শেখ হাসিনা সড়কের মাধ্যমে এলাকাটি উন্নয়নের নতুন যুগে প্রবেশ করছে
মোকতাদির চৌধুরী এমপি’র আন্তরিক প্রচেষ্টায় তিতাস পূর্বাঞ্চলবাসীর দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন সীমনা-ব্রাহ্মণবাড়িয়া শেখ হাসিনা সড়কের নির্মান কাজ চলছে দ্রুত গতিতে। মূল্য বাড়ছে জমির। আনন্দে উদ্বেলিত তিতাস পূর্বাঞ্চল তথা বিজয়নগর উপজেলার সর্বস্তরের জনগন। পরম কৃতজ্ঞতায় জনপ্রিয়তা ও জনসমর্থন বৃদ্ধি পাচ্ছে আওয়ামীলীগ সরকারের।
জানা যায়, স্বাধীনতাপূর্ব সময় থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শহরের সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজের জন্য ক্ষমতায় থাকা সকল সরকারের স্থানীয় সাংসদদের কাছে তিতাস পূর্বাঞ্চল বর্তমান বিজয়নগর উপজেলার সর্বস্তরের জনগনের একটাই মাত্র প্রধান দাবী ছিল সীমনা- ব্রাহ্মণবাড়িয়া সড়ক স্থাপনের। আর এই দাবীকে পূঁজি করেই বিগত সময়ে যারা সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছে তারা নির্বাচনের সময় তিতাস পূর্বাঞ্চলবাসীকে এই সড়কটি স্থাপনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোট নিয়ে এমপি হয়েছেন। কিন্তু কেউই কথা রাখেনি। শুধুই কথা দিয়েছেন আর প্রতারনা করেছেন অবহেলিত তিতাস পূর্বাঞ্চল জনপদের জনগনকে।
স্বাধীনতার পর থেকে প্রতারিত তিতাস পূর্বাঞ্চলবাসীকে কথা দিয়ে কথা রেখেছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অহংকার বঙ্গবন্ধু কন্যা ও আওয়ামীলীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার বিশ্বস্ত কর্মী, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাবেক একান্ত সচিব বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির অন্যতম সদস্য ও পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রনালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি র.আ.ম. উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এমপি। তিনি গত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তৎকালীন সাংসদ অ্যাডভোকেট লুৎফুল হাই সাচ্চু’র মৃত্যুতে শূন্য হয়ে যাওয়া ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর – বিজয়নগর আসনে উপ-নির্বাচনের সময় জনগনকে এই সড়কটি স্থাপনের প্রতিশ্রুতি দেন এবং জনগনও তাঁর কথায় বিশ্বাস রেখে বিপুল ভোট প্রদানে বিজয়ী করেন।
মোকতাদির চৌধুরীও উপ-নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে তিতাস পূর্বাঞ্চল তথা বিজয়নগর উপজেলাবাসীকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি রক্ষায় শুরু করেন কাজ। এর ধারাবাহিকতায় বিভিন্ন বাঁধা বিপত্তি ও চড়াই উৎড়াই পেড়িয়ে গত ২০১৬ সালের ২৫ নভেম্বর বিজয়নগর উপজেলার পত্তন ইউনিয়নের টানমনিপুর (পত্তন শিবির) এলাকায় সড়কের মাটি ভরাট কাজের ভিত্তিপ্রস্ত স্থাপন করেন কথায় নয় কাজে বিশ্বাসী বঙ্গবন্ধুর আদর্শিক ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশ্বস্ত কর্মী র.আ.ম. উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এমপি ।
মাটি ভরাট কাজের ভিত্তিপ্রস্ত স্থাপনের পর থেকে দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে জেলা সদরের সাথে বিজয়নগর উপজেলার সরাসরি সংযোগ স্থাপনা “শেখ হাসিনা সড়কের” নির্মান কাজ। বর্তমানে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন বিজয়নগর উপজেলার ভাটি এলাকা বলে পরিচিত পত্তন ইউনিয়ন ও চর ইসলামপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের পাশ দিয়ে সড়কে মাটি ফেলার কাজ চলছে পুরোদমে। ইতিমধ্যেই প্রায় ১০ কিলোমিটার লম্বা সড়কের ৮ কিলোমিটার সড়কে মাটি ফেলার কাজ শেষ হয়েছে। আগামী মাস তিনেকের মধ্যেই সড়কের মাটি ফেলার কাজ শেষ হবে বলে আশা করছেন ঠিকাদারের নিয়োগকৃত কর্মীরা। তারপর শুরু হবে সড়কের গাইডওয়াল, বক স্থাপন ও তিনটি ব্রীজ নির্মানের কাজ।
