১২ বিজিবি’র অধিনায়ক লেঃ কর্ণেল মোঃ নজরুল ইসলাম এর সাফল্যের গৌরব গাঁথা এক বছর
ডেস্ক ২৪::গত ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ তারিখে ১২ বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়ন, সরাইল এর অধিনায়কের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন লেঃ কর্ণেল মোঃ নজরুল ইসলাম, পিবিজিএম। এর পূর্বে তিনি ২৭ বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়ন, ময়মনসিংহে অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেন। ইতিমধ্যেই তাঁর বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ, বর্ডার সিকিউরিটি ব্যুরো, পিলখানা, ঢাকা বদলী আদেশ জারী করা হয়েছে বিধায় খুব শিগরিই নতুন বদলীস্থলে গমন করবেন। গত ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ তারিখ হতে অদ্যাবধি ১২ বিজিবি’র অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে তিনি যে সাফল্য দেখিয়েছেন তার সংক্ষিপ্ত বর্ণনা তুলে ধরা হলো ::
১। ২০১৫ সালে দেশব্যাপী হরতার-অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা ::
২০১৫ সালটি আমাদের জাতীয় জীবনে কোন সুখকর সংবাদ ছিল না। ঐ বছর জানুয়ারি ২০১৫ তারিখ ৯ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ঢাকায় সমাবেশসহ ধংসাত্বক কর্মসূচি নিয়ে নানান নৈরাজ্যের কথা জানান দিচ্ছিল। পরবর্তীতে ৫ জানুয়ারি ২০১৫ তারিখ ঢাকায় সমাবেশকে কেন্দ্র করে দেশে শুরু হয় অবরোধ ও হরতালসহ সহিংসতার গভীর এক সংকটময় মুহূর্তের। ৯৩ দিনের লাগাতার হরতাল ও অবরোধে চোরাগোপ্তা হামলা, অগ্নিসংযোগ, যানবাহনে ভাংচুর ও পেট্রোল বোমা নিক্ষেপে যত লোক মারা গেছে তার চেয়ে বেশী মানুষ চিরদিনের জন্য পঙ্গুত্ববরণ করেছে। দেশময় সেই সংকটময় মুহূর্তে বিজিবি যৌথ বাহিনীর সাথে দেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার্থে দায়িত্ব পালন করতে শুরু করে। লেঃ কর্নেল মোঃ নজরুল ইসলাম ১২ বিজিবি’র অধিনায়ক হিসেবে নতুন দায়িত্বভার গ্রহণ করে বিভিন্ন স্থানে সভা সেমিনারের মাধ্যমে পেট্রোল বোমায় করনীয় সম্পর্কে ব্যাপক প্রচারনা শুরু করেন এবং বিজিবি যৌথ বাহিনীর সাথে দায়িত্ব পালনকালে তাঁর বিচক্ষণতা ও বলিষ্ঠ নেতৃত্বের কারনে একটি স্পর্শকাতর জেলা হওয়া সত্ত্বেও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বড় ধরনের কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।
২। মাদক সম্রাট পাগলা বাচ্চুকে গ্রেফতার :: ভৌগোলিক কারনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা মাদক চোলাচালানে অন্যতম রুট হিসেবে সারাদেশে পরিচিতি রয়েছে। এখানে পাগলা বাচ্চুর ন্যায় অসংখ্য মাদক চোরাকারবারীর সৃষ্টি হয়েছে। ফলে গত ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ তারিখে (SATV) চোরাকারবারীদের নিয়ে “খোঁজ” নামে একটি অনুসন্ধানী অনুষ্ঠান প্রচার করে যেখানে বাচ্চু মিয়াকে (পাগলা বাচ্চু নামে পরিচিত) ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মাদক সম্রাট নামে প্রচার করে তার মাদক চোরাচালানের নানা কর্মকান্ড দেশবাসীর কাছে তুলে ধরে।
