Main Menu

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ভালোবাসা দিবস :: অন্যরকম দিন কাটল এপার-ওপার বাংলার প্রতিবন্ধীদের

+100%-

শিউলী দেবনাথ ও গীতা পাল। দুইজনই বাকপ্রতিবন্ধী। এসেছেন ভারত থেকে। হাতের ইশারায় ভাব বিনিময় করছিলেন বাংলাদেশের কয়েকজন বাকপ্রতিবন্ধীর সঙ্গে। প্রসঙ্গ:- কে কেমন আছে, দেশের অবস্থা কি, পরিবারের অবস্থা কি ইত্যাদি ইত্যাদি। গীতা পালের শারিরিক প্রতিবন্ধী স্বামী স্বপন সরকার এ প্রতিবেদককে বুঝিয়ে দেন তাঁদের ভাবাবেগের কথা। এগিয়ে এসে বাংলাদেশের বাকপ্রতিবন্ধী মশিউর হাসান খান এ প্রতিবেদকের প্যাডে তাঁর নাম ও পরিচয় লিখে দেন।
দর্শক সারির মাঝখানের দৃশ্য এটি। ভারত থেকে আসা দুই বাকপ্রতিবন্ধীসহ বাংলাদেশের জনাবিশেক বাকপ্রতিবন্ধী নিজেদের মধ্যে ভাববিনিময় করেন বেশ সময় ধরে। ভারত থেকে আসা শারিরিক প্রতিবন্ধীরাও এখানে ওখানে ছুটে গিয়ে ‘সহযোদ্ধাদের’ খোঁজ খবর নেন। অনেকেই তখন নিজেদের আবেগ ধরে রাখতে পারছিলেন না। কারো কারো চোখের কোনে জল।
বিশ্ব ভালোবাসা দিবসকে কেন্দ্র করে গতকাল বুধবার অন্যরকম একটা দিন কেটেছে বাংলাদেশ ও ভারতের প্রতিবন্ধীদের। কখনো তাঁরা গান গেয়েছেন কখনো খেলায় অংশ নিয়েছেন। অংশ নিয়েছেন চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায়। নিজেদের মধ্যে ভাব বিনিময় তো হয়েছে-ই।
শারিরিক প্রতিবন্ধীরা ভালোবাসায় সিক্ত হয়েছেন বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের। কে ছিলেন না ব্রাহ্মণবাড়িয়া পুলিশ লাইনের গতকালের এ আয়োজনে- সেলিব্রেটি, সরকারি কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি। আয়োজনে ছিলো তৃতীয় লিঙ্গের (হিজড়া) পরিবেশনাও।
ড্রীম ফর ডিসএ্যাবিলিটি ফাউন্ডেশন ও বন্ধু তোমাকে চাই অসহায় মানুষের পাশে ফাউন্ডেশন বিশ্ব ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে ‘বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া ফ্রেন্ডশিপ ফেস্টিবল অফ ফিজিক্যাল চ্যালেঞ্জড পিপলস’ নামে একটি অনুষ্ঠানে আয়োজন করে। ওই অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলা থেকে শতাধিক প্রতিবন্ধী ও ভারতের ত্রিপুরার রাজ্যের আগরতলা থেকে সাতজন প্রতিবন্ধী অংশ নেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা পুলিশ এ আয়োজনে সহযোগিতা করেন।


ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসনের সংসদ সদস্য র. আ. ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরীর সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বী মিয়া এম.পি। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য ফজিলাতুন নেছা বাপ্পি, পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি হাবিবুর রহমান, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা প্রশাসক রেজওয়ানুর রহমান, পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান, পৌর মেয়র নায়ার কবির, এটিএন বাংলার নির্বাহী সম্পাদক জ. ই মামুন, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক আল-মামুন সরকার, ত্রিপুরার ঈশ্বর পাঠশালার সাধারন সম্পাদক সুমন নাথ, ড্রিম ফর ডিসএ্যাবিলিটি ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা হেদায়েতুল আজিজ মুন্না।
অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে প্রতিবন্ধীদের নিয়ে বিভিন্ন রকমের খেলাধুলার আয়োজন করা হয়। এ পর্বের অনুষ্ঠানে পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমানের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের অবসরপ্রাপ্ত মহাপরিচালক প্রফেসর ফাহিমা খাতুন। দুই পর্বের অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন সাংবাদিক আল-আমীন শাহীন। পুলিশ লাইনের মাঠের এক প্রান্তে বসে পিঠা মেলা।

