মায়ের কোলে ফিরল কাজী পাড়া থেকে উদ্ধার সেই সম্প্রীতি
অবশেষে মায়ের কোলে ফিরল ছোট্ট ‘সম্প্রীতি’। তবে প্রকৃত মায়ের কোলো নয়, সরকারি চাকরিজীবী এক দম্পতির কাছে সম্প্রীতিকে তুলে দেয়া হয়েছে। এমন তথ্য জানিয়েছে জাগো নিউজ।
রোববার দুপুর আড়াইটার দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরশহরের মেড্ডার তিতাসপাড়াস্থ সরকারি শিশু পরিবারের উপ-তত্ত্বাবধায়কের কার্যালয়ে অনেকটা নিরবেই সম্প্রীতিকে ওই দম্পতির হাতে তুলে দেয়া হয়। সম্প্রীতিকে দত্তক নেয়া সেই দম্পতির পরিচয় গোপন রাখার শর্ত দেয়া হয়েছে সংবাদকর্মীদের বলে জানিয়েছে সংবাদমাধ্যমটি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ১৪ অক্টোবর ভোরে বোরকা পড়া এক নারী ছোট্ট ওই মেয়ে শিশুটিকে পৌর-শহরের কাজীপাড়া মহল্লার মিয়া বাড়ির পার্শ্ববর্তী একটি খোলা মাঠে ঘাসের উপর ফেলে রেখে যায়।ফজর নামাজ শেষে স্থানীয় মুসল্লিরা শিশুটিকে দেখতে পান। এসময় স্থানীয় এক নারী শিশুটিকে তুলে তার বাড়িতে নিয়ে যান। এ ঘটনার খবর পেয়ে সদর মডেল থানা পুলিশ ওই নারীর কাছ থেকে শিশুটিকে থানায় নিয়ে আসে এবং পরবর্তীতে সরকারি শিশু পরিবারে রেখে।
শিশু পরিবারে অনেকটা মাতৃস্নেহেই বেড়ে উঠেছিল শিশুটি। শিশু পরিবারের উপ-তত্ত্বাবধায়ক রওশন আরা খাতুন শিশুটিকে সম্প্রীতি নাম দেন। মাতৃদুগ্ধ থেকে বঞ্চিত সম্প্রীতি শিশু উপযোগী গুঁড়ো দুধ খাওয়ানো হচ্ছিল শিশু পরিবারে।
সম্প্রীতিকে উদ্ধারের পর থেকেই অসংখ্য মানুষ তাকে দত্তক নেয়র জন্য বলেন। কিন্তু শিশু পরিবারসহ সদর মডেল থানা পুলিশ চাইছিল সম্প্রীতিকে তার প্রকৃত বাবা-মা অথবা উপযুক্ত কারো হাতে তুলে দেয়ার জন্য। অবশেষে প্রকৃত বাবা-মায়ের খোঁজ না পেয়ে উপযুক্ত এক দম্পতির হাতে তুলে দেয়া হয়েছে সম্প্রীতিকে।
এদিকে, সম্প্রীতিকে সরকারি চাকরিজীবী ওই দম্পতির হাতে তুলে দেয়ার সময় আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন শিশু পরিবার সংশ্লিষ্টরা। বিশেষ করে শিশু পরিবারের উপ-তত্ত্বাবধায় রওশন আরা খাতুন ও কারিগরি প্রশিক্ষক সুলতানা লাইজু বেশি ভেঙে পড়েন। ফুটফুটে সম্প্রীতিকে ঘিরে এই কয়দিন শিশু পরিবারের সবাই আনন্দে মেতে ছিল।
শিশু পরিবারের উপ-তত্ত্বাবধায়ক রওশন আরা খাতুন বলেন, আমি যখন সন্তান সম্ভাব্য ছিলাম তখন মনে মনে ভেবেছিলাম যদি মেয়ে সন্তান হয় তাহলে তার নাম রাখবো সম্প্রীতি। পুলিশ যখন শিশুটিকে আমার কাছে রেখে যায় তখন আমি শিশুটির নাম রেখেছি সম্প্রীতি। এই কদিনে সম্প্রীতির প্রতি আমাদের সবার মায়া পড়ে গেছে। ও চলে যাচ্ছে বলে অনেক খারাপ লাগছে।
জেলা সমাজসেবা অধিদফতরের উপ-পরিচালক মোস্তফা মাহমুদ সারোয়ার বলেন, প্রবেশন ও শিশু আইন অনুযায়ী কোনো শিশুর প্রকৃত বাবা-মাকে না খুঁজে না পাওয়া গেলে উপযুক্ত কারো হাতে সেই শিশুকে তুলে দেয়ার বিধান রয়েছে। আমরা সেই বিধান অনুযায়ী একটি স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর রেখে এবং প্রকৃত বাবা-মায়ের সন্ধান পেলে শিশুটিকে ফিরিয়ে দেয়ার শর্তে ওই দম্পতির হাতে শিশুটিকে তুলে দিয়েছি।