কে এই আনোয়ার?- ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ঘুমিয়ে।। প্রশাসন নিশ্চুপ
প্রতিবেদক ॥ কখনও ডিবির ইন্সপেক্টর, কখনও থানার ইন্সপেক্টর পরিচয়ে বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালায় মাদক ইন্সপেক্টর আনোয়ার। সাথে নেন নিজের পছন্দমত লোক, হউক না সে অফিসের বাইরের লোক। ব্যবহার করেন একটি ওয়াকিটকি। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, এসব এলাকায় তাদের কোন বেতার সংযোগ নেই। পরিদর্শক আনোয়ার ওয়াকিটকি হাতে বিভিন্ন সংস্থার পরিচয় দেন। সরল সাধারণ মানুষ তাদের ভাওতাবাজি বুঝতে পারেনা। বেশ কিছুদিন পূর্বে একজন আত্বীয়কে নিয়ে অভিযানে যান। সাংবাদিকদের সামনা সামনি পড়লে আত্বীয়কে পরিচয় করে দেন কনস্টেবল হানিফ নামে। অথচ কিছুক্ষণ পরেই কনস্টেবল হানিফের সাথে ফোনে যোগাযোগ করলে সে জানায়, আমি অফিসে আছি। চতুর আনোয়ার সাথে সাথে তার আত্বীয়কে ঘটনাস্থল থেকে সরিয়ে দেন। সাংবাদিকরা ঐ আত্বীয়র পিছু নেয়। আত্বীয়র পরিচয় দেয়া ব্যক্তিটি একটি রেষ্টুরেন্টে প্রবেশ করলে সাংবাদিকরা তার মুখোমুখি হয়। সাংবাদিকদের কাছে সে স্বীকার করে যে, সে মাদক অফিসে কর্মরত কেউ নয়। পরে ঘটনার অনুসন্ধানে দেখা যায় আনোয়ার সাহেব পুনিয়াউট নামক স্থানে ফ্ল্যাট বাসা ভাড়া করে ঐ আত্বীয়কে রাখে, এ ঘটনা নিয়ে শহরে আলোড়ন সৃষ্টি হলে আনোয়ার সাহেব প্রভাবশালী ব্যক্তিদের নিয়ে ঘটনা ম্যানেজ করেন। গত ৪/৫ বৎসর আগে মদ, ফেন্সিডিল বহন করার সময় ইন্সপেক্টর আনোয়ার সরকার পাড়া এলাকায় ধৃত হন। এং এক পযায়ে লাঞ্চিতও হন। শুধু তাই নয়, বিজিবির ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার অবস্থিত তিনটি বা চারটি সীমান্ত চৌকি কাগজে কলমে কুমিল্লা সেক্টরের অধীনে হওয়ায় এ চৌকি গুলো জব্দ মাল জমা দেয়া থাকে আনোয়ার সাহেবের তত্বাবধানে ।ব্রাহ্মণবাড়িয়া মাদক অফিসে জমা দেয়া হয়, এ গুলোর হিসাব কিতাবের দিকে চোখ রাখলেই দেখা যাবে চূড়ান্ত অসংগতি। এরকম অবস্হারএকটি তথ্য পেয়ে গত ২৩ জুন মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তর কুমিলা অঞ্চলের উপ-পরিচালক একেএম শওকত ইসলাম ও সুপারেন্টেন্ড আজিজুল হক ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পৈরতলায় জেলা মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তর কার্যালয়ে পরিদর্শনে আসেন। মামলার কাগজপত্র আছে, আছে নথিপত্র। সিজার লিষ্ট অনুযায়ী মালামাল আছে। শুধু কাগজে-কলমে ঠিক আছে সবকিছু। নেই শুধু বাস্তবে। রহস্যজনক ভাবে মামলার আলামত ৩’শ কেজি গাঁজা উধাও হয়ে গেছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তরের গোডাউন থেকে বিপুল পরিমান গাঁজা উধাও হয়ে যায়। এর বাজার মূল্য প্রায় ৩০ লক্ষ টাকা। ঘটনাটি ধরা পড়ার পর মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা গুদামটি সিলগালা করে চাবি নিয়ে চলে যান। এ ঘটনায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। কর্মকর্তারা মামলার নথি অনুযায়ী অভিযানে উদ্ধারকৃত গাঁজার সন্ধান করেন। কিন্তু গুদামে মামলার আলামত গাজা দেখতে না পেয়ে ইন্সপেক্টর আনোয়ার হোসেন ভূইয়া জিজ্ঞাসাবাদ করেন। তিনি এর কোন সুদুত্তর দিতে পারেন নি। ঘটনার পর কর্মকর্তারা গুদামটি তালা দিয়ে সিলগালা করে চাবি নিয়ে কুমিলা চলে যান। এরপর গত জুলাই মাসে গুদামঘরের পশ্চিম দিকের জানালা ভেঙ্গে চুরির ঘটনা সাজানোর চেষ্টা চালায়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান, গত ২২ বছরে গোডাউন থেকে মামলার কোন আলামত খোয়া যায়নি, চুরি হয়নি। গাঁজা উদাও হওয়ার ঘটনাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে চুরির ঘটনা সাজানো হয়েছে। অফিস সূত্র জানায়, জেলা মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তর কার্যালয়ের সিপাহী হানিফের মাধ্যমে শহরের কান্দিপাড়া হুমায়ুন, ফায়েজ মিয়াসহ বিভিন্ন এলাকার চিহ্নিত গাঁজা ব্যবসায়ীদের নিকট ইন্সপেক্টর আনোয়ার হোসেন ভূইয়া দীর্ঘ দিন ধরে গাঁজা বিক্রি করে আসছেন। বিভিন্ন সময়ে তার অধীনস্থ কর্মকতাদের নিকট নিজেকে জাহির করার জন্য উপ-পরিচালক একেএম শওকত ইসলামের লোক বলে দাবী করে। অভিযুক্ত ইন্সপেক্টর আনোয়ার হোসেন ভূইয়া জানান, এটি আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার। আমার অফিসের কর্মকর্তারাদের যোগসাজসে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। উপ-পরিচালক শওকত ইসলাম জানান, পরিদর্শনে এসে গোডাউন সিলগালা করার দরকার মনে করায় সিল গালা করেছি। মালামাল উধাও হওয়ার ঘটনাটির বিষয়টি আমি নিজেই তদারকি করছি। অচিরেই আমি উচ্চ পর্যায়ে রিপোর্ট পেশ করব।
|