Main Menu

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলা নির্বাচন: একক প্রার্থী দিতে হিমশিম খাচ্ছে বিএনপি

+100%-

শামীম উন বাছির : জমে উঠেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলা নির্বাচন , বহুদিন থেকে নির্বাচন থেকে দুরে থাকা বিএনপির নেতা কর্মীরা এখন নির্বাচন নিয়ে চুড়ান্ত ব্যস্ত, বিশেষ করে সরাইলে  এডঃ আব্দুর রহমানের বিজয় দলের নেতা কর্মীদের অনেক চাঙ্গা কওে দিয়েছে। পাশাপাশি নেতাকর্মীরা একক প্রার্থীতার ব্যাপারে ও অনেক সচেতন। রবিবার মনোনয়ন পত্র দাখিলের চুড়ান্ত সময়। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার রাজধানী হিসেবে খ্যাত ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদরের উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীতা চুড়ান্ত করতে গত কয়েকদিন ধরে দফায় দফায় বৈঠক হচ্ছে। এসব বৈঠকে জেলা বিএনপির নীতিনির্ধারকরা হিমসিম খাচ্ছে একক নেতা নির্বাচনে।
গত শুক্রবার গভীর রাত পর্যন্ত  বিএনপির সভাপতি আলহাজ্ব এডঃ হারুন আল রশিদ এর বাসভবনে দফায় দফায় আলোচনা হয়। প্রার্থীরা সবাই স্ব শরীরে হাজির হয়ে দায়িত্ব অর্পণ করে দেন জেলা নেতৃবৃন্দের ওপর। জেলা নেতৃবৃন্দ রুদ্ধশ্বাস বৈঠকে বসেন প্রার্থীতা চুড়ান্ত করার ব্যাপারে। শেষ পর্যন্ত চুড়ান্ত সিদ্ধান্তে উপনিত হতে পারেননি নেতৃবৃন্দ। এরপর গত শনিবার রাতেও বহু দীর্ঘ আলোচনা করা হয় হারুন আল রশিদের বাড়িতে। এখানে দীর্ঘ বক্তব্য রাখেন দলের সাধারণ সম্পাদক জহিরুল হক খোকন। উনি ওনার দীর্ঘ বক্তৃতায় দলের একক প্রার্থীর উপর জোর দেন। তিনি বলেন, দল থেকে যদি একাধিক প্রার্থী হয়, তাহলে নেতা কর্মীদের পক্ষে কারো কাছে দলের পক্ষ থেকে ভোট চাওয়া অসম্ভব হবে। এ বৈঠককে কেন্দ্র করে নেতাকর্মীদের ভিড় জমে মৌলভীপাড়স্থ হারুন আল রশিদ সাহেবের বাসায়। শুক্রবারের বৈঠকে থাকা জেলা বিএনপির সহ সভাপতি ও সাবেক পৌর মেয়র হাফিজুর রহমান মোল্লা (কচি) এইদিন ছিলেন অনুপস্থিত। দীর্ঘ আলোচনা থেকে সাধারণ সম্পাদক জহির সব প্রার্থীকে মনোনয়ন জমা দেয়ার কথা বলেন। পাশাপাশি তিনি ৫ তারিখ পর্যন্ত সময় নেন একক প্রার্থীতা চুড়ান্ত করার জন্য।
দলের প্রার্থীতার ব্যাপারে এগিয়ে আছেন জেলা বিএনপির সহ সভাপতি আলহাজ্ব সৈয়দ এমরানুর রেজা এবং বর্তমান উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান নূরে আলম সিদ্দিকী।
আলহাজ্ব সৈয়দ এমরানুর রেজা বহু পূর্ব থেকেই বিএনপির বাজনীতির সাথে জড়িত, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার যে কয়জন রাজনীতিবিদ মরহুম প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সংস্পশে এসছিলেন তাদের মধ্যে তিনি অন্যতম। এমরানুর রেজা জিয়াউর রহমানের সাথে বিভিন্ন দেশও সফর করেছিলেন। মরহুম রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান একবার মেধাবী ছাত্রদের নিয়ে নৌ বিহার করেছিলেন, এ সময়ও উনার উপস্থিতি ছিল। জিয়াউর রহমান ১৯৮১ সালের ৩০ মে চট্টগ্র্মে শহীদ হন। এ সফরেও হাজী এমরান তার সাথে যাবার কথা ছিল, মার অনুমতি না থাকায় প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান উনাকে সাথে নেননি।
সৈয়দ এমরানুর রেজার সাথে বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বের খুব উঞ্চ সম্পর্ক রয়েছে, দলের শীর্ষ নেতৃত্ব উনাকে ব্যক্তিগতভাব চিনেন।
