Main Menu

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মুন্সেফপাড়ায় বিল্ডিং কোড এবং নির্মাণ বিধি না মেনেই ১০ তলা বানিজ্যিক ভবন নির্মাণ।ফৌজদারী ব্যবস্থার দাবীতে এলাকাবাসীর সংবাদ সম্মেলন।।

+100%-

প্রতিনিধি॥ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এক ধণাঢ্য চিকিৎসক দম্পতির বিরুদ্ধে বিল্ডিং কোড,নির্মাণ বিধি, অনুমোদিত নকসা না মেনেই ১০ তলা বানিজ্যিক ভবন নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে। এ ব্যাপারে পৌর কর্তৃপক্ষ বারবার চিঠি দিলেও পাত্তাই দেয়া হচ্ছে না। এমনকি পৌরসভার একটি পুকুরের ১৩ ফুট থেকে ২০ ফুট জায়গা ভবনের ভেতরে ঢুকিয়ে দেয়ারও অভিযোগ রয়েছে। এ ব্যাপারে মাপ-জোখ করে লাল দাগ দেয়া সহ অবৈধ ভবনের অংশ অপসারণের কয়েকটি চিঠি দেয়া হলেও নির্বিকার ডা.ডিউক ও তার স্ত্রী ডা.এঞ্জেলা। এ নিয়ে মুখোমুখি অবস্থানে চিকিৎসক দম্পতি,পৌর কর্তৃপক্ষ ও প্রতিবেশীরা।

এদিকে ধর্নাঢ্য চিকিৎসক ডা.ডিউক ও তার স্ত্রী কর্তৃক পৌর কর্তৃপক্ষ সহ এলাকাবাসীকে অগ্রাহ্য করে ভবন নির্মাণ কাজ এগিয় নেয়ায়,পৌর কর্তৃপক্ষের বারবারের চিঠিকে পাত্তা না দেয়ায় ক্ষোভে ফুসছেন এলাকাবাসী। ডা.ডিউক দম্পতির অবৈধভাবে নির্মাণ করা ভবনের দখলকৃত অংশ উদ্ধারের দাবীতে ও একের পর এক অন্যায় কাজ চালিয়ে যাওয়ায় ডা.ডিউকের বিরুদ্ধে ফৌজদারী ব্যবস্থা নেয়ার দাবীতে সংবাদ সম্মেলন করেছে এলাকাবাসী। শনিবার সকালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাব মিলনায়তনে এ সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন আরাফাত মোশারফ খান অপু। অন্যান্যের মাঝে উপস্থিত ছিলেন ৩ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর খবির উদ্দিন আহমেদ,এড.তারিক হোসেন জুয়েল,এড.সাইফুল ইসলাম,এলাকার বিশিষ্ট ব্যক্তি আবদুল হামিদ,ব্যবসায়ী আশরাফুল হক।

পৌরসভা সূত্রে জানা গেছে,ব্রাহ্মণবাড়িয়া খ্রীস্ট্রিয়ান মেমোরিয়াল হাসপাতালের মালিক শহরের বহুল আলোচিত ধণাঢ্য চিকিৎসক ডা.ডিউক চৌধুরী ও তার স্ত্রী ডা.এঞ্জেলা চৌধুরী শহরের ২৫৯ নং পশ্চিম পাইকপাড়া মৌজায় মুন্সেফপাড়া মহল্লায় লাখি বাড়ি এলাকায় সি,এস(সাবেক) ৮৭ ও এস,এ (হাল) ১২২ দাগাংশে ১০তলা বানিজ্যিক ভবন নির্মাণ করছেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভা কর্তৃপক্ষ গত ২০১৫ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি ভবনের নকসা অনুমোদন দেয়। এ নকসা অনুসারে ভবনের উত্তরে ৬ ফুট ৫ ইঞ্চি,দক্ষিণে ৫ ফুট,পূর্বে ৭ ফুট ৮ ইঞ্চি,পশ্চিমে ১৮ ফুট ৩ ইঞ্চি জায়গা খালি রেখে নির্মাণ কাজ করবার কথা। এমনকি ভবন নির্মাণ কাজ শুরু করার সময় স্থানীয় পৌর কাউন্সিলর ও সহকারী প্রকৌশলীর উপস্থিতিতে লে-আউট দেয়ার কথা। শুরুতেই অভিযোগ উঠে পৌর কাউন্সিলর ও সহকারী প্রকৌশলীর উপস্থিতি ছাড়াই ভবনের লে-আউট দেয়া হয়।

প্রতিবেশী ও এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে অভিযোগ উঠে পৌরসভার অনুমোদিত নকসা অনুসারে ভবনের চারিপাশে খালি জায়গা না রেখেই বহুতল এই ভবন নির্মাণ কাজ শুরু করে। এছাড়া উঁচু ভবন নির্মাণের সময় যে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা নিতে হয় তাও নেয়া হয়নি। এ নিয়ে ভবন মালিককে বারবার জানানো হলেও তিনি আমলে নেননি। শহরের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে শালিস বৈঠক করে পৌরসভার নকসা মেনে কাজ করার সিদ্ধান্ত দিলেও তা মানা হয়নি। এ ব্যাপারে প্রতিবেশীদের পক্ষে একেএম আশরাফুল হক নামে এক ব্যবসায়ী গত বছরের ২৯ নভেম্বর পৌরসভার মেয়র বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন। পরে পৌর মেয়রের উদ্যোগেও শালিস সভা হয় কিন্তু সমাধান হয়নি।