ইতিমধ্যে ১১৬ কোটি টাকা ব্যয়ে তিনটি ব্রীজ নির্মানের প্রাক্কলন প্রস্তুত হয়েছে বলে সংশিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। আগামী কিছুদিনের মধ্যেই ব্রীজের নির্মান কাজের টেন্ডার হওয়ার কথা রয়েছে।
এদিকে “শেখ হাসিনা সড়কের” নির্মান কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলায় আশাবাদী হয়ে উঠছেন বিজয়নগরবাসী।
রাস্তাটি বিজয়নগরবাসীর শত বছরের লালিত স্বপ্ন। সড়কটি নির্মিত হলে বিজয়নগর উপজেলাবাসী প্রায় ১৫/২০ মিনিটের মধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদরে আসা-যাওয়া করতে পারবে। বর্তমানে বিজয়নগর উপজেলাবাসী প্রায় ৩০ কিলোমিটার ঘুরে আখাউড়া উপজেলার উপর দিয়ে অথবা প্রায় ২৫ কিলোমিটার ঘুরে সরাইল উপজেলার উপর দিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদরে আসা যাওয়া করতে হয়। সড়কটি নির্মিত হলে বিজয়নগরবাসীর সময় ও অর্থ দুটোরই সাশ্রয় হবে।
এদিকে সড়কের নির্মান কাজ শুরু হওয়ার পর থেকেই ওই এলাকার জমির দাম বহুগুন বেড়ে গেছে। এক সময় সেখানে এককানি জমি (৩০ শতাংশ) বিক্রি হতো ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা। বর্তমানে সেসব জমি বিক্রি হচ্ছে ৪ থেকে ৫ লাখ টাকায়। বিজয়নগরের চরাঞ্চলে বেড়ে গেছে জমির দাম। সেখানে উপ-শহর গড়ে উঠবে বলে আশা করছেন উপজেলাবাসী।
জানা যায়, সড়কের মাটি কাটার কাজের ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৩৯ কোটি টাকা। ঢাকার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান “ডলি কনস্ট্রাকশন” নামক ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এর নির্মান কাজ বাস্তবায়ন করছে। ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধনের পর থেকেই শুরু হয় সড়কে মাটি ফেলার কাজ।
প্রায় ১০ কিলোমিটার লম্বা এবং ২৪ফুট প্রস্ত এই সড়কের বর্তমানে প্রায় ৮ কিলোমিটারে মাটি ফেলার কাজ শেষ হয়েছে। বর্তমানে উপজেলার পত্তন ইউনিয়নের দত্তখোলার রাজাপুর এলাকায় মাটি ফেলার কাজ চলছে।
সরজমিনে সড়কে গিয়ে দেখা গেছে, পত্তন ইউনিয়নের দত্তখোলার রাজাপুর এলাকায় ৫টি এসকেবেটর (ভেকু) দিয়ে চলছে মাটি কাটার কাজ। শতাধিক শ্রমিক কাজ করছেন। উৎসুক এলাকাবাসী সড়কে মাটি ফেলার কাজ দেখছেন।
ঠিকাদারের প্রতিনিধিরা জানান, আর মাস তিনেকের মধ্যেই সড়কের মাটি কাটার কাজ শেষ হবে বলে আশা করছেন তারা।
সড়কটি নিয়ে উপজেলার চর-ইসলামপুর গ্রামের জামাল মিয়া বলেন, বিজয়নগর উপজেলার ১০ ইউনিয়নবাসীর প্রানের দাবি “শেখ হাসিনা সড়ক”। তিনি বলেন, বিজয়নগরের সাথে জেলা সদরে যাওয়ার কোন সড়ক না থাকায় অনেক সময় গর্ভবতী মহিলা ও অসুস্থ্য রোগীকে আখাউড়া অথবা সরাইল উপজেলার উপর দিয়ে জেলা সদরে নেওয়ার পথে পথিমধ্যেই রোগী মারা যায়। গত ৭ ডিসেম্বর দুপুরেও দক্ষিণ রাজাবাড়ি গ্রামের দয়াল সরকার-(৪০) নামক এক ব্যক্তি অসুস্থ্য হয়ে হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যায়। তিনি দ্রুত সড়কের নির্মান কাজ শেষ করার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানান।
চর ইসলামপুর ইউনিয়ন পরিষদের ৯নং ওয়ার্ডের সদস্য জালাল উদ্দিন বলেন, সড়কের মাটি ফেলার কাজ শুরু হওয়ার পর থেকেই এলাকায় জমির দাম বেড়ে গেছে। তিনি বলেন, আগে এখানে এককানি (৩০শতাংশ) জমি বিক্রি হতো ৫০ হাজার টাকায়। বর্তমানে এককানি জমি বিক্রি হচ্ছে ৪/৫ লাখ টাকায়। জালাল উদ্দিন বলেন, আমাদের বাপ-দাদারা এই সড়কের স্বপ্ন দেখতেন। প্রতিটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় অনেক প্রার্থী এই সড়ক নির্মানের প্রতিশ্রুতি দিয়ে আমাদের ভোট নিলেও সড়ক নির্মান করেননি। বর্তমান সরকারের আমলে মোকতাদির চৌধুরী এমপি সড়কটির নির্মান করছেন। তিনি বলেন, সড়কটি নির্মান হলে বিজয়নগরের লোকজন মাত্র আধ ঘন্টায় জেলা সদরে যেতে পারবে। এই এলাকার ছেলে মেয়েরা ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় গিয়ে স্কুল কলেজে লেখাপড়া করতে পারবে। এই এলাকার জীবনমানের উন্নয়ন হবে।
