়া ব্রিজ, তিতাস নদী, ও বর্ষায় হাজারো পযটক মিলন মেলা হয়ে থাকে।
১৯০৮ সালে চিফ প্রেসিডেন্সি ম্যাজিস্ট্রেট ডি. এইচ কিংফোর্ডকে হত্যার মিশনের সাথে জড়িত থেকে বোমা বানানোর অপরাধে আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে তৈরি করা মানব ইতিহাসের সবচেয়ে লোমহর্ষক কারাগারে নির্বাসিত করা হয় বিপ্লবী উল্লাসকর দত্তকে।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, কালীকচ্ছে দত্ত পরিবারের বাড়িটি এখনও আছে। অযতেœ আর অবহেলায় বাড়িটে হারিয়েছে তার সকল সৌন্দর্য। স্থানীয় এমপি জিয়াউল হক মৃধা প্রচেষ্টায় তাঁর বাড়ির সামনের রাস্তাটিও ‘উল্লাসকর দত্ত সড়ক’ নামকরণ করা হয়েছে।
এড. জিয়াউল হক মৃধা স্থানীয় এক মুসলিম পরিবার বাড়িটি কিনে সেখানে বসবাস করছে। যে বাড়িতে ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশবিরোধী স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম সশস্ত্র যোদ্ধা জন্ম নিয়েছিলেন সেটির রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব নিচ্ছে না কেউ।
সাম্প্রতিককালে কোলকাতা ও শিলচরে দুটি রাস্তা বিপ্লবী উল্লাসকর দত্তর নামে নামকরণ হলেও কেন তার জন্মভিটায় বিপ্লবী উল্লসকর দত্তের স্মৃতিপলক বা বাড়িটি সংরক্ষন করা হবে না এমন প্রশ্ন করেছে অনেকেই।
উল্লাসকরদের চর্চা না করলে পুঁজিবাদ আর করপোরেট আসক্তির চোরাবালিতে ডুবে যাবে আমাদের অতীত ইতিহাস ও বর্তমান আর ভবিষ্যত। আগামি প্রজন্মকে জানাতে হলে আমাদের ইতিহাস সংরক্ষন করতে হবে।