১ ডিসেম্বর পৌরসভার দায়িত্বশীল লোকজন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেও আশরাফুল হকের দায়ের করা অভিযোগের সত্যতা পান। ৬ ডিসেম্বর পৌরসভার পক্ষ থেকেও চিঠি দিয়ে আইন অমান্যের অভিযোগ এনে বর্ধিত অংশ অপসারণ করে বিল্ডিং কোড মেনে ভবন নির্মাণের নির্দেশ দিলেও কোনো কাজে আসেনি। চিকিৎসক দম্পতি সকল চিঠির আদেশ-নির্দেশ অমান্য করে ভবন নির্মাণ কাজ চালিয়ে যান। কিছুদিন পূর্বে আরেক প্রতিবেশী আরাফাত মোশারফ অপু পৌর কর্তৃপক্ষের কাছে এক লিখিত অভিযোগে জানায়,চিকিৎসক দম্পতির ভবন নির্মাণের সময় ভবনের দক্ষিণ পাশের যৌথ মালিকানাধীন ১৪ ফুট রাস্তার ২ ফুট ৯ ইঞ্চি জায়গা ভবনের ভেতরে ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে। এ অভিযোগ পেয়ে এ বছর ৪ আগস্ট পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী গোলাম মোহাম্মদের নেতৃত্ব একটি টীম ভবন এলাকা পরিদর্শন করে সকল অভিযোগের সত্যতা পান। পৌরসভা অনুমোদিত নকসা অনুসারে ভবনের চারিদিকে খালি জায়গা রাখা হয়নি বলেও সত্যতা পান। এমনকি ভবনের ভেতরে পৌরসভার মালিকানাধীন পুকুরের অংশও ঢুকে গেছে বলেও সন্দেহ করেন।

নির্বাহী প্রকৌশলী এদিনই এক চিঠিতে ভবন মালিককে ইমারত নির্মাণ বিধিমালা ১৯৯৬,স্থানীয় সরকার(পৌরসভা) আইন ২০০৯ লংঘনজনিত অপরাধ,বাংলাদেশ ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড এর পরিপন্থি কাজ করছে বলে অভিযোগ করেন। এরপর দু,পক্ষের আলোচনা মোতাবেক এবং দু,পক্ষের সার্ভেয়ার সহ বিশিষ্ট ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে গত বছর ৭ আগস্ট নির্মাণাধীন ভবনের মাপ-জোখ করে ভবনের ভেতরে বিভিন্ন জায়গায় পুকুরের বিপুল পরিমান জায়গা অবৈধ দখল করা হয়েছে উল্লেখ করে লাল দাগ দেয়া হয়। এ ব্যাপারে পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী পুনরায় গত ১০ আগস্ট এক চিঠি দেয়। এ চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে ভবনের দক্ষিণ পূর্বাংশে ২০ ফুট ও উত্তর পূর্বাংশে ১৩ ফুট পৌরসভার পুকুরের জায়গা দখল করে ভবন নির্মাণ করে ফেলা হয়েছে। চিঠিতে লাল দাগ দেয়া জায়গায় নির্মিত ইমারত অপসারণ করে পৌর পুকুরের জায়গা দখলমুক্ত করার নির্দেশ দেন। এমনকি ৭ দিনের মধ্যে ব্যবস্থা না নিলে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানানো হয়। এরপর পৌর কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন সময় ডা.ডিউক দম্পতিকে বারবার চিঠি দিলেও কোনো কাজ হয়নি। বরং একদিনের জন্য কাজ বন্ধ রাখেননি তারা। পৌরসভার নিষেধাজ্ঞার ভেতরেই কয়েকতলা কাজ সম্পন্ন করেছেন তারা।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী গোলাম মোহাম্মদ জানান,ভবন মালিক শুরু থেকেই সকল প্রকার আইন অমান্য করে ভবন নির্মাণ করছেন। অন্যায়ভাবে পৌরসভার পুকুরের জায়গা অবৈধভাবে দখল করে ভবনের ভেতরে ঢুকিয়ে নিয়েছেন। পৌরসভার জায়গা উদ্ধারের জন্য যা যা করণীয় সবই করা হবে।

এ ব্যাপারে বহুতল বানিজ্যিক ভবনের মালিক ডা.ডিউক চৌধুরী বলেন,আমরা শুরু থেকেই বিল্ডিং কোড মেনে নির্মাণ কাজ করছি। ভবন নির্মাণের শুরু থেকেই এলাকার একটি দুষ্টচক্র আমাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু করে। পৌরসভার লোকজন অন্যায়ভাবে একতরফা মাপজোখ করে আমার ভবনে লাল দাগ দিয়েছে।

পূর্বের খবরঃ-