টক অব দি টাউন : লিপীকা গোমেজের অপমৃত্যু।
খ্রীষ্টিয়ান মেমোরিয়াল হাসপাতালে মহিলার রহস্যজনক মৃত্যু। নিয়ে শহরজুড়ে জল্পনা-কল্পনা
শামীম উন বাছির: ব্রাহ্মণবাড়িয়ার একটি প্রাইভেট হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দেনার চাপে কর্মরত সহকারী হিসাব রক্ষক এক মহিলা আত্মহত্যার ঘটনায় শহরে চলছে আলোচনা ও সমালোচনা। শহরের বণিক পাড়ায় খ্রীষ্টিয়ান মেমোরিয়াল হাসপাতালে ঘটনাটি ঘটে। হাসপাতালের কর্তৃপক্ষ, কর্মকর্তা-কর্মচারী, প্রতিবেশী ও নিহতের স্বজনদের বক্তব্যে ব্যাপক গড়মিল পাওয়া গিয়েছে। ইতিমধ্যে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে বিভিন্ন কৌশল ও মিথ্যা প্রচারনা চালানোর অভিযোগ উঠেছে।
গত ৮ জানুয়ারী সকালে ওই হাসপাতালের পেছন থেকে হাসপাতালের সহকারী হিসাব রক্ষক লিপীকা গোমেজ (৪৫) এর মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। জানা যায়, আড়াই বছর পূর্বে লিপীকা গোমেজ ওই হাসপাতালে সহকারী হিসাব রক্ষক পদে যোগদান করেন। গত কয়েক মাস পূর্বে হিসাব নিয়ে গড়মিল দেখা দেয়। গড়মিলের জন্য দায়ী করে মোটা অংকের অর্থ দেয়ার জন্য চাপ দেয়। এরপর থেকে তাকে হাসপাতালের বাহিরে যেতে দেওয়া হত না। এমনকি ধর্মীয় উৎসব বড়দিনসহ অসুস্থ্য হওয়ার ক্ষেত্রেও ছুটি দেয়া হয়নি। গত ৬ মাস ধরে তাকে বন্দি অবস্থায় হাসপাতালে থাকতে হয়েছে বলে জানা যায়। ৮ জানুয়ারী কর্তৃপক্ষকে টাকা ফেরত দেওয়ার সময় সীমা নির্ধারন ছিল। ঘটনার আগের দিন রাতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ৬ তলায় বসবাসরত লিপিকা গোমেজকে টাকা দিতে বলেন। পরে দিবে বলে জানালে তাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। দিতে না পারলে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে মালিকপক্ষ জানায়। এরপর দিনই টাকা যোগাড় না হওয়ায় ৭ তলা থেকে লাফিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করে। তবে এলাকাবাসীর অনেকেই ধারনা করছে, হত্যার পর ছাদ থেকে ফেলে দেয়া হতে পারে। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবী অনুযায়ী ছাদ থেকে পরার পরও জীবিত ছিল। জীবিত থাকাকালীন ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালে নেয়া হয়। হাসপাতালের চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষনা করেন। ওই হাসপাতালে চিকিৎসা না দিয়ে কেন দ্রুত ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারী হাসপাতালে নেয়া হলো তা নিয়ে ধুম্রজালের সৃস্টি হয়েছে। এলাকাবাসী ধারনা লোক দেখানোর জন্য ও ঘটনা ভিন্নখাতে প্রভাবিত করার জন্য সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিল।
হাসপাতালের পরিচালক ডাঃ ডিউক চৌধুরী জানান, বাহিরের লোকজন থেকে ধার-দেনা করায় মানুষিক ভাবে বিপর্যস্ত হয়ে আত্মহত্যার ঘটনা ঘটাতে পারে। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের নিকট তার কোন দেনা ছিল না।
তবে নিহতের স্বামী নরভাট লরেন্স জানান, আড়াই বছর যাবত আমাদের মধ্যে কোন যোগাযোগ ও সম্পর্ক ছিল না। নিহতের বড় মেয়ে জিনেট রিতা লরেন্স জানান, ঘটনার আগের দিন রাতে তাহার মা ফোনে ৪০ হাজার টাকা যোগাড় করে দিতে বলেন। হাসপাতালের হিসাবে কিছুটা গড়মিল দেখিয়ে কর্তৃপক্ষ আমার নিকট টাকা দাবী করেছে। পরিশোধ না করা পর্যন্ত বন্দি অবস্থায় রয়েছেন। টাকা পরিশোধ করে চাকুরি ছেড়ে অন্যত্র চলে যাবেন বলে জানান। মালিকপক্ষ টাকার জন্য ছুটি দিচ্ছে না। এমনকি বড়দিনেও ছুটি দেয়নি। অথচ তার মা সহকারী হিসাব রক্ষক পদে ছিলেন। প্রধান হিসাব রক্ষককে এ ঘটনায় কোন দায়ী করা হয়নি। এসময় তাহার সঙ্গে থাকা অন্য দু’বোনের কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুর রব জানান, প্রাথমিক তদন্তে ঘটনাটি আত্মহত্যা বলেই মনে হচ্ছে। তদন্ত শেষ হওয়ার পর মূল রহস্য বলা সম্ভব হবে।