যানযটের দূর্ভোগে নাকাল ব্রাহ্মণবাড়িয়াবাসী
মনিরুজ্জামান পলাশ : দেড়শো বছরের পুরাতন ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভা। খাতা কলমে প্রথম শ্রেণীর হলেও সুযোগ সুবিধা প্রায় শুণ্য। নাগরিকদের নূন্যতম পায়ে হাটার ফুটপাতও নেই শহরের বেশির ভাগ অংশে। শহরের প্রধান সড়কে যৎসামান্য যেটুকু আছে সেটুকুও হকারদের দখলে।ফলে নাগরকিরা অগত্যা নামছেন সড়কে। সড়কে হাটারও বালাই নেই ।সড়ক রয়েছে চাহিদার কয়েকগুণ বেশি ব্যাটারী চালিত রিক্সা ও ইজি বাইকের দখলে।দখলে থাকা ফুটপাত, ফুটপাতের পথচারী সড়কে আর সড়কে চাহিদার কয়েকগুন বেশী গাড়ি। সবমিলিয়ে প্রকট যানযটে নাভিশ্বাস শহরবাসীর।
১৮৬৮ সালে প্রতিষ্ঠিত ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভায় বর্তমানে জনসংখ্যা প্রায় সাড়ে ৩ লাখের কাছাকাছি। পৌর শহরে কাঁচা-পাকা মিলে রয়েছে ১২৮ কিঃ মিঃ সড়ক। একটি মাত্র প্রধান সড়কের উপর নির্ভরশীল পৌর শহরের বিভিন্ন সড়কে ধারণ ক্ষমতার কয়েকগুন বেশী যানবাহন চলাচল করছে। পৌরসভা থেকে ১ হাজার ইজিবাইক ও ৩ হাজার অটো রিক্সার লাইসেন্স দিলেও লাইসেন্স ছাড়া চলাচলকারী যানবাহনের সংখ্যা কয়েকগুন বেশী। সংকীর্ণ সড়কে দ্রুত গতির অটোরিক্সা ও ইজিবাইক চলাচলের কারণে প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা। সে সাথে যত্রতত্র যাত্রী উঠানামা এবং ট্রাফিক আইন না মানায় শহরে যানজট দিন দিন প্রকট আকার ধারণ করছে। এছাড়া এসব যানবাহনে উচ্চ মাত্রার হর্ণ ব্যবহার করায় শব্দ দূষণসহ পৌরবাসী নানাবিধ শারীরিক ও মানসিক যন্ত্রণার শিকার হচ্ছে। সীমিত পরিসরে থাকা ফুটপাতগুলোও রয়েছে হকারদের দখলে। সাধারণ মানুষ দ্রুত নাগরিক দুর্ভোগ থেকে মুক্তি চান।
চিনাইর বাজারের ঔষধ ব্যবসায়ী মোঃ সজিব মিয়া তার ভোগান্তির কথা তুলে ধরে বলেন, আমরা আগে কাউতলী থেকে কুমারশীলমোড় আসতে সময় লাগতো ১০ মিনিট এখন একই রাস্তা আসতে সময় লাগে ৪০-৪৫ মিনিট। এখন অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে কোন কাজে আসলে কয়েকঘন্টা সময় হাতে নিয়ে আসতে হয়। এতে ব্যবসায়ের ক্ষতি হয়। দ্রুত যানযট নিরসনে কর্তৃপক্ষ উদ্যোগী হবেন বলে প্রত্যাশা করেন তিনি।
চাকুরীজীবি লিমন ভূঁইয়ার সাথে কথা হয় শহরের পৌর মার্কেট এলাকায় । তিনি জানান, অফিসের প্রয়োজনে তিনি মডেল প্লাজা থেকে কিছু কম্পিউটার এক্সোসোরিজ কিনতে এসেছেন। তিনি ভাদুঘর থেকে আসতে আসতে তার সহকর্মীরা বিরক্ত হয়ে চলে গেছেন। তিনি বলেন, প্রথমে জ্যামে পড়লাম কাউতলীতে । সেখানে এতবড় রাস্তা তাও যানযট। দুপাশ দখল করে আছে সিএনজি ও হকাররা। সেই জ্যামে গেলো ১০মিনিট। এরপর যানযট এড়াতে অতিরিক্ত টাকার দেওয়ার শর্তে ফ্লাইওভার দিয়ে আসলাম। ফ্লাইওভা্র থেকে নেমে আবারো যটে পড়লাম। এই যট একেবারে কোর্ট রোডের মোড় পর্যন্ত। সাথে মালামাল খাকায় নেমে যে হেটে চলে আসব সে সুযোগও ছিলনা। ফলে ২০ মিনিট যটে বসে দূর্ভোগ পোহাতে হল।
মাহমুদা বেগম নামে এক অভিভাবক জানান, তার মেয়েকে নিয়ে স্কুলে আসার যাওয়ার পথে তাকে চরম দূর্ভোগ পোহাতে হয়। রাস্তা পারাপারের সময় তিনি সবসময়ই দূর্ঘটনার শঙ্কায় থাকেন। এ অবস্থার পরিত্রাণ চান তিনি।
এইচএসসি পরীক্ষার্থী ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজের ছাত্র ইমরান হোসেনের সাথে কথা হয় ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাবের সামনে। তিনি প্রতিবেদককে জানান, পরীক্ষার সময়ে যানযট অসহনীয় পর্যায়ে চলে যায়। তারা নির্ধারিত সময়ে পরীক্ষার হলে পৌঁছুতে হেটেও রওয়ানা হোন। কিন্তু হকাররা ফুটপাত দথল করে থাকায় স্বাভাবিকভাবে তারা হেটেও আসতে পারেন না।
ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক (শহর ও যানবাহন) দেবব্রত করের কাছে প্রশ্ন ছিল কেন এত যানযট? শহরে কেনই বা দিনের বেলা সিএনজি ঢুকে? নির্ধারিত সময়ের আগে কেন ট্রাক প্রবেশ করছে। তিনি জানান, শহরের সড়কগুলো সংকীর্ণ হওয়ার পাশাপাশি গাড়ির চাপ বেড়ে যাওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। গত অর্থবছরে পৌরসভা রিক্সা এবং ইজিবাইকের লাইসেন্স দিয়েছিল। এবার সরকারের নির্দেশনা না পাওয়ায় লাইসেন্স দেয়া বন্ধ রয়েছে। ফলে শহরের বাইরের অনেক রিক্সা ও ইজিবাইক শহরে প্রবেশ করছে। তারা সেসব যানবাহনকে চিন্হিত করে আইনের আওতায় আনছেন। শহরের প্রধান সড়কের পাশে অনেক হাসপাতাল এবং ডায়াগনিষ্টিক সেন্টারের অবস্থান। ফলে অনেক রোগী গ্রাম থেকে সিএনজিযোগে রোগী দেখাতে আসেন। তাই দিনের বেলা শহরে সিএনজি প্রবেশ করে বলেও জানান তিনি। আর কাঁচামালের ট্রাক সব সময়্ প্রবেশ করতে পারে বলে উল্রেখ করেন তিনি।
পৌর মেয়র নায়ার কবির জানান, সরকারের নির্দেশনার অপেক্ষায় বর্তমানে কোন লাইসেন্স নবায়ন করা হয়নি। তিনি যানযট নিয়ন্ত্রণে আনতে উদ্যোগ নিবেন বলে জানান। পাশাপাশি যানজট নিরসনে হকার উচ্ছেদের ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানান।