আশায় বুক বেঁধেছে দেশবাসী।অবশেষে কথা হলো, গণভবনে আমন্ত্রণ
ডেস্ক ২৪ :সন্ধ্যা ছয়টায় কথা হবে দুই নেত্রীর। এ নিয়ে সারাদেশে রুদ্ধশ্বাস অপেক্ষা বিকাল থেকেই। কিন্তু ছয়টা বাজে। ফোনালাপ হয় না। দুই নেত্রীই অপেক্ষায় ছিলেন কে ফোন করবেন। অবশেষ সন্ধ্যা ছয়টা বিশ বাজার কিছুক্ষণ পর প্রধানমন্ত্রী ফোন করেন বিরোধীদলীয় দলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়াকে। শনিবার সন্ধ্যায় টেলিফোনে কথায় আওয়ামী লীগ সভানেত্রী হরতাল প্রত্যাহার করে সোমবার সন্ধ্যায় গণভবনে বিএনপি চেয়ারপারসনকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন বলেও প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ সূত্র জানায়। একটি বেসরকারি টেলিভিশনে ভিডিওতে দেখা যায়, প্রধানমন্ত্রী মোবাইল ফোনে খালেদা জিয়াকে বলেন, ‘আপনি হরতালটা প্রত্যাহার করুন।…আপনিই তো কাল বলেছেন, সংলাপের উদ্যোগ নিতে হবে’। এরপর খালেদা জিয়া কী বলেছেন, তা শোনার কোনো উপায় ছিল না। তবে প্রধানমন্ত্রী আবারও হরতাল প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলছিলেন, ‘আপনি তো বলেছিলেন আলোচনার উদ্যোগ নিতে। সৈয়দ আশরাফ তো এর মধ্যেই মির্জা ফখরুল ইসলামের সাথে কথা বলেছেন’। অনেক নাটকীয়তা, আন্দোলন আর তা ঠেকানোর হুমকি। নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে দুই জোটের বিপরীত অবস্থানে সারাদেশে উদ্বেগ। এমন পরিস্থিতিতে বিরোধী জোটের পক্ষ থেকে আসলো তিন দিনের টানা হরতালের ডাক। আসে সমাধান না হলে আরও কঠোর আন্দোলনের ঘোষণাও। আবার এর মধ্যেই আবার আশার আলো। কথা হবে দুই নেত্রীর মধ্যে। শুরুটা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়াকে তিনি ফোন করবেন-এমন একটি কথা গত সপ্তাহেই হয় আওয়ামী লীগের বৈঠকে। শুক্রবার আনুষ্ঠানিকভাবে তা জানিয়ে দেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু। কিন্তু ওই বিকালেই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের জনসভায় বিরোধীদলীয় নেতা সংলাপের জন্য সরকারকে দুইদিনের সময় বেঁধে দিয়ে তিনদিনের হরতালের ডাক দেয়ার পর আবার তৈরি হয় অনিশ্চয়তা। রাজনীতির হারজিতের খেলায় প্রধানমন্ত্রী আবার পিছিয়ে যাবেন না তো? শনিবার সকালে রাজধানীতে এক আলোচনায় দপ্তরবিহীন মন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত জানালেন, প্রধানমন্ত্রী কথা রাখবেন। সমঝোতার যে পথ তৈরি হয়েছে, তা নষ্ট হতে দেবে না সরকার। সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির বৈঠকের পরই বিরোধীদলীয় নেতাকে ফোন দেবেন বিরোধীদলীয় নেতা। তবে অত সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়নি। সন্ধ্যা বহুদূর, বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়ার লাল টেলিফোনে প্রধানমন্ত্রীর লাল ফোন থেকে কল গেলো দুপুরেই। একবার, দুইবার না, পুরো আধা ঘণ্টা চেষ্টা করলেন প্রধানমন্ত্রী। গণমাধ্যমের কল্যাণে সে খবর রাষ্ট্র হলো তৎক্ষণাৎ। বিরোধীদলীয় নেতার কর্মকর্তারা জানালেন, কথা বলতে হলে আবার ফোন করতে হবে রাত নয়টায়। এ নিয়ে শুরু হয় সমালোচনা। তবে কিছুক্ষণ পর প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ জানান, বিরোধীদলীয় নেতাই পাল্টা ফোন করবেন প্রধানমন্ত্রীকে। আর তা হবে সন্ধ্যা ছয়টার মধ্যেই। তাহলে কি দুই নেত্রীর মধ্যে বরফ গলছে? আশার আলো দেখছে গোটা দেশ। অপেক্ষায় আছেন বিশিষ্ট নাগরিকরাও। বলছেন, এই দেশ সরকার এবং বিরোধী দল সবার। দেশের স্বার্থে নিজের অবস্থান থেকে সরে আসবে দুই পক্ষ, সে প্রত্যাশাও করছেন তারা। প্রবীণ আইনজীবী রফিকুল হক বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিরোধীদলীয় নেতার কথপোকথন সঙ্কট সমাধানের জন্য ইতিবাচক একটি দিক। এতদিন যে অচলাবস্থা ছিল এর মাধ্যমে তা কেটে যাবে বলে আশা করি’। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘সঙ্কট সমাধেনে দুই নেত্রীর কথপোকথন একটি ইতিবাচক দিক। আলোচনা হতে হবে আন্তরিকতার সঙ্গে। সঙ্কট সমাধানের জন্য দুই পক্ষের মধ্যে আন্তরিকতা লাগবে। দুই পক্ষকে ছাড়ের মানসিকতা থাকতে হবে। তাহলে সঙ্কট সমাধান আসবে’। কেবল সাধারণ মানুষ বা বিশিষ্ট নাগরিকরা না, সংকট সমাধানের আশায় আছেন রাজনৈতিক নেতারাও। জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য কাজী জাফরুল্লাহ বলেন, ‘আমি আশার আলো দেখছি। মনে হয় দুরত্ব কমে আসবে। আলোচনায়ই সব সমস্যার সমাধান হতে পারে’। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এম কে আনোয়ারও অপেক্ষায় আছেন দুই নেত্রীর মধ্যে কী কথা হয়। তিনি বলেন, ‘কথোপকথনের পর বোঝা যাবে সংকটের সমাধানের কী হবে। আমরা আশা করি সরকার ছাড় দিয়ে সমঝোতার উদ্যোগ নেবে’। |