Main Menu

নতুন বয়ানে ৩৬ দিনের কথা বললেও, ১৬ বছরের কথা বলে না- ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আমীর খসরু

+100%-

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, ‘আবার নতুন বয়ান। কিছু কিছু নতুন বয়ান সৃষ্টি হয়, এই বয়ানে ১৬ বছরের কথা নেই। ওই বয়ানে ৩৬ দিনে বিএনপির নেতা-কর্মীর অবদানের কোনো কথা নেই। ওই বয়ানে কিছু ছাত্রনেতার কথাবার্তায় মনে হয়, তাঁরা পুরো আন্দোলনটাকে হাইজ্যাক করে নিয়ে গেছেন। সবচেয়ে বেশি অবদান বিএনপির থাকা সত্ত্বেও আমরা তো হাইজ্যাক করতে চাই না। এই আন্দোলনের কারণ ছিল একটি গণতান্ত্রিক অর্ডার বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনা।’

আজ সোমবার বিকেলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা বিএনপি আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির প্রতিবাদ এবং দ্রুত নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণা এবং পতিত ফ্যাসিস্টদের অপচেষ্টা মোকাবিলাসহ বিভিন্ন দাবিতে এই সমাবেশের আয়োজন করা হয়। জেলা শহরের আবদুল কুদ্দুস মাখন পৌর মুক্তমঞ্চে বেলা তিনটার দিকে সমাবেশ শুরু হয়।

আমীর খসরু মাহমুদ তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘আমরা যা দেখতে পাচ্ছি, সেটা ভালো লক্ষণ নয়। ওই যাঁরা আন্দোলনকে হাইজ্যাক করেছেন, তাঁদের সঙ্গে আবার কিছু লোকজন, যাঁরা আগামী নির্বাচনে জনগণের ওপর আস্থা-বিশ্বাস রাখতে পারছেন না। আসলে কতটুকু গণতন্ত্রে বিশ্বাস করেন, সেটাও সন্দেহজনক। আজকে যে সরকার আছে, সেটাও আমাদের সমর্থনপুষ্ট সরকার। আমরা সবাই মিলে এই অন্তর্বর্তী সময়ে সরকার গঠনকে সমর্থন দিয়েছি। স্বৈরাচার-ফ্যাসিস্টের পতনের পরে বাংলাদেশে একটা গণতান্ত্রিক অর্ডার ফিরিয়ে আনার জন্য একটি সাময়িক সরকার দরকার ছিল; যারা এই প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে আগামী দিনে নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা তুলে দেবে। কিন্তু সেখানে এই সরকারের মধ্যে, তাদের কার্যক্রমে, তাদের নিরপেক্ষতার বিষয়ে জনগণের মনে যদি কোনো সন্দেহের উদ্রেক ঘটে, সেই দায়িত্ব তাঁদের নিতে হবে। জনগণ যদি তাঁদের ওপর আস্থা-বিশ্বাস হারিয়ে ফেলেন, সেই দায়িত্ব তাঁদেরকে নিতে হবে।’

দ্রব্যমূল্য ও আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী আমীর খসরু বলেন, ‘দ্রব্যমূল্য, আইনশৃঙ্খলার ব্যাপারে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে আমার বিশেষ কোনো প্রত্যাশা নেই। দ্রব্যমূল্য, আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে রাখতে হলে আপনাকে জনগণের সমর্থিত, জনগণের কাছে দায়বদ্ধ হতে হবে। রাজনৈতিক “ওয়েট” ছাড়া এ ধরনের সরকারের পক্ষে সমাধান করা সম্ভব নয়। সরকারের এমপি-মন্ত্রীদের, সেই দলের নেতা-কর্মীদের প্রতিদিন-প্রতিনিয়ত জনগণের কাছে জবাবদিহি থাকতে হবে। নির্বাচন হচ্ছে গণতন্ত্রের বাহক। নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠিত হলে আপনারা দেখবেন, এ ধরনের সমস্যা, আইনশৃঙ্খলা-দ্রব্যমূল্য ক্রমান্বয়ে একটা সহিষ্ণু অবস্থায় ফিরে আসবে।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, ‘১৬ বছর ধরে আমাদের বিএনপির নেতা-কর্মীরা গুমের শিকার হয়েছেন, খুনের শিকার হয়েছেন। ৬০-৭০ লাখ মিথ্যা মামলার শিকার হয়েছেন, পুলিশের হেফাজতে মৃত্যুবরণ করেছেন। আমরা যখন জেলখানায়, আমাদের উপস্থিতিতে বিএনপির নেতা-কর্মীরা বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুবরণ করেছেন। দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে চিকিৎসা না দিয়ে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে। আমাদের নেতা-কর্মীরা চাকরি-ব্যবসা হারিয়েছেন, বাড়িতে থাকতে পারেন নাই। পালিয়ে বেড়িয়েছেন। কী জন্য? বাংলাদেশের জনগণের ভোটসহ সব অধিকার ফিরিয়ে আনার জন্য। বাংলাদেশের জনগণের মালিকানা ফিরিয়ে আনার জন্য।’
নেত্রকোনায় গণসংবর্ধনায় বাবর বললেন, দেশে এখনো ষড়যন্ত্র চলছে

আমীর খসরু বলেন, ‘জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে সবচেয়ে বেশি মৃত্যুবরণ করেছেন বিএনপির নেতা-কর্মীরা। সবচেয়ে বেশি নেতা-কর্মী জেলে গিয়েছেন। সবচেয়ে বেশি নেতা-কর্মী পঙ্গু হয়েছেন বিএনপির। জুলাই-আগস্টের হিসাব দরকার। এখনো সংখ্যার দিক থেকে সবচেয়ে বেশি হাসপাতালে আছেন বিএনপির নেতা-কর্মীরা। জুলাই-আগস্টের ৩৬ দিনের আন্দোলনে সবচেয়ে বেশি ত্যাগ স্বীকার করেছেন বিএনপির নেতা-কর্মীরা। এ কথাটা আমি আলাদাভাবে বলতাম না। কেন বলছি, শেখ হাসিনার পতনের পেছনে আমরা সবাই মিলে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দেওয়ার জন্য। সবচেয়ে বড় দল হয়েও আমরা কিন্তু অনেক কিছু সহ্য করে যাচ্ছি। সুতরাং সহ্য করতে হবে ও সহনশীল হতে হবে। এখন ওনারা আজকে সংস্কারের গল্প শোনাচ্ছেন। বাংলাদেশে যত সংস্কার হয়েছে, এসব বিএনপির আমলে হয়েছে। আগামী দিনে যে সংস্কার হবে, সেটাও বিএনপির নেতৃত্বে হবে।’

সমাবেশে প্রধান বক্তা ছিলেন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক (কুমিল্লা অঞ্চল) মোহাম্মদ সেলিম ভূঁইয়া। বিশেষ অতিথি ছিলেন কেন্দ্রীয় বিএনপির অর্থনীতিবিষয়ক সম্পাদক খালেদ হোসেন মাহবুব, কুমিল্লার সহসাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাক মিয়া, সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক রুমিন ফারহানা, জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক জহিরুল হক প্রমুখ। জেলা বিএনপির আহ্বায়ক এম এ মান্নানের সভাপতিত্বে সমাবেশ সঞ্চালনা করেন জেলা বিএনপির সদস্যসচিব সিরাজুল ইসলাম।






Shares