Main Menu

জামায়াত ও হেফাজতের সমর্থনে বি এন পি

+100%-

ডেস্ক ২৪ : ১৯৮৪ সালে খালে জিয়া বিএনপি’র দায়িত্ব নেওয়ার পর এর আগে তার সঙ্গে দলের অন্য নেতাদের এতটা সন্দেহ ও অবিশ্বাসের সম্পর্ক আর কখনো তৈরি হয়নি। ২০০৭ সালে তিনি কারাগারে থাকতে বিএনপি প্রায় দ্বিধাভিবক্ত হতে যাচ্ছিল। কিন্তু খালেদা জিয়ার প্রতি দলের অধিকাংশ নেতা এবং কর্মীদের আস্তা অটুট ছিল। এমনকি চার দলীয় শাসনামলে ‘তারেক জিয়ার বাড়াবাড়িতে’ জ্যেষ্ঠ নেতারা অস্বস্তি বোধ করলেও দলপ্রধানের প্রতি তাদের আনুগত্যে ঘাটতি দেখা যায়নি, যা ঘটেছে তার সাম্প্রতিক কিছু বক্তৃতা বিবৃতিতে।

অনেকটা ডানের দিকে ঝুঁেক থাকলেও বিএনপি দেশের ‘বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদী শক্তি’ হিসেবে পরিচিতি। দলটির নেতা কর্মী সমর্থক তো বটেই, সাধারণ মানুষ ও চায়না এটি জামায়াতে ইসলাম কিংবা হেফাজতে ইসলামের সম্পূরক শক্তিতে পরিণত হোক।  জনগনকে একটি বড় অংশ বিএনপিকে আওয়ামীলীগের বিকল্প ‘মধ্যপন্থী দল’ হিসেবেই দেখতে চায়। নানা চড়াই উত্তরাই সত্বেও আশি ও নব্বইয়ের দশকের শেষ নাগাদ দলটির সেই ভুমিকা অক্ষুণœ ছিল বলেই ধারণা করি। কিন্তু ২০০১ সালের নির্বাচনের পর তরুণ নেতা তারেখ জিয়া দলের ‘বিকল্প নেতা’ হয়ে প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে মৌলবাদী ও জঙ্গীগোষ্ঠীকে ব্যবহার করতে গিয়ে বিএনপি’র মৌলচরিত্রই বিসর্জন দেন। দলের অধিকাংশই জ্যেষ্ঠ নেতা তার সেই সেই পথ ভুল মনে করলেও প্রকাশ্যে কিছু বলতে সাহস পায়নি। পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে তারা দলের নীতি-কৌশল পুনর্মুল্যায়নে খালেদা জিয়াকে শেষ ভরসা মানলেও গত সাড়ে চার বছরে বিএনপি তারেক জিয়ার নীতিই অনুসরণ করে আসছে । বর্তমানে দলপ্রদানের সঙ্গে বিএনপি’র জ্যেষ্ঠ নেতাদের যে মানসিক দুরত্ব দেখা দিয়েছে, তার জন্য যারা ‘আওয়ামী লীগ বিরোধী’ তারাই বিএনপি’র বন্দু’ তারেক জিয়ার এই নীতি মূলত দায়ী। খালেদা জিয়া নিজেও সন্তানস্নেহের উপরে গিয়ে দলের স্বার্থকে দেখতে পারেননি বলে দলের শুভানুধ্যায়ীরা মনে করেন। অন্যদিকে ১/১১ সময়ের দলের নেতাদের ভূমিকায় তিনি নিজেও অসন্তুষ্ট ছিলেন, যে কারণে প্রায় অচল খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনকে দলের মহাসচিব করেন এবং এখনো পর্যন্ত দল একজন মহাসচিব এবং সংসদে বিরোধী দলের উপনেতা বেছে নিতে ব্যর্থ হন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে ঘটনার পরিপেক্ষীতে বিএনপি’র নেত্রীকে পথহারা বলেছেন, বাংলাদেশের রাজনীতিতে সে রকম পথ হারা ঘটনা অনেকে ঘটিয়েছেন। ৫ই মে হেফাজতের সমাবেশ ও অবরোধকে সামনে রেখে ৪মে শাপলা চত্বওে বিরোধী দলের সমাবেশে  খালেদা জিয়া সরকারকে দাবি মানতে আটচল্লিশ ঘন্টার আল্টিমেটাম দিয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রী যখন আটচল্লিশ ঘন্টার আল্টিমেটাম দেওয়ার জন্য বিএনপি নেতাকে পথহারা বলেন, তখন ২০০৪ সালের ৩০শে এপ্রিল ট্রাম্পকার্ডটির কথাও আমরা ভলে যায় নি। বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর  ইঙ্গিতে আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক আব্দুল জলিলই এই ট্রাম্পকার্ড দিয়েছিলেন। বাংলাদেশের রাজনীতিতে আল্টিমেটাম বা ট্রাম্পকার্ডের ঘটনা বহুবারই ঘটেছে। তাই খালেদা জিয়ার আণ্টিমেটাম ব্যর্থ হওয়ায় তার রাজনৈতিক অবস্থা নড়বড়ে হয়ে পড়েছে ভাবার কারণ নেই। প্রশ্ন হলো, এই