ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পিবিআইএর ঘুষ বাণিজ্য: ২০ লাখ টাকা না দেয়ায় মৃত ব্যাক্তিও স্বাক্ষী
২০ লাখ টাকা ঘুষ না দেয়ায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) পরির্দশক হারুণ অর রশিদের বিরুদ্ধে অদ্ভুত অভিযোগপত্র (চার্জশীট) দেয়ার অভিযোগ ওঠেছে।
তিনি মৃত ও প্রবাসে থাকা ব্যক্তিদের স্বাক্ষী বানিয়ে এক হত্যা মামলার সম্পূরক অভিযোগপত্র দিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন জেলার নবীনগর উপজেলার বিদ্যাকুট ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আনু মিয়া।
রোববার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাব মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করে তিনি এসব অভিযোগ করেন।
২০১৫ সালে ১৩ ফেব্রুয়ারি আল আমিন (২২) নামে এক যুবক তার নানি শশুরবাড়ি নবীনগর উপজেলার শিবপুরের বাঘাউড়া গ্রামে খুন হন। আল আমিন কসবা উপজেলার খাড়ের ইউনিয়নের সোনারগাঁও গ্রামের জাঙ্গাঙ্গীর আলম চৌধুরীর ছেলে। এ ঘটনায় নিহতের বাবা জাহাঙ্গীর ১০জনকে আসামী করে নবীনগর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
মামলায় নিহতের স্ত্রী ইতি বেগমকে প্রধান, বিদ্যাকুট ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আনু মিয়া ওরফে আব্দুল হান্নান ভূঁইয়াকে ৬নম্বর ও তাঁর ছেলে ইফতেখার মাহমুদকে সাত নম্বর আসামী করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনের লিখিত বক্তব্যে আনু মিয়া বলেন, সম্পূরক অভিযোগপত্র দেওয়ার আগে চলতি বছরের ২১ মার্চ পিবিআই কর্মকর্তা হারুণ অর রশিদ তাঁর কাছে ২০ লাখ টাকা ঘুষ চেয়েছিল। ডিআইজিসহ সকল উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের টাকা দিতে বলে বলে জানান পিবিআই কর্মকর্তা হারুণ।
টাকা না দিলে পূর্বের মতো অভিযোগপত্র দিতে পারবেন না বলে আনু মিয়াকে জানানো হয়। তিনি বলেন, এর আগেও পিবিআই কর্মকর্তা তার পরিবারের কাছ থেকে ৬০ হাজার টাকা ঘুষ নিয়েছিল। ২০ লাখ টাকা ঘুষ না দেওয়ায় পিবিআই কর্মকর্তা হারুণ মনগড়া মতো আমার বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দিয়েছেন।
অথচ এই হত্যা মামলায় পিবিআইয়ের তদন্তের আগে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) ও গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি) অভিযোগপত্র দেন। সিআইডি ও ডিবি পুলিশের অভিযোগপত্রে হত্যায় জড়িত যে ৪জনের নাম উল্লেখ করেন, পিবিআই কর্মকর্তা হারুণ সেই চারজনকে নির্দোষ উল্লেখ করে অভিযোগপত্র দেন।
সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করে তিনি বলেন, পিবিআই কর্মকর্তা হারুণ অর রশিদ ৩৯ জনের জবানবন্দি নিয়েছেন। তারমধ্যে ২০১৯ সালের ৩১ জানুয়ারি বিদ্যাকুট ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুর রউফের (৭৩) জবানবন্দী নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগপত্রে দেখানো হয়।
অথচ তিনি ২০১৮ সালের ২ নভেম্বর মারা গেছেন। একই তারিখে উপজেলার মেরাকুটা গ্রামের অজন্ত কুমার ভদ্র (৬৬) নামে এক ব্যক্তির সাক্ষ্য গ্রহনের তারিখ দেখানো হয়। কিন্তু অজন্ত কুমার ২০১৯ সালের ৯ জানুয়ারি ভারত যান এবং চলতি বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি ভারত থেকে দেশে আসেন। অজন্তের পাসপোর্টে এই যাত্রার তারিখ উল্লেখ রয়েছে। তাছাড়া পিবিআই যাদের সাক্ষ্য নিয়েছে তাদের মধ্যে ২৪ জন স্বাক্ষী আদালতে হলফনামা করে বলেছেন যে পিবিআই কর্মকর্তা হারুণ রশিদ তাদের কোনো সাক্ষ্য নেয়নি। পিবিআই চলতি বছরের ৯ এপ্রিল অভিযোগপত্র জমা দেন।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরও বলেন, ২০১৫ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি ইতির নানী বাড়িতে দাওয়াত খেতে যায় আল আমিনের ভগ্নিপতি জাকির ও তার সহযোগী শাওন, বিল্লাল ও মোবারক। খাওয়ার পর জাকির ইতিকে ঘুমের ওষুধ মিশ্রিত দুটি সিঙ্গারা খাওয়ান। পরে তারা আল আমিনকে নিয়ে পাশের বাড়িতে নাছির ফকিরের মাহফিলে চলে যায়। সেখান থেকে ফেরার পথে কোথাও শাসরোধ করে হত্যা করে গ্রামের হেলেন মিয়ার পরিত্যক্ত ঘরে বাঁশের তীরের আল আমিনের লাশ ঝুলিয়ে রাখে।
তিনি বলেন, নিহতের ভগ্নিপতি জাকির একই উপজেলার বিদ্যাকুট ইউনিয়নের সেমন্তঘর গ্রামের ৬-১০ নম্বর আসামীর প্রতিবেশী। জাকিরের সঙ্গে আমাদের জমি সংক্রান্ত ঘটনায় দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ এবং আদালতে একাধিক দেওয়ানী ও ফৌজদারী মামলা চলমান রয়েছে।
অভিযোপত্র সূত্রে জানা গেছে, পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) ২০১৭ সালের ৮ জানুয়ারি অভিযোগপত্র দেন। অভিযোগপত্রে হত্যার সঙ্গে নিহত আল আমিনের আপন ভগ্নিপতি জাকির হোসেন (৩৮), তার সহযোগী বিল্লাল (৩৭), শাওন মিয়া ওরফে রানা (৪২), মোবারক মিয়া (৩৬) জড়িত বলে উল্লেখ করা হয়। পরে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ ২০১৮ সালের ৩১ জানুয়ারি মামলাটি তদন্ত করে অভিযোগপত্র দেন। ওই অভিযোগপত্রেও হত্যার সঙ্গে নিহত আল আমিনের আপন ভগ্নিপতি জাকির, সহযোগী বিল্লাল, শাওন ও মোবারক মিয়া (৩৬) জড়িত বলে উল্লেখ করা হয়। পরে বাদীর আপত্তিতে মামলাটি তদন্ত করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) পরিদর্শক হারুন অর রশিদ।
অভিযুক্ত পিবিআইয়ের পরিদর্শক (বর্তমানে জামালপুরে কর্মরত) হারুণ অর রশিদ বলেন, অভিযোগপত্র দিলে অনেকেই অনেক কথা বলেন। মৃত ও দেশের বাইরে থাকা ব্যক্তিদের সাক্ষ্য গ্রহন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিষয়টি আদালত দেখবে।