ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরে নেশাসক্ত স্বামীর মারে স্ত্রী হাসপাতালে
নেশাসক্ত স্বামী স্ত্রীকে বেদম মারধর করে অচেতন অবস্থায় রাস্তায় ফেলে দেয়। পথচারীদের সহযোগিতায় আহতকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদর হাসপাতালে কাতরালেও তাঁকে দেখতে যায়নি স্বামীর পরিবারের কেউ।
আহত গৃহবধূ কাজল (২৫) পৌরসভার ভাদুঘর গ্রামের আরিফুল ইসলামের স্ত্রী। তিনি নবীনগর উপজেলার কোনাউরা গ্রামের নূর ইসলামের মেয়ে। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে জেলা সদর হাসপাতালের সার্জারি ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায়, মেঝেতে শুয়ে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন তিনি। মারধরের কারণে তাঁর মাথা ও চোখ ফুলে গেছে, ব্যথায় ছটফট করছেন।
হাসপাতালে আহত কাজল জানান, প্রায় ১০ বছর আগে তাঁদের বিয়ে হয়। বিয়ের পর তিনি জানতে পারেন আরিফ মাদকাসক্ত। নেশার টাকার জন্য প্রায়ই স্ত্রীর ওপর শারীরিক নির্যাতন করত। তার নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়ে বেশ কয়েকবার স্ত্রী বাবার বাড়ি থেকে টাকা এনে দেন। মাদকাসক্ত আরিফ কোনো কাজকর্ম না করায় সংসার নিয়ে বিপাকে পড়েন স্ত্রী। বাবার বাড়ি থেকে টাকা-পয়সা এনে সংসার চালাতেন। অন্যের বাড়িতে কাজ করতে চাইলেও আরিফ বাধা দিত। সম্প্রতি একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা কেনার টাকার জন্য চাপ দিতে থাকে। কাজলের পরিবার অটোরিকশা কেনার টাকা দিতে না পারায় তাঁর ওপর নির্যাতনের মাত্রা বেড়ে যায়। গত মঙ্গলবার নেশা করে সারা রাত বাড়ির বাইরে ছিল স্বামী। বুধবার সকালে বাড়ি আসার পর কোথায় ছিল জানতে চাইলে স্ত্রীকে ব্যাপক মারধর করে। একপর্যায়ে অচেতন হয়ে গেলে তাঁকে বাড়ির সামনে রাস্তায় ফেলে দেয়। পথচারীরা তাঁকে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় তুলে দেন হাসপাতালে নেওয়ার জন্য। তাঁর সঙ্গে কেউ না থাকায় জরুরি বিভাগে পড়ে ছিলেন কাজল।
জেলা পুলিশের বিশেষ শাখার (ডিএসবি) ওয়াচার মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, ‘আমি হাসপাতালে গিয়েছিলাম অন্য কাজে। গিয়ে দেখি জরুরি বিভাগে অক্সিজেন লাগানো অবস্থায় পড়ে আছেন এক নারী। পরে ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলে প্রাথমিক চিকিৎসা করানোর পর তাঁকে সার্জারি ওয়ার্ডে ভর্তির ব্যবস্থা করি। তাঁর পরিবারের লোকজনকে ফোন করে খবর দিই। বিষয়টি সদর মডেল থানার পরিদর্শককেও জানিয়েছি।’
হাসপাতালে কাজলের বড় ভাই মামুন বলেন, ‘পুলিশ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন আমাদের ফোন করে জানিয়েছেন কাজলকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তার শ্বশুরবাড়ির লোকজন হাসপাতালে আসেনি। বিষয়টি আমরা পুলিশ সুপারকে জানিয়েছি। এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই আমরা।’
সদর মডেল থানার পরিদর্শক মো. নবীর হোসেন বলেন, ‘আমরা এখন পর্যন্ত কোনো লিখিত অভিযোগ পাইনি। তবে মোয়াজ্জেমের কাছে ঘটনা জানতে পেরে তাৎক্ষণিক হাসপাতালে পুলিশ পাঠিয়েছি।’- কালের কন্ঠ