পত্তন ইউনিয়নের মনিপুর গ্রামের আক্তার হোসেন বলেন, সড়কের পাশে তার ২০ কানি জমি আছে। সড়কের প্রয়োজনে তার ২০ কানি জমির মাটি নিয়ে গেলেও তার কোন আপত্তি নেই। তিনি চান দ্রুত সড়কটি নির্মিত হউক।
চর-ইসলামপুর ইউনিয়নের রাজাপুর গ্রামের কৃষক জমসিদ মিয়া বলেন, সড়কের পাশে আমার কিছু জমি আছে। রাস্তার প্রয়োজনে আমি জমি থেকে মাটি দিয়েছি। তিনি বলেন, রাস্তাটি হওয়ার কারনে তার জমির দাম বেড়ে গেছে।
চর-ইসলামপুর ইউনিয়ন পরিষদের ৯ নং ওয়ার্ডের সাবেক সদস্য মোঃ শামীম বলেন, সড়কটির নির্মানকাজ শেষ হলে বিজয়নগর হবে একটি সমৃদ্ধ উপজেলা। বিজয়নগরের উৎপাদিত কৃষি পন্য খুব সহজেই বিভিন্ন জেলায় পাঠানো যাবে। কৃষক স্বল্প খরচে চরে উৎপাদিত ধান বাড়িতে নিয়ে যেতে পারবে। তিনি বলেন, সড়কটি নির্মানের সাথে সাথে আমাদের দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন বাস্তবায়িত হচ্ছে। তিনি সড়কটির নির্মান কাজ করার জন্য স্থানীয় সংসদ সদস্য মোকতাদির চৌধুরী এমপিকে ধন্যবাদ জানান।
এ ব্যাপারে বিজয়নগর উপজেলার ইছাপুরা ইউনিয়নের মীর্জাপুরের বাসিন্দা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক দীপক চৌধুরী বাপ্পী বলেন, নির্মানাধীন শেখ হাসিনা সড়কটি বিজয়নগরবাসীর জন্য একটি পদ্মাসেতু। এটি আমাদের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন। আমাদের স্বপ্ন এখন বাস্তবে রূপ নিচ্ছে। তিনি আরো বলেন, শেখ হাসিনা সড়কের নির্মান কাজ শেষ হলে বিজয়নগরবাসী মাত্র ১৫ মিনিটের মধ্যেই জেলা সদরে আসা-যাওয়া করতে পারবে। এই অঞ্চলের শিক্ষার্থীরা সহজে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় গিয়ে পড়াশুনা করতে পারবে। সড়কটি চালু হলে বিজয়নগর উপজেলার চেহারা পাল্টে যাবে। মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন হবে। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নসহ বিজয়নগরে জমির দাম বাড়বে। বিজয়নগরে একটি উপ-শহর গড়ে উঠবে।
এ ব্যাপারে বিজয়নগর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট তানভীর ভূইয়া বলেন, শেখ হাসিনা সড়কটি বিজয়নগরবাসীর অস্তিত্ব, আমাদের প্রাণের দাবি। তিনি বলেন, সড়কের নির্মান কাজ শেষ হলে উপজেলাবাসী মাত্র ১৫ মিনিটের মধ্যে জেলা সদরে যাওয়া আসা করতে পারবে। এখন আখাউড়া অথবা সরাইল উপজেলার উপর দিয়ে জেলা সদরে যেতে সময় লাগে দেড় ঘন্টা। তিনি বলেন, সড়কটি নির্মিত হলে বিজয়নগরের ভাটি অঞ্চলে উপ- শহর গড়ে উঠবে। জায়গার দাম বেড়ে যাওয়ায় বিজয়নগরের ৫/৬টি গ্রামের মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন হবে। এলাকায় শিক্ষার হার বাড়বে। তিনি সড়কটির নির্মানকাজ বাস্তবায়ন করায় স্থানীয় সংসদ সদস্য র.আ.ম. উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বিজয়নগরবাসীর পক্ষ থেকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান।
এ ব্যাপারে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সিনিয়র সহকারী প্রকৌশলী আবদুর রাজ্জাক বলেন, শেখ হাসিনা সড়কটি বিশ্ব ব্যাংকের একটি প্রকল্প। তিনি বলেন, আগামী এপ্রিল মাসের মধ্যে সড়কে মাটি ফেলার কাজ শেষ হবে। তারপর শুরু হবে সড়কের পাশে গাইড ওয়াল ও ব্লক বসানোর কাজ। তিনি বলেন, ইতিমধ্যেই ১১৬ কোটি টাকা ব্যায়ে সড়কে তিনটি ব্রীজের প্রাক্কলন প্রস্তুত করা হয়েছে। আগামী কিছুদিনের মধ্যেই ব্রীজ নির্মান কাজের টেন্ডার হবে। তিনি সড়কের গুনগত মান নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন।সূত্র: দৈনিক ব্রাহ্মণবাড়িয়া