তিনি পূর্বেও উপজেলা চেয়ারম্যান ছিলেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় উনার পরিচিতি একজন ভাল মানুষ হিসেবেই। দলের একটি বৃহৎ অংশ মনে করেন হাজী এমরান কে মনোনয়ন দেয়া হলে এ আসনে বিএনপির বিজয় কেউ ছিনিয়ে নিতে পারবে না। অন্যদিকে, আরেকটি অংশ উনার সততা নিয়ে প্রশ্ন না তুললেও সাম্প্রতিক আন্দোলনে উনার অনুপস্থিতিকে খুব ভাল চোখে দেখছে না।নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নেতা জানান, বিতর্কিত বিএনএফ গঠনে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় উনার ভূমিকা ছিল। তার উপর হাজী এমরানুর রেজা সম্পর্কে যে অভিযোগটি সবচেয়ে বেশী উচ্চারিত হয় সেটি হল অলসতা।
উপজেলা নির্বাচনে আরেকজন শক্তিশালী প্রার্থী হলেন বর্তমান সদর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান নূরে আলম সিদ্দিকী। গত নির্বাচনের পূর্বে রাজনৈতিকভাবে তেমন কোন শক্ত অবস্থানে ছিলেন না তিনি। নির্বাচনে জয়লাভ করার পর আস্তে আস্তে চলে আসেন জেলা বিএনপির নেতৃবৃন্দের কাছে। অর্থনৈতিকভাবে বলীয়ান হওয়ায় দলের কর্মসূচিতে বিশেষভাবে সহায়তা করেন, পশ্চিম এলাকার বাসিন্দা হওয়ায় উনি স্বাভাবিক ভাবেই সভাপতি হারুন আল রশিদ বলয়ের ব্যক্তি।
সাম্প্রতিক সময়ে বিএনপিতে শক্তিশালী বলয় তৈরী করেছেন ইঞ্জিঃ শ্যামল। ছাত্রদল, যুবদল এবং বিএনপির অনেক শীর্ষ নেতৃত্ব উনার বলয়ের সাথে মিলে গেছেন। যে ক’জন ব্যক্তি এখনো হারুন সাহেবের সাথে আছেন তাদের মধ্যে অন্যতম নূরে আলম সিদ্দিকী। তাছাড়া পশ্চিম এলাকায় নূরে আলম সিদ্দিকীর একটি ভোট ব্যাংক রয়েছে, সব মিলিয়ে নূরে আলম সিদ্দিকী এগিয়ে থাকলেও জেলা বিএনপির অনেক নেতা কর্মীরা উনাকে Election Winning Candidate হিসেবে মানতে পারছেন না। তারা মনে করেন গত উপজেলা নির্বাচনে বিএনপি দলগতভাবে অংশগ্রহণ না করায় এবং প্রতিদ্বন্দী হিসেবে শক্তিশালী কেউ না থাকায় উনার নির্বাচন বৈতরনী পার হতে খুব একটা বেগ পেতে হয়নি। সাধারণ নেতা কর্মীরা আরো মনে করেন যে, নূরে আলম সিদ্দিকীর চেয়ে এমরানুর রেজা অনেক বেশী পরিনত এবং ভোটারদের কাছে অনেক বেশী গ্রহণযোগ্য। গত শুক্রবার অনুষ্ঠিত বৈঠকে প্রার্থীরা স্ব স্ব অবস্থানে অটুট থাকায় বিএনপি নেতৃত্ব একজন নতুন কাউকে খোজছে এ পদের জন্য। বৈঠকে উপস্থিত জেলা বিএনপির একজন শীর্ষ স্থানীয় নেতা এইরকমই আভাস দেন।
এমন আভাসের ভিত্তিতে সবাই মনে করেছেন দলের নমিনেশন পেতে পারেন সদ্য কারামুক্ত নেতা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জহিরুল ইসলাম। উনি এতদিন সরাসরি ভাবে নির্বাচনে রাজি না থাকলেও বর্তমান পরিস্থিতিতে উনাকেই বোধ হয় নিতে হবে দলের ঝান্ডা।
বিএনপির উপজেলা নির্বাচন নিয়ে চলছে অনেক হিসাব কিতাব। এ নির্বাচনে হাজী এমরানুর রেজা মনোনয়ন পেলে সামনে আগত পৌর নির্বাচনে প্রার্থীতা ব্যাপারে শুরু হবে আরেক প্রতিদ্বন্দিতা। নেতৃত্বের একাংশ সাধারণ সম্পাদক জহিরকে উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থীতা দিয়ে জেলা বিএনপির সহ সভাপতি হফিজুর রহমান মোল্লা কচি-র পৌর নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার পথটিকে কন্টকমুক্ত করতে চাচ্ছেন।সবদিক মিলিয়ে উপজেলা নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থীতা নিয়ে নেতৃবৃন্দ একটি জটিল অবস্থানে আছেন।
জেলা বিএনপির নেতৃত্ব একক প্রার্থী ঠিক না করতে পারলে তা কোনভাবেই দলের জন্য সুখবর হবে না বলে মনে করেন সংশিষ্ট মহল।






Shares