আল্টিমেটাম তিনি কাদের পরামর্শে, কাদের ভরসাই দিয়েছিলেন? আল্টিমেটাম বিষয়টি কি তিনি দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটির সদস্যদের সঙ্গে আলাপ করেছেন। যদি না করে থাকেন তাহলে বাইরে থেকে কারা তাকে প্রণোদনা যুগিয়েছেন, কারা পরামর্শ দিয়েছেন সেই প্রশ্নই বড় হয়ে দেখা দিয়েছে। অতি সম্প্রতি বিএনপি’র চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার বক্তৃতা-বিবৃতি নিয়ে যেমন রাজনৈতিক মহলে কৌতুহলের সৃষ্টি হয়েছে, দলের মধ্যেও চাপা ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। মাস খানেক আগে চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক অফিসে স্থায়ী কমিটির বৈঠকের আগে তিনি সবার মোবাইল ফোনসেট অফিস কর্মকর্তাদের কাছে জমা দিতে বলেন। এতে দু-এক জন মৃদু আপত্তি করলেও কাজ হয়নি। তার নির্দেশ মান্য করেই তার বৈঠকে বসতে হয়। খালেদা জিয়ার অভিযোগ, বৈঠকে কিকি আলোচনা হয় তার বিস্তারিত গন্যমাধ্যমে চলে যায়। দল প্রধানের সঙ্গে অন্যান্য নেতার সন্দেহ-অবিশ্বাস কোন পর্যায়ে চলে গেলে এ সিদ্ধান্ত নিতে হয় তা অনুমেয়।
ইংরেজী পত্রিকা দৈনিক নিউ এজ পত্রিকার সাম্প্রতিক সংখ্যায় বিএনপিকে নিয়ে একটি তথ্য বহুল ও বিশ্লেষণী প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে, যাম সারমর্ম হলো ঃ বিএনপি’র কতিপয় জ্যেষ্ঠ নেতা দলীয় চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার ব্যাপারে হাতাশা প্রকাশ করেছেন এবং তাদের বিশ্বাস, দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যদের সাথে পরামর্শ  না করে সেসব বক্তৃতা-বিবৃতি দিয়েছেন, তাতে তার ও দলের ভাব মুর্তি ক্ষুণœ হয়েছে। এই নেতারা মনে করেন, দলের বাইরের একটি অংশ্য বিশেষ করে বাম থেকে ইসলামী জেহাদী বুদ্ধিজীবিতে রূপান্তরীত, যাদের নিজস্ব রাজনৈতিক উদ্দেশ্য রয়েছে। তারা বিএনপি’র চেয়ারপার্স কে এধরনের বক্তৃতা বিবৃতি দিতে বিভ্রান্ত করেছে। আর সেই কাজে সহায়তা করেছেন দলীয় চেয়ারপার্সনের একশ্রেণীর কর্মকর্তা, যাদের মধ্যে অবসরপ্রাপ্ত সামরিক-বেসামরিক আমলা রয়েছেন।
দলের জ্যেষ্ঠ নেতারা  মনে করেন, জামায়াতের দেশব্যাপী তান্ডবেপ পর খালেদা জিয়া বগুড়া গিয়ে ‘সরকার গনহত্যা অব্যাহত রাখলে সেনা বাহিনী অবসর বসে থাকবে না’ মন্তব্য করাও ঠিক হয়নি। এর আগে সিঙ্গাপুর থেকে ফিরে লিখিত বক্তব্যে তিনি সরকারের বিরুদ্ধে সরাসরি গণহত্যার অভিযোগ করেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে প্রথমত বিএনপি’র নেত্রী ‘গণহত্যার কথা বলে একাত্তরের যে গণহত্যার জন্য বিচার চলছে, সেই গণহত্যার ভয়বহতাা অস্বীকার করেছেন। দ্বিতীয়ত, গণহত্যা যদি হয়েই থাকে সেটি দুই তরফেই হয়েছে। কিন্তু তিনি সরকারকে অভিযুক্ত করলেও জামায়াত-শিবির এর তান্ডব সর্ম্পকে একটি কথা বলেননি।
যুদ্দাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে গড়ে উড়া শাহাবাগের গণজাগরণ মঞ্চ সর্ম্পকে খালেদা জিয়ার মন্তব্য ছিল অনৈতিক ও অন্যায্য। তিনি গণজাগরণ মঞ্চে অংশগ্রহণকারী সবাইকে নাস্তিক বলে আখ্যায়িত করেন। অথচ দলের তৃণমুল পর্যায়ের অনেক নেতা কর্মীকে গণজাগরণ মঞ্চের সমাবেশে যোগদান করতেও দেখা গেছে। কিন্তু দলীয় চেয়ারপার্সন দেশে ফেরার পরই পরিস্থিতি ভিন্ন দিকে মোড়  নেই। দলের প্রতি সহানুভুতিশীল একজন জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক এজন্য জামায়াত শিবিরের অপপ্রচার ও আমারদেশ প্রত্রিকার