পাল্টে গেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের চিত্র্। নায়ার কবিরকে জয়যুক্ত করতে মোকতাদির চৌধুরীর আহবান
শামীম উন বাছির : ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসনের সংসদ সদস্য র.আ.ম ওবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী বলেছেন, আগামী ৫ জানুয়ারী নির্বাচনে নায়ার কবিরকে আনারস মার্কায় ভোট দিন এবং জননেত্রী শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করুন। তিনি গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধায় আশুগঞ্জের আড়াইসিধায় নায়ার কবিরের নির্বাচনী জনসভায় টেলিকনফারেন্সে এ কথা বলেন।
এতেই ভোটের আগ মুহুর্তে পাল্টে গেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) আসনের চিত্র। ওই দুই উপজেলার আওয়ামী লীগের একটি বড় অংশ শেষ মুহুর্তে এসে স্বতন্ত্র প্রার্থী নায়ার কবিরের পক্ষে প্রকাশ্য অবস্থান নেওয়ায় এখন হাড্ডাহাডি লড়াইয়ের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। নৌকা না থাকলেও এ আসনে ছাড় পাচ্ছে না জাতীয় পার্টির লাঙ্গল।
নতুন কারণে নির্বাচনী হিসাব-নিকাশ মেলানো বড়ই কঠিন। কি হবে নির্বাচন? কে হবে সরাইল-আশুগঞ্জ এলাকার সাংসদ, তা নিয়ে চুলচেরা বিশেস্নষণ চলছে সব খানে। চায়ের স্টল। হোটেল রেস্টুরেন্ট সব খানেই এক প্রশ্ন। কাকে ভোট দেবেন? এ প্রশ্ন করেই প্রশ্নকারী নীরব হয়ে যান। এ চিত্র গত কয়েক দিন ধরে। তবে ভোটারদের মধ্যে গুমোট ভাব বিরাজ করছে। কাকে ভোট দেবে তা খোলাসা করে বলছে না কেউ। শুধু পোস্টার ও ব্যানারের কারণেই বোঝা যায় নির্বাচন আসছে। আর যখন প্রার্থীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোট প্রার্থনা করেন সে সময়ই মনে হয় নির্বাচনের জন্য ভোট প্রার্থনার কাজটি চলছে। সব কিছু মিলিয়ে এবারের নির্বাচন খুবই কঠিন হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে এই অঞ্চলের প্রভাবশালী একটি পরিবারের একজন প্রার্থী হওয়ায় নির্বাচনী হিসাব-নিকাশ কেহই মেলাতে পারছে না। নায়ার কবির সাবেক উপমন্ত্রী ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট হুমায়ুন কবীরের সহধর্মিণী। হুমায়ুন কবীর ১৯৯৬ সালে এখান থেকে নির্বাচনে অংশ গ্রহনের জন্য প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। এই আসনের প্রতিজন মুরুব্বীকে তিনি ব্যক্তিগতভাবে চিনেন। এসব এলাকার গ্রামীন সমস্যাগুলো খুবই সুন্দভাবে সমাধান করতেন। এতে নির্বাচন আরো জমজমাট হয়ে উঠেছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভার পৈরতলার মরহুম বজলু মিয়ার বংশের ঐতিহ্য রক্ষায় নায়ার কবিরকে জয় করার চেষ্টা করছে তার গোষ্ঠীর লোকজন। তাদের আত্মীয়রা এ আসনের বিভিন্ন এলাকার প্রভাবশালী ব্যক্তি। স্বাধীনতার পর নায়ার কবিরই ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর সভার প্রথম মহিলা মেয়র প্রার্থী ছিলেন। এ নিয়ে সাধারণ ভোটার ও নারী ভোটারদের মধ্যে বেশ উৎসুক্যের সৃষ্টি হয়েছে।
এই যখন অবস্থা তখন জিয়াউল হকের সমর্থকরা আঞ্চলিকতার দোহাই দিয়ে নিজেদের পক্ষে ভোট টানার চেষ্টা করছে। বলা হচ্ছে, জিয়াউল হক সংশ্লিষ্ট আসনের এলাকার বাসিন্দা। অন্যদিকে, নায়ার কবির থাকেন জেলা সদরে। এমন পরিস্থিতিতে শেষ মুহুর্তে এসে আওয়ামী লীগের অনেক শীর্ষ নেতা নির্বাচন থেকে নিজেদেরকে গুটিয়ে নিয়েছে।
নেতাকর্মীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, স্বতন্ত্র প্রার্থী নায়ার কবিরের স্বামী হুমায়ুন কবির সাবেক উপমন্ত্রী ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ-সম্পাদক। এ পরিচিতির সুবাদে আওয়ামী লীগের একটি অংশ নায়ার কবিরের পক্ষ নেয়। পরবর্তীতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ (সদর-বিজয়নগর) আসনের সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতা র.আ.ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী নায়ার কবিরের পক্ষে অবস্থান নিলে পরিস্থিতি আরও পাল্টে যায়। আশুগঞ্জ আওয়ামী লীগের একটি বড় অংশ প্রকাশ্যে নায়ার কবিরের পক্ষে মাঠে নামেন। সরাইলে আাওয়ামী লীগের বিবাদমান দুইটি অংশের কেউই নির্বাচনে অংশ না নেওয়ায় প্রায় সবাই একসাথে আনারস প্রতীকের নায়ার কবিরের পক্ষে মাঠে নামেন।
অবশ্য এমন পরিস্থিতিতে আঞ্চলিকতাকে কাজে লাগিয়ে এবার নির্বাচনী বৈতরণি পার হতে চাচ্ছেন জিয়াউল হক মৃধার সমর্থকরা। এলাকায় বলা হচ্ছে, নায়ার কবির এ আসনের অন্তর্ভূক্ত কোনো উপজেলার বাসিন্দা নন। ’ভাড়াটিয়া’ কোনো প্রার্থীকে নির্বাচিত করলে এ আসনের জন্য অসম্মানের হবে। এছাড়া এমপি প্রার্থী থাকা অবস্থায় বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকান্ডের কথাও তুলে ধরা হচ্ছে ভোটারদের কাছে।
এ প্রসঙ্গে আশুগঞ্জ উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহবায়ক মো. শাহীন সিকদার বলেন, জাতীয় পার্টির প্রার্থীর পক্ষে কাজ করতে হবে এমন কোনো সিদ্ধান্ত কেন্দ্র থেকে আমাদেরকে জানানো হয় নি। এছাড়া বর্তমান সংসদ সদস্য ক্ষমতায় থাকাকালে তেমন কোনো উন্নয়ন কর্মকাণ্ড না করায় আমরা তার সঙ্গে নেই। নায়ার কবির আওয়ামী লীগের লোক বলে আমরা তার পক্ষে কাজ করে যাচ্ছি।
বিষয়টি স্বীকার করে আশুগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হাজী মো. সফিউল্লাহ শুক্রবার দুপুরে বলেন, কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত তো সবারই জানা। কিন্তু আমার উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন পর্যায়ের নেতারা যে যার মতো কাজ করায় এখন আমি নিজেই চুপ হয়ে গেছি।
বিশ্লেষকদের ধারনা, জিয়াউল হকের প্রতি জনসাধারনের সমর্থন কোন সময়েই ছিল না। শুধু মাত্র জোটগত কারনেই তিনি নির্বাচনী বৈতরনী পার হয়েছিলেন। এবার ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সব কয়টি আসনের চেয়ে এই আসনটির নির্বাচন সবচেয়ে প্রতিদ্ধনিতাপূর্ণ হবে।