বিদ্যালয় গায়েব!
স্টাফ রিপোর্টার,ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে: জায়গা দখলে বাধা স্কুল।আর তাই স্কুলটিকে নিশ্চিহ্ন করার পরিকল্পনা করে এবার ভূমিদস্যুরা। স্কুলের বেড়া,দরজা-জানালা খুলে নিয়েছে তারা।নিয়ে গেছে বেঞ্চ,চেয়ার-টেবিল। গায়েব করে দিয়েছি বিদ্যালয়ের সাইনবোর্ডও। এই অবস্থায় বন্ধ হয়ে গেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জঙ্গলীসার বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়টি। বিদ্যালয়ের অবশিষ্ট বেড়া-চালা আর সম্পদ রক্ষায় রাত জেগে পাহাড়া দিচ্ছেন বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সদস্য ও শিক্ষকরা।
সরজমিনে সেখানে গিয়ে দেখা যায়,বিদ্যালয়ের দক্ষিন পাশের ঘরটির চালা ছাড়া কোন কিছু নেই। পশ্চিম পাশের ঘরটির অর্ধেকাংশও খুলে নেয়া হয়েছে। জানা যায়, ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদরের বুধল ইউনিয়নের জঙ্গলীসার গ্রামের ৩১৯ দাগের ১০ শতক পরিমান ডোবা ভরাট করে ২০০৪ সালের ১ জানুয়ারি গ্রামবাসী নিজ উদ্যোগে টিনশেড একটি ঘরে বেসরকারি এই প্রাথমিক বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন। ১৫০ শিক্ষার্থী ও চার জন নারী শিক্ষক নিয়ে যাত্রা শুরু হয় এর।সময় পরিক্রমায় বুধল বাজার লাগোয়া বিদ্যালয়টির জায়গার মুল্য বেড়েছে কয়েকগুন। সেখানে এক শতক জায়গার দাম এখন ১০ লাখ টাকা। মুল্যবান এই জায়গায় মার্কেট করার নিয়ত করেছেন গিয়াস উদ্দিন ও সাত্তার মিয়া গং। সেই লক্ষ্যে দীর্ঘদিন ধরেই তারা বিদ্যালয়টি বন্ধের চেষ্টায় তৎপর। এর আগেও বিদ্যালয়ের টেবিল, চেয়ার, বেঞ্চ, ব্ল্যাকবোর্ড, দরজা-জানালা ও বেড়া ভেঙ্গে ফেলে দেয় এরা। তখন বিদ্যালয়ের দেড় শতাধিক শিশু শিক্ষার্থীকে ক্লাস করতে হয় খোলা আকাশের নিচে।এরপর বিদ্যালয়ের মাঠ আর চারিপাশে বাশের স্তুপ,বনের কুঞ্জি,লাকড়ীর স্তুপ ফেলে ,টং ঘর বসিয়ে ছাত্রছাত্রীদের আসা-যাওয়ায় বাধার সৃষ্টি করা হয়।বিদ্যালয়ের নলকুপের ওপর বাশের স্তুপ ফেলে বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের পানি খাওয়ার পথ বন্ধ করে দেয়া হয়। সর্বশেষ বিদ্যালয়টিকেই প্রায় নিশ্চিহ্ন করে দেয়া হয়েছে। জানা গেছে,গিয়াস উদ্দিন ও সাত্তার মিয়া বিদ্যালয়ের জায়গাটিতে মার্কেট নির্মাণের উদ্দেশ্যে স্থায়ী বন্দোবস্ত নিতে ২০১২ সালের ৪ জুলাই জেলা প্রশাসক বরাবর একটি আবেদন করেন। আবেদনে উল্লেখ করা হয়, পাশের দাগের (৩১৮ দাগ) জমি তাদের। তাই জায়গাটি স্থায়ীভাবে বন্দোবস্ত পাওয়া তাদের অগ্রাধিকার। আবেদনের প্রেক্ষিতে তদন্ত করে সেখানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়ায় জেলা প্রশাসক তাদের আবেদন নাকচ করে দেন। ওই বছরের ২৯ আগস্ট স্থানীয় ইউনিয়ন ভূমি সহকারি কর্মকর্তা তদন্তপূর্বক জায়গাটি বন্দোবস্ত দেওয়ার ব্যাপারে সদর উপজেলার সহকারি কমিশনারের (ভূমি) নিকট সুপারিশ প্রতিবেদন জমা দেন। একই বছরের ২৬ সেপ্টেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে কৃষি খাস জমি ব্যবস্থাপনা ও বন্দোবস্ত কমিটির সভায় এ জায়গাটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অনুকুলে অকৃষি নীতিমালা অনুযায়ি শ্রেণী পরিবর্তন সাপেক্ষে বন্দোব¯ত দেওয়ার সিদ্ধাšত হয়। এরপরই বিদ্যালয়টি উচ্ছেদে নানা অতৎপরতা শুরু করে ঐপক্ষ। ২০১২ সালের ২৭ আগস্ট তারা বিদ্যালয়ের সামনের রাস্তায় জোরপূর্বক আধা পাকা দোকানঘর নির্মাণ করে। বিষয়টি জেলা প্রশাসককে জানালে তার নির্দেশে একজন ম্যাজিস্ট্রেট ঐ বছরের ১৬ সেপ্টেম্বর এসব স্থাপনা ভেঙ্গে ফেলেন। এর জের ধরে ওই বছরের ২৫ নভেম্বর তারা বিদ্যালয়ে সন্ত্রাসী হামলা চালায়। বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি মো: জাহের মিয়া জানান,বিদ্যালয়টি সরকারী খাস জায়গায় প্রতিষ্ঠিত। জায়গাটি স্থায়ীভাবে বিদ্যালয়ের নামে বন্দোবস্ত দেয়ার প্রক্রিয়া অগ্রসর হলে বিদ্যালয়ের বিপক্ষের লোকজন মিথ্যা তথ্য দিয়ে সম্প্রতি দেওয়ানী আদালতে একটি মামলা করেছেন। যাতে বিদ্যালয়ের জায়গাটিকে ডোবা উল্লেখ করে বলা হয় এই ডোবার পানি দিয়ে সেচকার্য ও চাষাবাদ চালানো হয়। এই মামলার প্রেক্ষিতে আদালতের নির্দেশ মতে একজন এডভোকেট কমিশনার গত ১০ ই জুন জায়গার বাস্তব অবস্থা পরিদর্শন করতে আসেন। তার পরিদর্শনের পরপর জংগলীসার গ্রামের মৃত সুলতান মিয়ার ছেলে জালাল মিয়া দলবল নিয়ে সেখানে এসে ‘বিদ্যালয়টি ভাঙ্গিয়া গুড়া করিয়া ফেল ও সব মালামাল লুট করিয়া নিয়া যা’ বলে হুকুম দেয়। এরপরই তার সঙ্গে দেশীয় অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে আসা লোকজন বিদ্যালয়ের বেড়া,দরজা-জানালা,আসবাবপত্র নিয়ে যায়।এ ঘটনায় জালাল মিয়াকে প্রধান আসামী করে ৩৫ জনের বিরুদ্ধে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানায় একটি মামলা হয়েছে। গত ১১ ই জুন বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি জাহের মিয়া বাদী হয়ে এই মামলাটি করেন। এ বিষয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা প্রশাসক ড.মুহাম্মদ মোশাররফ হোসেন বলেন,বিষয়টি আমি শুনছি। ওসি আমাকে জানিয়েছেন। কোন অবস্থাতেই বিদ্যালয় বন্ধ হতে দেয়া হবেনা। এটি আমরা দেখবো।