র্যাব-১৪ এর মেজর, এসআই ও ৭ র্যাব সদস্যসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা
মনিরুজ্জামান পলাশ : র্যাব-১৪ এর ভৈরব ক্যাম্পের কমান্ডার মেজর এ জেড এম সাকিব সিদ্দিক, র্যাবের এসআই মোঃ এনামূল হকসহ ৭ র্যাব সদস্যসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। আজ (রবিবার) দুপুরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট নাজমুন নাহার’র আদালতে এ মামলা দায়ের করা হয়। গত ২৯ এপ্রিল মঙ্গলবার নবীনগর উপজেলার বগডহর গ্রামের হাজী রহিস উদ্দিনের পুত্র শাহনুর আলমকে র্যাব-১৪ ভৈরব ক্যাম্পের এর সদস্যরা গ্রেফতার করে। নৃশংস নির্যাতনের কারনে পুলিশ হেফাজতে তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় নিহতের ভাই মেহেদী হাসান বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করে। বিজ্ঞ আদালত আগামী ৪জুন আরো শুনানী ও অপেক্ষার জন্য রাখেন বলে বাদী পক্ষের আইনজীবি এডভোকেট খায়রুল আনাম সাংবাদিকদের জানান। রবিবারের শুনানীতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ১৬জন বিজ্ঞ আইনজীবি অংশ গ্রহণ করেন।
শাহনুর গ্রেফতার ও নির্যাতন
: বাদী মেহেদী হাসান মামলার আর্জিতে উল্লেখ্য করেন, গত ২৯ এপ্রিল মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১২টায় সাদা পোশাক পরিহিত ৩ ব্যক্তি বাদীর বাড়িতে প্রবেশ করে বাদীর চাচা সামছুল হকের কাছে রহিছ মেম্বারের ছেলেরা বাড়িতে আছে কিনা জানতে চায়। সামছূল হক জানান, শাহনুর আলম বাড়িতে আছেন। তখন তারা রহিছ মিয়ার ঘরে প্রবেশ করে পানি আনতে বলে। শাহনুর পানির জগ ও গ্লাস নিয়ে আসার সাথে সাথে অজ্ঞাতনামা আরো ৬ ব্যক্তি সাদা পোশাকে ঘরে প্রবেশ করে। ৯জনই দ্রুত তাদের কাছে রক্ষিত র্যাবের পোশাক ও অস্ত্রের মুখে তাকে চোখ ও মুখ বেধে নিয়ে যায়। এ অবস্থায় তাকে নবীনগর থানায় এনে র্যাবের গাড়িতে শুইয়ে রাখে। ওই দিন সন্ধ্যার পর তার মুখ চোখ বাধা অবস্থায় ভৈরব ক্যাম্পে নিয়ে যায়। সেখানে ২৯ এপ্রিল রাত ১১ থেকে দেড়টা পর্যন্ত ভৈরব ক্যাম্পের অধিনায়ক মেজর এ জেড এম সাকিব সিদ্দিক শাহনুর আলমের কোমড়ের নিচে ২ গাদা ও পশ্চাদেশ থেকে শুরু করে পায়ের তলা পর্যন্ত এবং হাতের কনুইয়ে নির্মন ও নৃশংস ভাবে পিটিয়ে মারাত্মক আহত করে। এক পর্যায়ে বুট জুতা দিয়ে কোমরে ও তলপেটে লাথি মারে। নির্মম ও নৃশংস নির্যাতনে শাহনুর সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়ে। সকাল সাড়ে ৮টায় জ্ঞান ফিরে এলে ৩০ এপ্রিল তাকে নবীনগর থানায় এনে পুলিশ হেফাজতে দিয়ে যায়। এ সময় নবীনগরের মৃত শরফত আলীর পুত্র আবু তাহের মিয়া (৪৫)কে থানায় ডেকে এনে তাকে বাদী করে শাহনুরসহ কয়েকজনকে আসামী করে নবীনগর থানায় মামলা নং-৮২ দায়ের করে। এ মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখিয়ে ১ মে কোর্টে চালান দেয়া হয়। মামলা দায়েরের পূর্বেই ভৈরব র্যাব ক্যাম্পের এসআই মোঃ এনামূল হক ভূইয়া ২৯ এপ্রিল একটি জব্দ তালিকা প্রস্তুত করে। অমানুসিক নির্যাতন শাহনুর আলমের শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কারা কর্তৃপক্ষ ৪ মে তাকে সদর হাসপাতালে ভর্তি করে। অবস্থার আরো অবনতি ঘটলে ৬ মে তাকে কুমিল্লা মেডিকেল হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু বরন করে। সুরতহাল রিপোর্টে তার শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। আর্জিতে উল্লেখ করা হয় শাহনুরের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের কোন থানা বা আদালতে মামলা নেই। শাহানুর এর মৃত্যুর পর পর নিহতের স্বজনরা ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবে হত্যাকান্ডের বিচার চেয়ে সাংবাদিক সম্মেলন করে।