অনুষ্ঠানে দেশের বিভিন্ন পর্যায়ের তারকারা দিনভর অনুষ্ঠান উপভোগ করেন। তাঁরা হলেন, জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত চলচিত্র নায়ক ফারুক, চলচিত্র পরিচালক অমিতাভ রেজা, বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলে সাবেক অধিনায়ক কায়সার হামিদ, বিশিষ্ট সাংবাদিক জ. ই মামুন, অভিনেত্রী মেহের আফরোজ শাওন, জাহাঙ্গীর বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারি অধ্যাপক সালমা আহমেদ।


দুপুরের দিকে অনুষ্ঠানের ফাঁকে মঞ্চের ডানপাশে আড্ডারত অবস্থায় দেখা যায়, শারিরিক প্রতিবন্ধী খাদ্য বিভাগের পরিদর্শক মো. নজরুল ইসলাম, ঢাকা থেকে আসা মো. জাহিদুল ইসলাম. নরসিংদীর ব্রাহ্মণদি কে কে এম সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক আল-আমিনসহ আরো অনেককে। এ সময় কথা হলে বরগুনা থেকে আসা মো. হাবিবুর রহমান বলেন, ‘এ অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে নতুনত্ব তৈরি হয়েছে। আমাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা শুরু হয়েছে। আমরা সুযোগ পেয়ে দক্ষতা দেখাতে পারবো সেটা আমরা প্রমাণ করতে চাই।’
ড্রিম ফর ডিসএ্যাবিলিটি ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা হেদায়েতুল আজিজ মুন্না বলেন, ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়া শারিরিক প্রতিবন্ধীদের শহর। জেলা পুলিশসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ প্রতিবন্ধীদের সাহায্যার্থে এগিয়ে এসেছে। আমরা প্রমাণ করেছি সুযোগ পেলে আমরাও অনেক কিছু করে দেখাতে পারি। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ক্রিকেট দল ভারতে গিয়ে সেখানকার দলকে পরাজিত করেছে সিরিজ জয় করেছে।’
ভারত থেকে আসা শারিরিক প্রতিবন্ধী সঞ্জীব সাহা বলেন, ‘বাংলাদেশে এটাই আমার প্রথম আসা। কখনোই ভাবিনি আমাদের জন্য এ ধরণের একটি আয়োজন হবে। আমরা খুব খুশি। এ আয়োজন আমাদেরকে আরো এগিয়ে নেবে। ত্রিপুরা প্রতিবন্ধী অধিকার মঞ্চ থেকে এ ধরণের একটি অনুষ্ঠান করা যায় কিনা সে বিষয়ে দেশে গিয়ে কথা বলবো।’
প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে অভিনেত্রী মেহের আফরোজ শাওন বলেন, ‘আমরা দেখি যে সুস্থ মানুষ আত্মহত্যা করে। আর প্রকৃতি যাদেরকে অনেক কিছু থেকে বঞ্চিত করেছে তারা বিভিন্নভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। তাদের কাছ থেকে আমাদের শেখার আছে। আয়োজনটি খুবই ব্যতিক্রম।’
ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর এলাকার পাইকপাড়ার বাকপ্রতিবন্ধী প্রান্ত দাসের মা শিপ্রা দাস বলেন, ‘আজকের অনুষ্ঠানটি খুব ভালো লাগছে। এ ধরণের শিশুদের নিয়ে নিয়মিত এমন অনুষ্ঠান আয়োজন করলে তাদের জন্য খুব ভালো হবে।’
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে ফজিলাতুন নেছা বাপ্পি এম.পি বলেন, ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিবন্ধীদের জন্য একটি রুল মডেল।’ র. আ. ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এম. পি বলেন, ‘সরকার তথা আওয়ামী লীগের যে আদর্শ এর প্রতিফলন ঘটেছে এ অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে।’ ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়া এম.পি বলেন, ‘প্রতিবন্ধীরা উদ্যোগী হয়ে কাজ করছে, বিভিন্ন ক্ষেত্রে সুনাম অর্জন করছে।’






Shares