টর্নেডোর ১২ দিন পরও প্রশাসনের তালিকায় এখনো নাম উঠেনি নিহত’র
প্রধান প্রতিবেদক : ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ভয়াবহ টর্নেডোর ১২ দিন পার হলেও প্রশাসনের তালিকায় এখনো নাম উঠেনি টর্নেডোর নৃশংসতায় নিহত ভাদুঘরের মো: হামিমের(২৩)।নিহত এই যুবকের বৃদ্ধ বাবা-মা ছুটছেন কর্তাব্যাক্তি আর জনপ্রতিনিধিদের দ্বারে দ্বারে। দেখবো,দেখছি-এই আশ্বাসের মধ্যেই আটকে আছে তার নাম উঠানো আর ক্ষতিপূরন পাওয়া। হামিমের মারা যাওয়ার বিষয়টি গত ১২ দিনেও নিশ্চিত হতে পারেনি প্রশাসন। তারা জানেইনা হামিম নামে কেউ মারা গেছে বলে। সরকার নিহতদের প্রত্যেকের পরিবারকে দিয়েছে ২০ হাজার টাকা করে। কিন্তু প্রশাসনের তালিকায় যেহেতু হামিমের নাম নেই তাই মিলেনি তার পরিবারের এই টাকা। অপেক্ষার পর হামিমের বৃদ্ধ বাবা-মা এখন ছুটছেন বিভিন্ন জনের কাছে। সঙ্গে প্রমান করার মতো নানা কাগজপত্র। মেয়র,কাউন্সিলের প্রত্যায়নপত্র,হাসপাতালের ভর্তি স্লিপ। ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রিপন চাকমার সঙ্গে দেখা করে এসব কাগজপত্র দেখিয়ে বৃদ্ধ এই বাবা-মা তার ছেলের নাম তালিকায় উঠানোর আবেদন করেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাদের কাগজপত্র রেখে যেতে বলেন। পরে দেখবেন জানিয়ে বিদেয় করেন। আশাহত বাবা জাহের মিয়া ও মা হোসনাহার বেগম শেষমেষ রোববার রাতে আসেন স্থানীয় প্রেসক্লাবে। সাংবাদিকদের কাছে সব খুলে বলেন। সাহায্য চান এব্যাপারে। এবিষয়ে গতকাল সোমবার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রিপন চাকমার সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন একটু জটিলতা আছে। তার যে হাসপাতালের স্লীপটি আমার কাছে দেয়া হয়েছে তাতে পুলিশ কেইস সীল মারা আছে। এজন্যে আমি বিষয়টি পুলিশের কাছে পাঠিয়েছি। হামিমের মৃত্যু কিভাবে হয়েছে তা পুলিশ আমাকে নিশ্চিত করলেই ব্যবস্থা নেব। অবশ্য জেলা প্রশাসক নুর মোহাম্মদ মজুমদার বলেছেন হামিমের নাম অর্ন্তভূক্ত করা হচ্ছে। আজই (সোমবার) তাকে হামিমের মৃত্যুর বিষয়টি কনফার্ম করা হয়েছে। তার পরিবারকে সহায়তা করা হবে। নিহত হামিমের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের ভাদুঘর গ্রামে। ঐ দিন মুকুন্দপুর শ্বশুর বাড়িতে যাওয়ার সময় চিনাইর এলাকায় টর্নেডোর কবলে পড়ে হামিম। তার বাবা জাহের মিয়া জানান, হামিমের লাশ চিনাইর মোড়ে প্যাক-কাদার মধ্যে পইরা রইছিল। সেখান থেকে লোকজন উদ্ধার করে তাকে হাসপাতালে নিয়ে আসে। আমরা তার মারা যাওয়ার খবর জানতে পারি একদিন পর। আমার ছেলে শনিবার রাত ৯ টার দিকে আমাকে ফোন করে বলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কোন খবর শুনছেন কিনা। আমি তখন তাকে বলি টর্নেডোর কথা হুনছি। বলে টর্নেডোর পাকে পইরা হামিমতো মারা গেছে। আমি তখন তার কাছে জানতে চাই লাশ কই আছে। সে আমাকে জানায় হাসপাতালে আছে। পরদিন রোববার সকালে তার লাশ বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। আমি বাড়িতে এসে জানাজার নামাজ পড়িয়ে আমার ছেলেকে দাফন করি। জাহের মিয়া নবীনগর উপজেলার কুড়িঘর গ্রামের একটি মসজিদে ইমামতি করেন। তার ৮ ছেলে ও ৫ মেয়ের মধ্যে চতুর্থ হামিম। বছর খানেক আগে সে বিয়ে করে মুকুন্দপুর গ্রামে। তার স্ত্রীর নাম শিল্পী। জাহের মিয়া জানান,ঐদিন শ্বশুর বাড়িতে যাবে বলে সে ঘরে কাউকে বলেনি। তাই আমরা চিন্তাও করিনি তার মৃত্যুর কথা। পরে খোজাখুজি