সম্পাদকের উস্কানিমুলক লেখাকেই দায়ী করেছেন। তিনি এটি ও বলেছেন আমার দেশের সম্পাদক বিএনপি’র পক্ষে কাজ করেননি। বরং জামায়াতের স্বার্থ উদ্ধারে সচেষ্ট ছিল। খালেদা জিয়া ক্যাবল তিন বার প্রধানমন্ত্রী ছিলেন না। বিভিন্ন সময়ে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনেও নেতৃত্ব দিয়েছেন। কিন্তু তিনি সরকারের প্রতি যেভাবে ৪৮ ঘন্টার আল্টিমেটাম ঘোষণা করলেন এবং পরদিন হেফাজতে ইসলামের বিক্ষুব্দ কর্মীদের কর্মীদের পাশে দাড়ানোর জন্য দলীয় নেতা-কর্মী এবং নগরবাসীর প্রতি তার আহ্ববান জানালেন তা অনেককেই হতাশ করেছেন। স্থায়ী কমিটির একাদিক সদস্যের দাবি, ৪৮ ঘন্টার আল্টিমেটাম ছিল ভুল সিদ্ধান্ত। আমরা যদি এ ধরনের আল্টিমেটামের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করতাম, তাহলে উপযুক্ত প্রস্তুতি নিয়েই কার্যকর কমৃসূচী নেয়া যেত। তাদের মতে, দলীয় প্রধান দলের নেতাদের রাস্তায় নেমে আসার আহ্ববান জানালেন, অথচ কেউ সাড়া জানালেন না, এটি তার জন্য অত্যন্ত অপমানজনক। এই আহ্ববান খালেদা জিয়া নিজে দিয়েছেন, না তার কর্মকর্তদের মধ্যে অতিক্ষমতাধর চক্রের যৌথ কারসাজিতে হয়েছে। সে ব্যাপারেও সন্দেহ প্রকাশ করেছেন কোনো নেতা। বিএনপি’র চেয়ারপার্সনের অফিসের কর্মকর্তা এবং বহিরাগত ব্যক্তিদের সর্ম্পকে ক্ষোপের কারণ জানতে চাইলে আগে বিএনপি’র এক জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, কোন ইসলামী বিপ্লবের জন্য আমাদের কর্মসূচী নেই। আমরা মধ্যপন্থী গণতান্ত্রিক দল। ইসলামর্ধমীয় নেতাদের মাধ্যমে বিপ্লব করতে চান যেসব জিহাদী বুদ্ধিজীবি, তাদের উৎসাহিত করার কোন কারণ নেই। তিনি এও মনে করেন, এসব দুদ্ধিজীবী তাদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতে বিএনপিকে ব্যবহার করছেন। কিন্তু সবচেয়ে বিপদ জনক দিক হলো, ওই দুই নেতাকে জিজ্ঞেস করা হলো, তারা খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করে এ্ই কথা গুলো সরাসরি বলছেন না? জবাবে তারা জানান এই মুহুর্তে দলের ভিতরে সে রকম গণতান্ত্রিক পরিবেশ নাই।
বিএনপি নেতারা আশা করছেন, সময় এলে মুখ খোলা হবে।  এই মুহুর্তে তাদের আশঙ্খা হল ‘বহিরাগত ব্যক্তিরা’ চেয়ারপার্সনের কতিপয় কর্মকর্তা এতটায় ক্ষমতাধল যে, তারা প্রকৃত রাজনীতিকদের ক্ষতি করতে পারেন। এখন সব দলেই প্রকৃত নেতাদের সঙ্গে অতি ক্ষমতাধরদের দ্বন্ধ চলছে।  বিএনপি’র সঙ্কট শুধু নেতাদের সঙ্গে কর্মীদের, দলীয় চেয়ারপার্সনের সাথে অন্য নেতাদের দুরত্ব নয়। মূল সঙ্কট হল দলটির নীতি ও আদর্শ। জিয়াউর রহমান যে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদকে দলে মুলমন্ত্র করেছিলেন, সেটাই থাকবে, না জামায়াতে ইসলামী ও হেফাজতের ১৩ দফাকে আদর্শ হিসেবে মেনে নেবে। দলে একাংশ মনে করেন, বাংলাদেশী সেøাগানে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করার দিন শেষ হয়ে গেছে। এখন ইসলামি আদর্শই দলটি এগিয়ে নিতে হবে। অপরাংশের ধারণা বিএনপি যদি জামায়াত ও হেফাজতের কর্মসুচীই গ্রহণ করে তাহলে বিএনপি নাম ধারণ করারই বা মানে থাকে? রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি’র ভুল শোধরানোর চেষ্টা থাকলে তারা যুদ্ধাপরাদীদের বিচার বন্ধের জামায়াতি কর্মসুচীর প্রতি ‘নৈতিক’ সমর্থন দিতে পারত না। বিএনপি’র শীর্ষ নেতৃত্ব নিজেদের ভ’ল বুঝতে পারলে একবার জামায়াতের আরেকবার হেফাযতের কাদে পা রেখে সরকার পতনের খোয়াব দেখত না। 






Shares