মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ:: সরাইলে মাদক ব্যবসায়ির হামলায় ২ পুলিশ কর্মকর্তা আহত, বসতবাড়ি গুড়িয়ে দেয়া হয়েছে
মোহাম্মদ মাসুদ, সরাইল থেকে :: সরাইলে জিডির তদন্ত করতে গিয়ে মাদক ব্যবসায়ি সাজাপ্রাপ্ত আসামী ও সন্ত্রাসী জীবন বাহিনীর হামলায় আহত হয়েছেন সরাইল থানার ২ পুলিশ কর্মকর্তা। পরে স্থানীয় লোকজনের আক্রোশে জীবনের বসতবাড়ি ভেঙ্গে গুড়িয়ে ও আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। । শনিবার দুপুরে উপজেলার শাহবাজপুর গ্রামের দিঘিরপাড় এলাকায় এ ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় স্বস্থির নিঃশ্বাস ফেলেছে মাদক সম্রাট জীবনের প্রতিবেশী ও গ্রামবাসী।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় লোকজন জানায়, জীবনের পরিবারের একাধিক সদস্য ও স্থানীয় কিছু যুবক নিয়ে একটি বাহিনী গড়ে তুলেছে জীবন। তারা জীবনের বাড়িতে গড়ে তুলেছে মাদকের আস্তানা। দিনে রাতে জীবন প্রকাশ্যে গত ২/৩ বছর ধরে গাঁজা, ইয়াবা, ফেন্সিডিল ও মদসহ বিক্রি করে আসছে। সন্ধ্যার পর জীবনের বাড়িতে নানা বয়সের যুবকের আনাগুনা বাড়তে থাকে। চলে গভীর রাত পর্যন্ত। আশপাশে অনেক সংখ্যালঘু পরিবারের বসবাস। তারা সন্ত্রাসী জীবনের নানা অত্যাচার অবিচার ও নির্যাতনের শিকার। ভয়ে মুখ খুলছেন না কেউ।জীবনের বিরুদ্ধে রয়েছে একাধিক চাঁদাবাজি, মাদক, ডাকাতি ও নাশকতার মামলা।
সম্প্রতি এক ইউপি সদস্যকে প্রকাশ্যে কূপানোর দায়ে জীবনসহ তার পরিবারের ৮ সদস্যের বিরুদ্ধে দ্রুত বিচার আইনে মামলা করেন ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি শাহ মোহাম্মদ কাইয়ুম। ওই মামলায় জীবনসহ সকলের ২ বছরের জেল হয়েছে।
গত ১৩ মে জীবনের ফুফু ওসমা বেগম প্রতিবেশির বিরুদ্ধে সরাইল থানায় একটি জিডি করেন। ওই জিডির তদন্ত করতে গতকাল দুপুর ১২টার দিকে ওসমার বাড়িতে এস আই আমজাদ ও এ এস আই শেখ ফরিদ। হঠাৎ করে বাড়ির দেওয়াল টপকিয়ে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে অতর্কিতে জীবন বাহিনী হামলা চালায় পুলিশের উপর। এ সময় তার সাথে ছিল মামুন, উজ্জল ও কামাল সহ বেশ কয়েকজন মাদক ব্যবসায়ি। তাদের হামলায় গুরুতর আহত হন এ এস আই শেখ ফরিদ। স্থানীয় ইউপি সদস্য ওমর ফারুক ও মারুফ নামেন যুবক মিলে সন্ত্রাসীদের কবল থেকে দুই পুলিশকে উদ্ধার করে শাহবাজপুরের একটি প্রাইভেট ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়।
বেলা ১টার দিকে সরাইল থানা পুলিশ এস আই আবদুল আলীমের নেতৃত্বে মাদক সম্রাট জীবনের বাড়িতে অভিযান চালায়। এর আগেই জীবন ও তার পরিবারের লোকজন বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যায়। স্থানীয় লোকজন প্রচন্ড ক্ষোভে বিদ্বেস জীবনের দুইটি বসতঘর ভেঙ্গে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়। এ সময় গ্রামের শতশত লোক স্বস্থির নিঃশ্বাস ফেলে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ১০/১২ জন নারী পুরুষ বলেছেন, জীবনের ভয়ে এখানকার অনেক মহিলা রাতে ঘর থেকে বের হয় না। ভয়ে সকলেই তার অরাজকতা নিরবে সহ্য করছেন। আমরা এমন একটি সময়ের অপেক্ষায় ছিলাম। আবার বাড়িতে এসে আমাদের উপর হামলা চালায় কিনা। তাই কিছুটা ভয় ও পাচ্ছি।
এমন সময় জীবন ইউপি সদস্য ওমর ফারুকের মুঠোফোনে কল দিয়ে পুলিশকে তাদের হামলার কবল থেকে উদ্ধার করার দায়ে তাকে প্রাণনাশের হুমকি দেয়। আর বলে, তুই না এলে পুলিশকে শেষ করে দিতাম।
স্থানীয় লোকজন যে বাড়িতে পুলিশের উপর হামলা হয়েছে ওই বাড়ির মহিলা ওসমা বেগমের বিরুদ্ধে অসামািজক কাজের অভিযোগ করেন। ওসমা বেগম সন্ত্রাসী জীবনের আপন ফুফু। ওসমা বেগমের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, দুইদিকের ফটকে তালা দিয়ে বাড়ি থেকে চলে গেছেন ওসমা। বাড়িতে পাওয়া যায় এক যুবতি মেয়েকে। মেয়েটি নিজেকে ওসমা বেগমের আত্মীয় পরিচয় দিলেও পুলিশের জিজ্ঞাসার মুখে এক সময় সত্য কথা বলে ফেলে। আমি এখানে দেড় মাস ধরে আছি। আন্টি আমাকে মাসে ৫’শ টাকা দেয়। শনেছি এখানে মাঝে মধ্যে অনেক মেয়ে আসে। এ সময় ওসমার প্রতিবেশী রহিমা বেগম (৪৬), নেহেরা বেগম (৪৫) ও নিলুফা বেগম (২৭) চিৎকার করে বলতে থাকেন, ওসমা এখানে দীর্ঘদিন ধরে জীবনের যোগসাজসে মেয়ের ব্যবসা করছে। আমাদের ছেলে মেয়েকে নিয়ে খুব সমস্যায় আছি। কথা বললেই মামলার ভয় দেখায়। আর বলে প্রশাসনের লোকজন তার সাথে আছে।
এস আই আবদুল আলীম মাদক সম্রাট জীবন বাহিনী কর্তৃক পুলিশের উপর হামলার কথা স্কীকার করে বলেন, জীবন ও তার বাহিনীর বিরুদ্ধে অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।