ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালে চোখের অস্ত্রোপচার বন্ধ, নষ্ট হচ্ছে যন্ত্রপাতি, দূর্ভোগে রোগীরা
মনিরুজ্জামান পলাশ: বন্ধ কক্ষে কাপড়ে ঢাকা পড়ে আছে কোটি টাকা দামের যন্ত্রপাতি। ব্যবহার না হওয়ায় বাক্সেই মেয়াদউত্তীর্ণ হয়েছে চোখের বিদেশী ল্যন্সসহ পোস্ট অপারেশনাল বিভিন্ন দামী ঔষধ। এ চিত্র ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালের চক্ষু বিভাগের। ইতিমধ্যে দৃষ্টি পরীক্ষার জন্য চক্ষু ওয়ার্ডে থাকা দুটি স্লিট ল্যাম্পের একটি অকেজো হয়ে গেছে। অপরটি দিয়ে কাজ চালানো হচ্ছে। এ ছাড়া দ্রুত সঠিক লেন্স বা চশমা নির্ধারণ করার যন্ত্রটিও নষ্ট হয়ে গেছে। ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি কক্ষের কোটি টাকা দামের দুটি লেজার মেশিন, কালার ফান্ডাস ফটোগ্রাফি ও ওসিটি মেশিনও দীর্ঘ তিন বছর ধরে ব্যবহার না করায় নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছে। এসব যন্ত্র দিয়ে ডায়াবেটিসের কারণে চোখের রেটিনায় সমস্যা হয়েছে কি না, তা নির্ণয় করা হয়। ২০০৮ সালে অস্ট্রেলিয়াভিত্তিক দ্য ফ্রেড হলোজ ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের দুস্থ মানুষের চোখের অস্ত্রোপচারের জন্য হাসপাতালটিতে কয়েককোটি টাকা দামের এসব সরঞ্জাম দেয়।
২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে পদোন্নতি পেয়ে বদলি হন চিকিৎসক ইয়ামলি খান। এর এক থেকে দেড় বছর পর আল আমিন নামের এক চক্ষু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক যোগ দেন। কিন্তু মাসখানেক পর তিনিও বদলি হয়ে যান। এরপর থেকেই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পদটি শূন্য। ফলে তিন বছর ধরে হাসপাতালে চোখের ছানিসহ অন্যান্য রোগের অস্ত্রোপচার বন্ধ রয়েছে। বর্তমানে দুজন চিকিৎসা কর্মকর্তা দিয়ে চোখের রোগীদের শুধুমাত্র দৃষ্টি ও চশমা পরীক্ষার সেবা দেওয়া হচ্ছে। অস্ত্রোপচার ও অপেক্ষাকৃত জটিল রোগীদের পাঠানো হচ্ছে রাজধানীসহ আশপাশের জেলার হাসপাতালগুলোতে। কিন্তু অনেক রোগীরই জেলার বাইরে বা রাজধানীতে গিয়ে সেবা নেয়ার মত আর্থিক সঙ্গতি নেয়। ফলে যথাযথ চিকিৎসা না পাওয়ায় চোখের রোগ আরো জটিল আকার ধারন করছে তাদের।
সেবা নিতে আসা মজলিশপুরে রহিমা বেগম বলেন, চোখের অবস্থা দেইক্কা আমারে ঢাহা (ঢাকা) যাইতাম কইসে। আমি অত টেহা কি্ পাইয়াম বাজান?
নবীনগর থেকে আসা বৃদ্ধা জৈবুন্নেসা জানান, তিনি অনেক কষ্ট করে লোকজনের সহায়তা নিয়ে সদর হাসপাতাল পর্যন্ত এসেছেন। তিনি জেলা শহরের নিজে চিনে পথ চলতে পারেন না। কুমিল্লা বা ঢাকায় তিনি কিভাবে যাবেন? কোন ঔষধ দেয়ার জন্য এই প্রতিবেদককেই তিনি অনুরোধ জানান।
হরিজন সম্প্রদায়ের শিউলী এসেছেন তার বৃদ্ধ বোন শেফালীকে নিয়ে। তাদেরকে চিকিৎসক কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করেছেন। শিউলী জানান, তাদের কুমিল্লা গিয়ে চিকিৎসা করানোর মত টাকা নেই।
শহরের ছয়বাড়িয়া থেকে এক শিশুকে নিয়ে এসেছেন তার মা। রিকশাচালক বাবার ছোট শিশুকে ঢাকায় পাঠানোর পর তার মায়ের কাছে প্রশ্ন ছিল ঢাকায় নিয়ে চিকিৎসা করাতে পারবেন? শিশুটির মায়ের উত্তর, টাকা থাকলে কি আর এখানে এসে এতো কষ্ট করতাম?
সিনিয়র স্টাফ নার্স ও ইনচার্জ চক্ষু ইউনিটের ইনচার্জ লুৎফুন্নেসা প্রতিবেদকে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে চক্ষু অপারেশন সেন্টারটি দেখান। এসময় দেখা যায় সেখানে অস্ট্রেলিয়াভিত্তিক দ্য ফ্রেড হলোজ ফাউন্ডেশনের দেয়া বিভিন্ন দামী ঔষধ ও যন্ত্রপাতি অব্যবহৃত অবস্থায় কাপড়ে মোড়া অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা যায়। তিনি জানান, অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে থেকে অনেক ঔষধ ইতিমধ্যে নষ্ট হয়ে গেছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ও বর্তমানে চক্ষু বিভাগের চিকিৎসকের দ্বায়িত্বে থাকা ডা. সফিকুল ইসলাম জানান, চক্ষু বিশেষজ্ঞ না হওয়ায় চোখের জটিল রোোগীদের চিকিৎসা দিতে তার বেগ পেতে হয় ।সার্জন পদায়নের প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করেন তিনি।
বিভিন্ন উপজেলার থেকে চিকিৎসক এনে সেবা কার্যক্রম চালু রাখা হয়েছে জানিয়ে হাসপাতালের তত্ববধায়ক মোহাম্মদ ওয়াহিদুজ্জামান জানান, চিকিৎসক পদায়নের জন্য চিঠিপত্র, মুঠোফোন এমনকি ব্যক্তিগতভাবেও যোগাযোগ করেছেন কিন্তু কোন প্রতিকার পাননি।
চিকিৎসক পদায়নের জন্য উর্ধত্বন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে বলে জানান সিভিল সার্জন ডাঃ মোহাম্মদ একরাম উল্লাহ
দ্রুত চিকিৎসক পদায়ন করে কোটি টাকার যন্ত্রপাতি রক্ষা ও রোগীদের দূর্ভোগ লাঘব করবে সরকার এমনটাই প্রত্যাশা স্থানীয়দের।