পাগলা বাচ্চুর মাদক চোরাচালানের কর্মকান্ড প্রচারের পর থেকে লেঃ কর্ণেল মোঃ নজরুল ইসলাম এর দিকনির্দেশনায় একাধিক মামলার আসামী এই কুখ্যাত মাদক সম্রাটকে গ্রেফতারের অভিযানে নামে বিজিবি। গত ১০ জুলাই ২০১৫ তারিখে বিজিবি’র নিজস্ব গোয়েন্দার মাধ্যমে মাদক সম্রাটের অবস্থান নিশ্চিত হয়ে ভোর রাতে জেলার বিজয়নগর উপজেলার সিংগারবিল ইউনিয়নের নলঘরিয়ায় তার বাড়িতে বিশেষ অভিযান চালিয়ে ১০ কেজি গাঁজা, ৪৮ বোতল হুইস্কি, ১০ বোতল ফেনসিডিল এবং দেশীয় অস্ত্রসহ হাতে-নাতে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় বিজিবি। পরে তাকে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের অধীনে মামলা দায়ে করে বিজয়নগর থানায় হস্তান্তর করা হয়।
৩। পৌর নির্বাচন-২০১৫ উপলক্ষে দায়িত্ব পালন ::
গত ৩০ ডিসেম্বর আখাউড়া এবং ভৈরবে অনুষ্ঠিত হয়ে গেলে পৌর নির্বাচন-২০১৫। উক্ত নির্বাচনে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার্থে স্ট্রাকিং ফোর্স হিসেবে মোতায়েন করা হয় বিজিবি। লেঃ কর্ণেল মোঃ নজরুল ইসলাম নিজেই আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার্থে সারাদিন নির্বাচনী এলাকায় ঘুরে ঘুরে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেন। দেশের বিভিন্ন স্থানে পৌর নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগ এনে বিশৃঙ্খলা ও সংঘর্ষের ফলে বিভিন্ন কেন্দ্রের ভোট গ্রহণ স্থগিত হলে তাঁর বিচক্ষণতা ও দিক নির্দেশনায় আখাউড়া এবং ভৈরব পৌর নির্বাচনে সবকয়টি কেন্দ্রে কোনরুপ অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়া শান্তিপূর্ণভাবে ভোট গ্রহণ সম্ভব হয়েছে।
৪। ব্রাহ্মণবাড়িয়া মাদরাসার ছাত্রের মৃত্যুতে উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা ::
গত ১১ জানুয়ারি ২০১৬ তারিখ রাতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জামিয়া ইউনুছিয়া মাদরাসার এক ছাত্র এবং ব্যবসায়ীর মধ্যে মোবাইল ফোন কেনাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনায় এক মাদরাসা ছাত্রের মৃত্যুতে পরের দিন (১২ জানুয়ারি ২০১৬ তারিখ) গোটা ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহর পরিণত হয় রণক্ষেত্রে। পরিস্থিতি মোকাবেলায় জেলা প্রশাসন বিজিবি’র সহায়তা কামনা করেন। লেঃ কর্ণেল মোঃ নজরুল ইসলাম নিজেই ০৪ প্লাটুন বিজিবি সদস্যকে নিয়ে উপস্থিত হন সেই সংকটময় মুহূর্তে। পরে পরিস্থিতির ভয়াবহতা উপলব্ধি করে আরও দুই প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়। বেলা শুরু’র এক পর্যায়ে বিক্ষুব্ধ মাদরাসার ছাত্ররা যখন ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলস্টেশনসহ শহরের বিভিন্ন স্থানে ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করতে শুরু করে এবং পরের দিন (১৩ জানুয়ারি ২০১৬৫ তারিখ) সারা দেশে হরতালের ডাক দিয়ে মাইকিং করতে আরম্ভ করে তখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে তিনি জেলা প্রশাসনকে মাদরাসা কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনার প্রস্তাব জানান। কিন্তু বেসামাল পরিস্থিতিতে কিংকর্তব্যবিমূঢ় ও বিচলিত হয়ে পড়ে জেলা প্রশাসন, তখন বিজিবি সদস্যদের বহন করা গাড়ী কয়েক’শ গজ দূরে রেখে তিনি নিজেই হ্যান্ড মাইকে শান্ত হওয়ার আহ্বান জানাতে জানাতে লাঠি-সোঁটা হাতে রাস্তায় অবস্থানকারী মাদরাসা ছাত্রদের মুখোমুখি হন।
