ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে মনোনয়ন প্রত্যাশীরা মাঠে



ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভার নির্বাচনের তফসিল ঘোষিত না হলেও পৌর এলাকায় বইছে নির্বাচনী হাওয়া। ইতিমধ্যেই আওয়ামী লীগ-বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মেয়র ও কাউন্সিল পদে মনোনয়ন প্রত্যাশীরা মাঠে নেমেছেন। তবে এখনো জাতীয় পার্টি এবং জামায়াতে ইসলামীর কোন মেয়র প্রার্থী প্রচার-প্রচারণা শুরু করেনি।
সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থীরা ইতিমধ্যেই দলীয় কর্মসূচীতে যোগদানসহ পাড়া-মহল্লায় বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে যোগদান বাড়িয়ে দিয়েছেন। নিজেদের কর্মী সমর্থকদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।
সম্ভাব্য মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের পক্ষে তাদের সমর্থকরা শহরে ব্যানার, বিলবোর্ড ও পোষ্টার সাটিয়েছেন। প্রার্থীদের পক্ষে ফেসবুকেও চলছে প্রচার- প্রচারণা।
বিভিন্ন রাজনৈতিক দলেন মেয়র পদে মনোনয়ন প্রত্যাশীরা ইতিমধ্যেই ওয়ার্ডভিত্তিক কর্মীসভা শুরু করেছেন। আওয়ামী লীগের মেয়র পদে মনোনয়ন প্রত্যাশীরা ওয়ার্ডভিত্তিক কর্মীসভা, গণসংযোগ শুরু করলেও বিএনপির মেয়র প্রার্থীরা সংযোগ করছেন নিরবে। তারা রয়েছেন কেন্দ্রীয় নির্দেশনার অপেক্ষায়।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভাটি ১৬০ বছরের পুরানো পৌরসভা। ১৮৬৮ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া মিউনিসিপ্যালটি প্রতিষ্ঠিত হয়। এর চার বছর পরেই এর নামকরণ হয় ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভা। পৌরসভার আয়তন প্রায় সাড়ে ১৮ বর্গকিলোমিটার। পৌরসভায় বর্তমানে প্রায় তিন লাখ মানুষের বসবাস। ভোটার সংখ্যা ১ লাখ ২৭ হাজার ৭৭৮জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৬৩ হাজার ৯৬৯ জন এবং মহিলা ভোটার ৬৩ হাজার ৬৮৯জন। ১২টি সাধারণ ও ৪টি সংরক্ষিত মহিলা ওয়ার্ড নিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভা গঠিত।
মেয়র পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী ৮ জনের মধ্যে ইতিমধ্যেই ৫জন প্রার্থী ওয়ার্ডভিত্তিক কর্মীসভা ও গনসংযোগ শুরু করেছেন। অপর ৩জন প্রার্থী নির্বাচনী মাঠে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। নিজেদের অনুসারীদের সাথে নির্বাচনী শলাপরামর্শ করছেন।
মেয়র পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে বর্তমান মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মিসেস নায়ার কবির, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও জেলা নাগরিক সমাজের সভাপতি তাজ মোহাম্মদ ইয়াছিন, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও জেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট মাহবুবুল আলম চৌধুরী খোকন, জেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ও জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মাহমুদুল হক ভূইয়া ও পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোঃ রফিকুল ইসলাম ওয়ার্ডভিত্তিক কর্মীসভা ও গনসংযোগ শুরু করেছেন।
এই ৫জন প্রার্থী গত ১৬ অক্টোবর অনুষ্ঠিত ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর আওয়ামী লীগের সর্বশেষ বিশেষ বর্ধিত সভায় মেয়র পদে নিজেদের প্রার্থীতার কথা ঘোষণা করেন।
আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা-কর্মীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও পৌরসভার সাবেক মেয়র মোঃ হেলাল উদ্দিন, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল বারী চৌধুরী মন্টু এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর সভার সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক প্রয়াত মাহবুবুল হুদা ভূইয়ার ছেলে মেজর (অবঃ) মোবাশ্বের আলম মিশু মেয়র পদে দলের কাছে মনোনয়ন চাইবেন। তারা নির্বাচনী মাঠে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
বিএনপির পক্ষ থেকে জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সাবেক পৌর মেয়র হাফিজুর রহমান মোল্লা কচি, জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক ভিপি জহিরুল হক খোকন ও জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম সিরাজ দলের কাছে মেয়র পদে মনোনয়ন চাইবেন বলে শোনা যাচ্ছে। এছাড়াও জেলা ওয়ার্কার্স পার্টির পক্ষ থেকে জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক কমরেড নজরুল ইসলাম, ইসলামী ঐক্যজোটের মাওলানা ইউসুফ ভূইয়া মেয়র পদে নির্বাচন করবেন বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।
এ ব্যাপারে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা ও পৌরসভার সাবেক চেয়ারম্যান আল-মামুন সরকার বলেন, পৌর নির্বাচনকে সামনে রেখে আমরা প্রস্তুতি গ্রহন করছি। তিনি বলেন, নির্বাচনে দলের কাছে একাধিক প্রার্থী মনোনয়ন চাইবেন, এটাই স্বাভাবিক। আমরা তৃনমূলের মতামতের ভিত্তিতে তিনজনের নাম বাছাই করে কেন্দ্রে পাঠাবো। কেন্দ্র থেকে যাকে মনোনয়ন দিবে তার পক্ষেই দলীয় নেতা-কর্মীরা ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবে।
এ ব্যাপারে জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সাবেক পৌর মেয়র হাফিজুর রহমান মোল্লা কচি বলেন, দল যদি নির্বাচনে যায়, তাহলে আমি দলের কাছে মনোনয়ন চাইবো, সেজন্য প্রস্তুতিও নিচ্ছি।
তিনি বলেন, আমরা প্রত্যাশা করি জণগণের অংশগ্রহণে সুষ্ঠ, নিরপেক্ষ ও উৎসবমুখর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।