মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার, হত্যার সুষ্ঠু তদন্ত -বিচারের দাবিতে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ
নবীনগরে ডাকাত সাজিয়ে দুই ব্যক্তিকে হত্যার অভিযোগ
নিজস্ব প্রতিবেদক:: ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার সাতমোড়া ইউনিয়নের জগন্নাথপুর গ্রামে এনামুলক হক (৪৫) ও ইয়াছিন মিয়া (৪০) নামে দুই ব্যক্তির হত্যার প্রতিবাদ, মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার, হত্যার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের দাবিতে মানববন্ধন ও সমাবেশ হয়েছে।
শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাবের সামনে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ছাত্র-ছাত্রীবৃন্দ এ কর্মসূচির আয়োজন করে। এ কর্মসূচিতে জেলার বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরাসহ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সদস্যরা অংশ নেন। জেলার একটি বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থী মূহয়ী সারদের সঞ্চলানায় মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন সম্মিলিত সাংস্কৃতি জোটের আহবায়ক আবদুন নূরসহ বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষার্থী নাবিল তাওসিফ সৌরভী সুলতানা বিথী।
এসময় আবদুন নূর বলেন, ডাকাত সাজিয়ে মানুষ হত্যার কোনো বিচার হতে পারে না। তিনি এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত দাবিসহ জড়িতদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার জন্য পুলিশ প্রশাসনের কাছে অনুরোধ জানান।
নিহত ইয়াছিনের মেয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের সাবেরা সোবহান সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর ছাত্রী বলেন, জগন্নাথপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক মেম্বার সেন্টু মিয়াসহ কতিপয় লোকজন একটি মোটরসাইকেল চুরির ঘটনাকে কেন্দ্র করে আমার বাবা ও খালু এনামুল হকে ডাকাত বানিয়ে গণপিটুনির ঘটনা সাজিয়ে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে। এসব ঘটনার পর পুলিশ আমাদের অভিযোগ মামলা আকারে নেননি। সেন্টু মিয়া উল্টো আমার বাবা ও খালুর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করেছে। জান্নাতুল এসব মামলা প্রত্যাহার করে করে পুরো ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত দাবিসহ জড়িতদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানান। বাবা ও খালুর হত্যার বিচারের দাবি জানান জান্নাতুল।
জানা গেছে, গত ১ মার্চ রাতে নবীনগর উপজেলার সাতমোড়া ইউনিয়নের জগন্নাথপুর গ্রামে রাত সাড়ে সাতটার দিকে এনামুল ও ইয়াছিন খুন হয়। ডাকাতির প্রস্তুতি নেওয়ার সময় স্থানীয় জনতার গণপিটুনিতে তারা নিহত হন বলে সেসময় পুলিশ জানান।
এনামুল রসুল্লাহবাদ ইউনিয়নের রসুল্লাবাদ গ্রামের মৃত আবু তাহেরের ছেলে ও ইয়াছিন একই উপজেলার শিবপুর ইউনিয়নের কাজলিয়া গ্রামের মৃত জারু মিয়ার ছেলে। ইয়াছিন বিজিবির অবসরপ্রাপ্ত সদস্য। তিনি গত ইউপি নির্বাচনে চেয়ানম্যান পদে জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসেবে অংশ নিয়েছিলেন।
নিহত এনামুলের স্ত্রী তাসলিমা বেগম অভিযোগ করেন, হত্যাকান্ডের ১৮/২০ দিন আগে তার স্বামীর মোটরসাইকেলটি বাড়ির সামনে থেকে চুরি হয়। চুরি হওয়া সেই মোটরসাইকেলটি সাতমোড়া ইউনিয়নের জগন্নাথপুর গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য সেন্টু মিয়ার আত্মীয় একই গ্রামের কামাল মিয়া ও তার বন্ধুরা ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদরের সুলতানপুরে বিক্রি করে দেন। এ ঘটনা জানার পর কামাল, ও তার সহযোগীদের সঙ্গে এনামুল হকের হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। মোটরসাইকেল চুরির অভিযোগে কামালের ভাই আবু সাঈদকে ধরে নিয়ে আসেন এনামুল ও তাঁর লোকজন। রসুল্লাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলী আকবর ও সাতমোড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মাসুদ বিষয়টি মিমাংসার জন্য আলোচনা করেন। জগন্নাথপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক মেম্বার সেন্টু মিয়া বিয়টি মিমাংসার দায়িত্ব নেন।
তাসলিমা ও ইয়াছিনের মেয়ে জান্নাতুল নাঈমা বলেন, সাতমোড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. মাসুদ এনামুল ও ইয়াছিনকে ১মার্চ সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে সেন্টু মিয়ার বাড়িতে যেতে বলেন। সেখানেই সেন্টু মিয়া, তাঁর আত্মীয় কামলা মিয়া পরিকল্পিতভাবে তাদের নির্মমভাবে হত্যা করেন। পরে এনামুল ও ইয়াছিনকে ডাকাত বানিয়ে গণপিটুনির ঘটনা সাজিয়ে পূর্বপরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়।
নিহতের সুরতহাল প্রতিবেদন সূত্রে জানা গেছে, এনামুলের মাথার তালুতে কাটা জখম, নাকের উপরিভাগে জখন, বাম হাতের কব্জির ওপর আড়াই ইঞ্চি পরিমান জখম, বাম হাতের বাহুতে জখম, পায়ের গোড়ালি পেছনের রগ কাটাসহ তাঁর শরীরে প্রায় ৩০টি জখম এবং ইয়াছিনের মাথার বাম ও ডান পাশে কোপের কাটা জখম, চোখের নিচে ও গালের উপরে জখম, দুই পায়ের গোড়ালি পেছনের দিকে কাটা জখম পাঁচটি কাটা জখমসহ ১৮টি জখম রয়েছে।
নিহত এনামুল হকের স্ত্রী তাসলিমা বেগম বাদী হয়ে ২৬জনকে আসামী করে গত বৃহস্পতিবার ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেষ্ঠ্য বিচারিক হাকিম আদালতে একটি মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় কামাল মিয়াকে এক নম্বর, সেন্টু মিয়াকে দুই নম্বর ও সাতমোড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. মাসুদকে ২৫ নম্বর আসামী করা হয়েছে।
নবীনগর থানার(ওসি) তদন্ত মেজবাহ উদ্দিন গনমাধ্যমকে জানান, ঘটনার দুই দিক সামনে এখন এসেছে। আমরা তদন্ত করে যে দিকটা সঠিক পাব ঠিক সেভাবেই কাজ করব। ঘটনার দিন রাতেই সেন্টু মেম্বার থানায় এসে বলেছে তার বাড়ীতে ডাকাতি করতে এসে গণপিটুনীতে এনামূল ও ইয়াছিন মারা যায় বলে সে বাদী থানায় মামলা দায়ের করেন। পরবর্তীতে পুলিশ বাদী হয়ে অজ্ঞাত লোকদের গণপিটুনীতে তারা মারা যায় মর্মে থানায় মামলা করেন । নিহত এনামূলের স্ত্রী বাদী হয়ে কয়েকজনের নামসহ অজ্ঞাত আরো আসামি করে থানায় মামলা করেন।তদন্তের স্বার্থে সব কিছু এখনি বলা যাচ্ছেনা।