পরবর্তীতে মাদ্রাসা ছাত্ররা ভাংচুরের শিকার মসজিদ-মাদরাসা ও আহত ছাত্রদের দেখতে যাওয়ার জন্য তাঁকে আহ্বান জানালে তিনি অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও র্যাবের এক কর্মকর্তাকে সংগে নিয়ে অত্যন্ত সাহসের সাথে সম্পূর্ণ খালি হাতে মাদরাসায় যান এবং ঐ মাদরাসার কর্তৃপক্ষকে সাথে নিয়ে মসজিদ-মাদরাসায় ভাংচুর ও আহত ছাত্রদের দেখতে দেখতে যান। এক পর্যায়ে লেঃ কর্ণেল মোঃ নজরুল ইসলাম এর জোরালো ভূমিকায় আশ্বস্থ হয়ে জেলা প্রশাসন ও ১৩০ টি কওমী মাদরাসা কর্তৃপক্ষের সাথে দু’দফায় ৫ ঘন্টা আলোচনার মাধ্যমে আহুত হরতাল প্রত্যাহারসহ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সক্ষম হয়। ফলে বিজিবি’র কর্মকর্তা লেঃ কর্ণেল মোঃ নজরুল ইসলাম তথা বিজিবি বিভিন্ন মহলের ভূয়শী প্রশংসা অর্জন করেন।ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সংঘর্ষ, ভাঙচুর, আগুন:: সন্ধ্যার পর ভূতুড়ে শহর
৫। মাদক চোরাচালান বন্ধে ভূমিকা ::
লেঃ কর্ণেল মোঃ নজরুল ইসলাম ১২ বিজিবি’র অধিনায়কের দায়িত্বভার গ্রহণের পর থেকেই এই মাদক চোরাচালান বন্ধে আলাদাভাবে চিন্তা-ভাবনা শুরু করেন যারফলে তাঁর দিকনির্দেশনা ও সীমান্তে বিজিবি’র তৎপরতায় বর্তমানে অতীতের যেকোন সময়ের তুলনায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মাদক চোরাচালান অনেকাংশে কম পরিলক্ষিত হচ্ছে । গত ১১ জানুয়ারি ২০১৬ তারিখ জেলা আইন-শৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভায় কসবা উপজেলা চেয়ারম্যান স্বীকার করে বলেন-“কসবা উপজেলার ৫টি ইউনিয়ন সীমান্তবর্তী হলেও বর্তমানে মাদকের ব্যবহার একেবারে নেই বললেই চলে। তাছাড়া সীমান্ত এলাকা হিসেবে ডাকাতির সংখ্যাও হ্রাস পেয়েছে”। এছাড়াও তিনি ১২ বিজিবি’র অধিনায়কের দায়িত্বে নিয়োজিত থাকাবস্থায় গত ফেব্রুয়ারি ২০১৫ হতে ফেব্রুয়ারি ২০১৬ পর্যন্ত এক বছরে সর্বমোট ৪,৪১,৫৮,৩৮০/- (চার কোটি একচল্লিশ লক্ষ আটান্ন হাজার তিনশত আশি) টাকা মূল্যের বিভিন্ন প্রকারের মাদকদ্রব্য উদ্ধারে সক্ষম হয়। যারমধ্যে রয়েছে প্রায় ২২৪৯ কেজি গাঁজা, ১৯৭৩৭ বোতল হুইস্কি, ৭৬৯৮ বোতল ফেনসিডিল এবং ২২৫৫ বোতল ইস্কফসহ বিভিন্ন প্রকারের মাদকদ্রব্য।
৫। শীতবস্ত্র বিতরণ। গত ২৩ জানুয়ারি ২০১৬ তারিখ লেঃ কর্ণেল মোঃ নজরুল ইসলাম বিজিবি’র পক্ষে আখাউড়ায় সীমান্তবর্তী এলাকায় রাতে ছিন্নমূল মানুষ, দুস্থ মহিলা ও শিশুদের মধ্যে চার শতাদিক কম্বল বিতরণ করেন। ফলে দুঃখী-অসহায় মানুষ যারা তীব্র শীতের মধ্যে কষ্টে দিন অতিবাহিত করছেন তাদের কিছুটা হলেও শীতের কষ্ট লাঘব হয়েছে।
পরিশেষে বলা যায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মাদক চোরাচালান প্রতিরোধ তথা জেলার সার্বিক আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে তিনি বিভিন্ন সময়ে যে ধরনের ভূমিকা পালন করেছেন তা বিভিন্ন মহলে বিজিবি’র ভাবমূর্তিকে দারুণভাবে প্রশংসিত করেছে। এই নিবেদিত প্রাণ কর্মকর্তা কর্মজীবনে সাফল্যের উচ্চাসনে আসীন হয়ে দেশ ও জাতির জন্য মঙ্গল বয়ে আনবে এই প্রত্যাশা আমাদের সকলের।