Main Menu

সদর উপজেলায় বিএনপির প্রার্থী মনোনয়ন এবং একটি পোস্টমর্টেম

+100%-

নিজস্ব প্রতিবেদক :::সব জঙ্গনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদরে বিএনপির মনোনিত প্রার্থী হয়েছেন জেলা বিএনপির সহ সভাপতি হাজী মোঃ জাহাঙ্গীর।


প্রার্থী নির্বাচন নিয়ে গত বেশ কিছুদিন যাবৎ বিএনপির নেতাকর্মীরা ছিলেন চরম উৎকন্ঠিত ও উত্তেজিত। প্রতিদিন  জেলা বিএনপির সভাপতি এডঃ হারুন সাহেবের মৌলভী পাড়াস্হ বাসভবনে দফায় দফায় বৈঠক হয়েছে। প্রার্থীতার ব্যাপারে সবাই অনড় থাকায় প্রার্থী ঠিক করতে প্রচন্ড বেগ পেতে হয়েছে বিএনপির নেতৃস্থানীয় নেতাদের।

গত ১০ মার্চ সন্ধ্যায় শীর্ষস্থানীয় নেতারা হঠাৎ বৈঠকের স্থান বদলিয়ে চলে যান অন্য এক জায়গায়। রুদ্ধদ্বার বৈঠকে বসেন পৌর বিএনপির এক শীর্ষ নেতার বাসায়। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি সাবেক পৌর মেয়র হাফিজুর রহমান (কচি),জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি ও সদর উপজেলা সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার খালেদ হোসেন মাহবুব শ্যামল, সহ-সভাপতি জিল্লুর রহমান,সহ-সভাপতি  এডঃ গোলাম সারওয়ার খোকন, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জহিরুল হোসেন খোকন,যুগ্ম সম্পাদক এডঃ আনিছুর রহমান মঞ্জু, সাংগঠনিক সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম সিরাজ, দপ্তর সম্পাদক এবি এম মোমিনুল হক,  নগর পৌর সভাপতি অ্যাডভোকেট শফিকুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক মো. আজিম.সহ আরো কয়েকজন নেতা।বৈঠকের এক পযায়ে সেখানে উপস্হিত হন জেলা বিএনপি  সভাপতি এডভোকেট হারুন আল রশিদ।

প্রার্থীতার দৌড়ে সবচেয়ে এগিয়ে ছিলেন জেলা বিএনপি সভাপতির আর্শীবাদপুষ্ঠ বর্তমান উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান নূরে আলম সিদ্দিকী। প্রথম সারির বেশ কয়েকজন নেতারা ছিল নিরব সমর্থন ছিল তার প্রতি। নির্বাচন প্রর্থিীতার দৌড়ে সৈয়দ এমরানুর রেজার অবস্থান ছিল তার পর পরই। দলের একটি বড় অংশের সমর্থন ছিল তার প্রতি , কিন্তু শীর্ষ নেতৃত্বের অনেকে ছিলেন তার প্রতি নারাজ। তারা সম্প্রতিক সরকার বিরোধী আন্দোলনে এমরানুর রেজার গরহাজির এবং বিতর্কিত বিএনএফকে জড়িয়ে কথা উঠার কারনে তার প্রতি ছিল বিরাগ। তবে মধ্যম সারির নেতাদের এবং কর্মীদের ব্যাপক সমর্থনের কারনে শীর্ষস্থানীয় নেতৃত্বের পক্ষে তাকে এড়ানো সম্ভব ছিল না।

আবু শামীম মোঃ আরিফ প্রার্থীতার দৌড়ে প্রথম দিকে কিছুটা পিছিয়ে থাকলেও শেষ দিকে চলে আসেন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। বয়সে তরুন হওয়ায় এবং তরুন কর্মীদের অকুণ্ঠ সমর্থনে অনেকেই মনে করছিল সেই হতে পারে বিএনপির প্রার্থী। শামীম দলের কর্মীদের সমর্থন ব্যাপকভাবে লাভ করলেও নীতি নির্ধারকদের সমর্থন পেতে ব্যর্থ হয়েছেন।
আরেকজন প্রার্থী হলেন জেলা যুবদলের আহবায়ক মনির হোসেন। উনিও নিজের পক্ষে ব্যাপক প্রচারনা চালিয়েছেন। যদিও সবাই এটাকে মনে করেছে, পরিচিতি লাভের আশায় তিনি নির্বাচনের প্রর্থিীতার দৌড়ে ছিলেন।