করে লাশ পাওয়া যায় হাসপাতালে। জাহের মিয়ার সঙ্গে নিয়ে আসা কাগজপত্রে দেখা গেছে জেলা আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মেজর অব. জহিরুল হক খানের একটি স্লিপ। যেটিতে লিখা রয়েছে পত্রবাহক ইয়াছিন এর কাছে তার ভাইয়ের লাশ হস্তান্তর করা হোক। হামিম শ্বশুর বাড়িতে যাওয়ার পথে টর্নেডোতে চিনাইর মারা গেছে বলে তার ওয়ার্ডের(১১ নম্বর) কাউন্সিলর শেখ মো: বাবর আলীর একটি প্রত্যায়নপত্র। এটি দেয়া হয়েছে ৩০ শে মার্চ। পৌর মেয়রও অনুরূপ আরেকটি প্রত্যায়নপত্র দেন ৩১ শে মার্চ। হামিমের হাসপাতালের স্লিপ নম্বর ১২৪৯৬,তারিখ-২২.৩.১৩। যাতে লিখা ব্রডডেড। এসব কাগজপত্র নিয়েই রোববার(৩১শে মার্চ) জাহের মিয়া দেখা করেন সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে। জানান,সকাল ১১ টায় গিয়ে তিনি ইউএনও’র দেখা পান দুপুর ১ টার দিকে। জাহের মিয়া জানান ইউএনও তাকে বলেছেন আপনি কাগজপত্র রেখে যান আমি দেখবো। তিনি বলেন মানুষের কাছে শুনেছেন সরকার সহায়তা করছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত তার খবর নেয়নি কেউ । দেয়নি সাহায্যও। এখন কিছু পেলে তার মৃত ছেলের পেছনেই তিনি সেটা খরচ করবেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রিপন চাকমা জাহের মিয়ার কাগজপত্র পাওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন তার হাসপাতালের স্লিপটিতে পুলিশ কেইস সিল মারা আছে। এজন্যে তার মুত্যু কিভাবে হয়েছে তা জানার জন্যে আমি পুলিশের কাছে পাঠিয়েছি। অর্থাভাবে দরিদ্র শিক্ষকের চিকিৎসা সংকট: অর্থাভাবে চিকিৎসা হচ্ছেনা দরিদ্র স্কুল শিক্ষক মো: খোকন মিয়ার। ঢাকায় সেন্ট্রাল ল্যাব হাসপাতালে চিকিৎসাধীন খোকন জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষনে। তার চাচাতো বোন এডভোকেট আফসানা সুলতানা জানিয়েছেন তাকে লাইফ সাপোর্ট দিয়ে বাচিয়ে রাখা হয়েছে। আফসানা খোকনের চিকিৎসায় অর্থ সহায়তার জন্যে জেলা প্রশাসকের কাছে গত ২৮ শে মার্চ একটি আবেদন করেন। এতে বলা হয় ৫ বছর বয়সে খোকন তার মাকে হারায়। আর ১৫ বছর বয়সে হারায় বাবাকে। এরপর টিউশনি করে নিজের পড়াশুনা আর পরিবারের ৭ সদস্যের জীবিকা নির্বাহের ব্যবস্থা করে যাচ্ছিল সে। ডিগ্রী পাশ করে সম্প্রতি সে পাইকপাড়া রেজিষ্ট্রার্ড প্রাইমারী স্কুলে যোগদান করে। বাড়ি থেকে টিউশনি করতে বেড়িয়ে চিনাইর বাজারে টর্নেডোর কবলে পড়ে খোকন। তাকে প্রথমে জেলা সদর হাসপাতালে এবং সেখান থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। ঢাকা মেডিক্যালে দু-দিন পর্যন্ত তার রক্তক্ষরণ বন্ধ না হওয়ায় নিয়ে যাওয়া হয় সেন্ট্রাল ল্যাবে। সেখানে আনার পর তার অবস্থার কিছুটা উন্নতি হলেও অর্থাভাবে চিকিৎসা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হচ্ছেনা আবার লাইফ সাপোর্টে থাকায় অন্যত্র সরিয়ে নেয়া সম্ভব হচ্ছেনা বলে জানান আফসানা সুলতানা। তিনি জানান,আমরা চেয়েছিলাম তাকে পিজি হাসপাতালে নিয়ে যেতে। কিন্তু তার চিকিৎসকরা বলেছেন তাকে স্থানান্তর করা এখন সম্ভবনা। আফসানা জানান,এই পর্যন্ত তারা আত্বীয় স্বজনের সহায়তায় খোকনের চিকিৎসার জন্যে আড়াইলাখ টাকা খরচ করেছেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত কারো কাছ থেকে কোন সাহায্য পাননি। জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করার পর তিনি বলেছেন দেখবেন। অর্থ সংকটে তার চিকিৎসাও হচ্ছেনা এখন। |