প্রার্থীতার দৌড়ে সবচেয়ে নিস্প্রদীপ ছিলেন জেলা বিএনপির সহ সভাপতি হাজী মো. জাহাঙ্গীর। উনি প্রথম থেকেই নিরব প্রচারনা চালিয়ে গেছেন। তফসিল ঘোষণার পরে প্রাথমিক ভাবে উনি ছিলেন অনেকটাই চুপচাপ। নির্বাচনে প্রার্থী হবার ব্যাপারে উনার আগ্রহ থাকলেও , উনি প্রচন্ড উদগ্রীব ছিলেন না। প্রায় প্রতিদিনই প্রার্থীদের পদে ব্যাপক শো ডাউনের লক্ষ্য করা গেলেও উনার তেমন কোন শো ডাউন ছিল না, ছিল না নীতি নির্ধারকদের সম্পুর্ণ সমর্থন। উনার পক্ষে নিরলস পরিশ্রম করেছেন উনার কনিষ্ঠ ভ্রাতা সুহিলপুর ইুনিয়নের চেয়ারম্যান কেন্দ্রীয় মুসলীম লীগ নেতা লিটন। জাহাঙ্গীর প্রার্থীতার দৌড়ে সবসময় তাকিয়ে ছিলেন জেলা নেতৃবৃন্দের দিকে।  বৈঠকে প্রার্থীতা নিয়ে তুমুল প্রতিযোগিতা হয়েছে শামীম এবং নূরে আলম সিদ্দিকীর মধ্যে।
নূরে আলমের রাজনৈতিক ইতিহাস সে রকম শক্তিশালী ছিল না। গতবার বশির উল্লাহ জুরুর পক্ষে জোয়ার উঠায় ভাইস চেয়ারম্যান হওয়া তার পক্ষে কষ্টকর ছিল না।  শুধু মাত্র জেলা বিএনপির সভাপতি এডঃ হারুন সাহেবের প্রত্যক্ষ সমর্থনে উনি এতদূর এসেছেন। জেলা বিএনপির রাজনীতিতে শক্তিশালী  অবস্থানে আছেন জেলা বিএনপি সহ সভাপতি, সদর  উপজেলা বিএনপির সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার খালেদ হোসেন মাহবুব শ্যামল। নূর আলম হারুন সাহেবের বলয়ের নেতা  হওয়ায় স্বাভাবিক ভাবেই উনি শ্যামলের নিরন্কুশ সমর্থন পাননি।
গতকালের দীর্ঘ পাঁচ ঘন্টার বৈঠকে উপস্থিত নেতৃবৃন্দ প্রার্থীদের সম্পর্কে নিজ নিজ বক্তব্য তুলে ধরেন। বৈঠকে প্রার্থীদের ব্যাপারে চুলচেরা বিশ্লেষণ হয়েছে। বিশেষ করে আওয়ামীলীগ প্রার্থীর বাড়ী দক্ষিণ এলাকায় হওয়ায় সহ সভাপতি হাজী মো. জাহাঙ্গীরের গুরুত্ব অনেক বেড়ে গেছে। তাছাড়া নূরে আলমকে মনোনিত করলে অনেকেই বিদ্রোহ প্রার্থী হিসেবে থেকে যেতে পারে। নূরে আলমের মনোনয়নের বিরোধীতাকারীরা নূরে আলম ব্যতীত অন্য যে কারও প্রার্থীতার ব্যাপারে অনেক নমনীয় ছিলেন। গতকালর বৈঠকে দলের নীতিনির্ধারকদের প্রায় অনেকেই চেয়েছিলেন নূরে আলম দলের মনোনিত প্রার্থী হউক। কিন্তু  প্রভাবশালী একজন নেতা এ ব্যাপারে  এ ব্যাপারে প্রচন্ড আপত্তি তোলায় নূরে আলমের মনোনয়ন পাওয়াটি ঝুলে যায়।

এদিকে প্রার্থীতা নিয়ে বিএনপিতে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। নেতাকর্মীরা স্ব স্ব দৃষ্টিভঙ্গী দিয়ে একে বিশ্লেষণ করছেন। দলের মনোনয়ন প্রার্থী আবু শামীম মোঃ আরিফ জানান, নির্বাচন করব কি করব না সে ব্যাপারে এলাকার মুরব্বীদের সাথে কথা বলতে হবে। তাছাড়া ছাত্রদল যুবদল  চাচ্ছে আমি নির্বাচন করি, তাদের সাথে কথা বলার পর প্রার্থীতার ব্যাপারে আমি চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেব। তবে তিনি এ প্রতিবেদক আভাস দেন যে, নূরে আলম সিদ্দিকী , হাজী এমরানুর রেজা এবং উনার (আবু শামীম মোঃ আরিফ) মধ্য থেকে যে কোন একজন প্রার্থী হতে পারে এবং এ ব্যাপারে আলোচনা চলছে। প্রতিক্রিয়া জানার জন্য নূরে আলম সিদ্দিকী ও হাজী এমরানুর রেজাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।

জেলা বিএনপির মধ্যম সারির এক নেতা ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন, “হাজী এমরানুর রেজাকে যদি সরকার বিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় অংশ গ্রহন না কারনে অভিযুক্ত করা হয়, তাহলে নেতৃবৃন্দকে বলতে হবে হাজী মো. জাহাঙ্গীরের মনোনয়ন লাভের যোগ্যতার মাপকাঠি কি।“ জেলা ছাত্রদলের সহ সভাপতি কার্জন জানান, জাহাঙ্গীর সাহেব আন্দোলনে আমাদের সাথে মাঠে ছিলেন না কোন মিছিলেও ছিলেন না । এ ধরনের ব্যক্তি মনোনয়ন পাওয়ায় তার পক্ষে কাজ করা অনেক কঠিন হবে।

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল সদর থানা যুবদলের সদস্য সচীব বুলবুল আহমেদ মুসা এবং পৌর মহিলা দলের সিনিয়র সহ সভাপতি মোছাঃ শামছুন নাহার বেগম কে (মহিলা) ভাইস চেয়ারম্যান পদে  মনোনয়ন দেয়া হয়।






Shares